প্রতিবছর রমজান মাস এলেই দ্রব্যমূলের পাগলা ঘোড়ার পিঠে সোয়ার হয়ে বসে বাংলাদেশ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়তে বাড়তে হয় আকাশ ছোঁয়া। বাজারের অবস্থা দেখেশোনে মনে হয়, আমাদের দেশে এটাই স্বাভাবিক। জানা কথা, রমজান সহিষ্ণুতা ও সংযমের মাস। কিন্তু এ মাসেই বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে সহিষ্ণুতা ও সংযমের বারোটা বাজায়। এ মাসে বিশেষ বিশেষ ব্যবসায়ীরা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের অভিপ্রায়ে। বলাবাহুল্য যে কোনও যুক্তিতে এই অভিপ্রায় অনৈতিক ও ধর্মনৈতিকতা বিরোধী। প্রতি বছরই এইরূপ বাজার অস্থিরতার বিষয়টি অনিবার্য ও সম্ভাব্য প্রপঞ্চ হয়ে হাজির হয় বাংলাদেশের সর্বত্র, রূপকথার সেই সিন্দাবাদের ভূতের মতো চেপে বসে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে। সংশ্লিষ্ট মহলের পক্ষ থেকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে ঠেকিয়ে রাখার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ী চক্রকে নিরস্ত করা যায় না, তারা ব্যবসা ঠিকই করে।
এবার সরকার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সারাদেশে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারগণ রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের বিশেষ নির্দেশনা লাভ করেছেন। এ জন্য জেলা প্রশাসক রমজান মাসে বাজার স্বাভাবিক রাখতে মনিটরিং টিম গঠন করেছেন। একটি প্রধান টিম ছাড়া অন্য আরও একাধিক টিম বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখবে। গতকালের সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিলÑ “কঠোর নজরদারিতে রমজানের বাজার”। অর্থাৎ আমাদের সুনামগঞ্জেও এই বিশেষ ব্যবস্থার অধীনে সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ। আশা করি রমজান মাসে বাজার পরিস্থিতিতে কোনও অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হবে না। তবে কথা হলো, বর্তমান আর্থসামাজিক বিন্যাসকে অর্থাৎ সোজা কথা বিদ্যমান সামগ্রিক সমাজব্যবস্থাকে পাল্টে না দিতে পারলে প্রতিবছরই রমজান মাসে কেবল নয়, প্রতিদিন প্রতিনিয়ত এই রকম ঝকমারি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে অথবা সাক্ষী গোপাল হয়ে হাতপা গুটিয়ে কেবল দেখে যেতে হবে মুক্তবাজার অর্থনীতি চমৎকার সব ক্যারিশমা। মনে রাখতে হবে মুনাফালোভী পুঁজিবাদী মুক্ত বাজার ব্যবস্থা রমজানের পবিত্রতা ও সংযম সংক্রান্ত অনুশাসনের ধার ধারে না।