সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে যাঁরা ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ‘কার্যকর ব্যবস্থা’ নেবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে স্থানীয়ভাবে যেসব বিদ্রোহী প্রার্থী বা তাঁদের সমর্থকদের অব্যাহতি দেওয়া কিংবা বহিষ্কার করা হয়েছে, তার সঙ্গে একমত থাকবে দলের কেন্দ্র।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো ইউপি নির্বাচন হওয়ায় প্রার্থী বাছাইয়ে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থী এবং তাঁদের সমর্থনকারীর সংখ্যা কয়েক হাজার। এসব কিছু তদন্ত করা সময়সাপেক্ষ।
এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পাঁচ ধাপের ভোটে সহিংসতায় ১০০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এ সংঘাতের বেশির ভাগই হয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। এ পরিস্থিতিকে কেন্দ্র থেকে কঠোর ব্যবস্থা নিলে সংঘাত-সহিংসতা আরও বাড়বে বলে মনে করে দলটি। ফলে দলীয় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘কার্যকর ব্যবস্থা’ না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এমনকি পৌর নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থীদের যেভাবে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানো হয়েছিল, ইউপি নির্বাচনের বিদ্রোহীদের তা-ও পাঠানো হবে না।
তবে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, যেসব জনপ্রতিনিধি, মন্ত্রী, সাংসদ, কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের রেহাই দেওয়া হবে না।
দলটির সভাপতিমন্ডলী ও স¤পাদকমন্ডলীর কয়েকজন সদস্য বলেন, বিদ্রোহী এবং তাঁদের মদদ দানকারীদের গণহারে বহিষ্কার করে ‘কার্যকর ব্যবস্থা’ নিলে নতুন করে আবারও সহিংসতা হতে পারে। তা ছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে যাঁরা নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘নিজস্ব লোক’। ফলে তাঁদের বহিষ্কারের মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাবে না আওয়ামী লীগ। এমনকি বিষয়টি কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকেও তোলা হবে না।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, ‘হুট করেই দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। কে বা কারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন, সাংগঠনিক স¤পাদকদের মাধ্যমে জেলা কমিটির কাছে তার প্রতিবেদন চাওয়া হবে। এরপর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্ন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের সভাপতিমন্ডলীর একজন সদস্য বলেন, বিদ্রোহীরা জয়লাভ করে প্রমাণ করেছেন, সেখানে প্রার্থী মনোনয়ন ঠিক হয়নি, ভুল হয়েছে। সেই ভুলটা দলের নেতাদের স্বীকার করতে হবে। হাজার হাজার বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কর্মযজ্ঞটি করবে কে?
দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন হলেও তৃণমূলের প্রার্থী মনোনয়ন-প্রক্রিয়ায় দলীয় সাংসদেরা ছিলেন না। তবে মনোনয়ন-প্রক্রিয়ায় নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। বলা হচ্ছে, তাঁরা নিজেদের পছন্দের লোকদের নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। এতে কোথাও কোথাও যোগ্য প্রার্থী মনোনীত হতে পারেননি। তা ছাড়া জেলা কমিটির অনেক সুপারিশ কেন্দ্রে পাল্টে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত কিংবা দলের বিদ্রোহীদের আলাদা করে দেখছেন না দলের নেতারা।
নির্বাচন কমিশনের হিসাবে, পাঁচ ধাপে ৩ হাজার ২৯০টি ইউনিয়নে ভোট স¤পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন ৬৯৭টি ইউনিয়নে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরিবেশিত খবর অনুযায়ী, এই ৬৯৭ জনের মধ্যে প্রায় ৫০০ জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ২ হাজার ১৯৫ ইউপিতে (৬৭ শতাংশ)।
পাঁচ ধাপে ভোটের আগে, ভোটের দিন এবং ভোট স¤পন্ন হওয়ার পরও সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক বেশির ভাগ সহিংস ঘটনা ঘটেছে সরকারদলীয় প্রার্থী এবং একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে। দলের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হলেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের কেউই বিষয়টি তেমন আমলে নেননি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘যাঁরা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন এবং যাঁরা সমর্থন করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সেটা কোন মাত্রার, সেটাই হলো প্রশ্ন।’