সরকার শিক্ষার উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে অনেক ক্ষেত্রে নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী ও নির্মাণ কাজ শেষ না করেই অর্থলোপাটের মহোৎসব শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নে প্রতিবন্ধক হচ্ছে। এসকল অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশানুরূপ তৎপর হতে দেখা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে নির্মাণকাজ শেষ না করেই বা নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে প্রাপ্য অর্থ উত্তোলন করা হয়ে থাকে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ভবনগুলি নির্মাণের প্রকল্পটিও ঠিকাদার, প্রকৌশলী ও ঊর্ধ্বতন কর্তাদের দুর্নীতি থেকে স্বাভাবিকভাবেই মুক্ত থাকতে পারেনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার “অর্ধশতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেহাল অবস্থা” শিরোনামে একটি সংবাদ দৈনিক সুনামকণ্ঠে ছাপা হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়- “ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের সংখ্যা অন্তত ৫ শতাধিক হবে।”
উদ্ধৃতি চিহ্নিত বাক্যটি সুনামগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজে ব্যাপক দুর্নীতির অনিবার্য ফল অর্থাৎ বিদ্যালয়ভবনগুলো অচিরেই ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠার বিভীষিকাকে প্রকাশ করছে। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে, ও দেশের অর্থনীতি-রাজনীতি-সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্বৃত্তায়ন প্রতিরোধে নীতিনির্ধারকদের ততোটা তৎপর হতে দেখা যায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত, ঝুঁকিপূর্ণ কিংবা ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিটি নির্মাণকাজ দুর্নীতির জ্বাজল্যমান প্রমাণ হিসেবে বিদ্যমান আছে। নীতিনির্ধারকদের সদিচ্ছা হলে যে কোনও মুহূর্তে তদন্ত করে দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করা কোনও অসম্ভব কাজ নয়। অভিজ্ঞমহলের ধারণা প্রচলিত এইরূপ দুর্নীতি প্রতিরোধকল্পে এসব ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণকাজের দুর্নীতি তদন্তপূর্বক বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ উচিত। অর্থাৎ তদন্তে দোষী সাব্যস্ত প্রতিষ্ঠান, ঠিকাদার, প্রকৌশলী বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মোকাবেলা করা সময়ের দাবি। অন্যথায় অনাগতকালে চলমান এইরূপ দুর্নীতিচর্চা জাতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েই থাকবে, নির্বিঘেœ ও অপ্রতিহতভাবে, যা দেশের জন্য কোনওভাবেই মঙ্গলজনক নয়।
আমরা আশা করবো, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ওইসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো সংস্কার ও নতুন করে নির্মাণ করে হাওরাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।