মো. আমিনুল ইসলাম ::
ঋণ নিয়ে জমিতে চাষ দিয়ে আশায় বুক বেধেছিলেন কৃষক। অন্য ফসলের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় বাদামের প্রতিই তাদের আগ্রহ ছিল বেশি। কিন্তু অতিবৃষ্টি তাদের জমিতে ফসলের বদলে ‘হতাশা’ ফলিয়েছে। যেমনটি আশা ছিলো তার সামান্যতম ফসলও যেনো এবার ঘরে তুলতে পারেননি কৃষক। উল্টো পুঁজি হারানোর পথে তাঁরা। জেলার বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার প্রায় ৫০ গ্রামের কৃষক এবছর বাদাম চাষ করেছিলেন। ১৩৫০ হেক্টর জমিতে এবছর বাদাম চাষ হলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেকটাই খারাপ হয়েছে ফলন।
চাষীরা জানান, গত বছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামেই তারা এখন বাদাম বিক্রি করছেন। যেখানে বিক্রির কথা ছিলো প্রতি মণ ৩হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় সেখানে বাদামের গুণগত মান খারাপ হওয়ার কারণে প্রতি মণ বাদাম বিক্রি করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৫শ টাকা থেকে ২হাজার টাকা করে। এবছর কৃষি বিভাগ বাদামের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ২ হাজার ৭ মেট্রিক টন। কৃষকের মতে, অতিবৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে যাওয়ার কারণে অর্ধেকও ফলন হয়নি।
জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ভাদেরটেক গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘টেকা ঋণ কইরা জমিনে বাদাম চাষ করছিলাম। অখন ফসল খারাপ হওয়ায় লাভ তো দূরের কথা পুঞ্জি (পুঁজি) লইয়াই টানাটানি পড়ছে। নিজেই কিতা করমু আর ঋণই বা কেমনে ফিরত দিমু চিন্তায় আছি’।
সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের কৃষক শাহ আলমগীর বলেন, ‘গত বছরেও বাদাম মোটামুটি ভালা হইছিলো। এইবার আমরার অবস্থা খুব খারাপ। ক্ষেতে পানি জইমা বাদামের ফলন ভালা হয় নাই। আমরা একলা না, এলাকার বেশীরভাগ কৃষকেরই এই অবস্থা। লাভের চিন্তা আমরা করিনা। আমরা আছি পুঞ্জি (পুঁজি) লইয়া চিন্তায়। এইবার বাদাম চাষ কইরা আমরা লস খাইছি’।
সাখতারপার এলাকার কৃষক হালিমা বেগম বলেন, ‘আমরা জমিনে চাষ দিয়া কামলার (শ্রমিকের) মজুরি দিয়া যে আশা করছিলাম, সেইটা এইবার হয়নাই। আমরা কৃষকরা বাদাম চাষ শুরু করছিলাম অন্য ফসলের চাইতে লাভজনক হওয়ার লাগি। কিন্তু পরিশ্রম কইরা যে ফসল আশা করছিলাম সেইটা পূরণ না হইয়া পানির লাগি ফলন খারাপ হইসে’।
এদিকে, কৃষক পর্যায় থেকে ফলন খারাপ হওয়ার বিষয়টি একাধিকবার উল্লেখ করা হলেও কৃষি বিভাগ বলছে ভিন্নকথা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এবছর বৃষ্টিপাত বেশি হলেও বাদামের ফলন তেমন একটা খারাপ হয়নি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জাহেদুল হক বলেন, ‘এ বছর জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ১৩শ৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে বাদামের। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২হাজার ৭ মেট্রিক টন বাদাম। অতিবৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে গেলেও বাদামের ফলন তেমন খারাপ হয়নি। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদেরকে বাদাম চাষে আরো উৎসাহী করে তুলতে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে থাকি’।