বিশেষ প্রতিনিধি ::
উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হচ্ছে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোট উৎসব। আগামী কাল শনিবার সুনামগঞ্জের ৫টি উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই শেষ হবে সারা দেশের ভোট উৎসব। দাঙ্গা-হাঙ্গামা-উত্তেজনার আবহ থাকলেও স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন গ্রামে-গঞ্জে উৎসব ডেকে আনে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা-খুনোখুনি হলেও সুনামগঞ্জের আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষ ও সাহসী ভূমিকা রাখায় জনসাধারণ সন্তোষ জানিয়েছেন। নির্বাচনের শেষ পর্ব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে এই প্রত্যাশা করছেন জেলাবাসী। রাজনৈতিকভাবেও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ভোটে প্রভাব বিস্তারের কোন চেষ্টা করা যায়নি। ফলে সুধীজন ক্ষমতাসীন দলের সহনশীলতা ও মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধা না দেওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত জেলার ৫৮টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ৪ জুন তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর এবং জগন্নাথপুরের একটি ইউনিয়নসহ ২৯টি ইউনিয়নে শেষ দফা নির্বাচনের মাধ্যমে শেষ হবে উৎসব মুখর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। প্রথম বারের মতো দলীয়ভাবে নির্বাচন হওয়ায় অন্য বারের তুলনায় এবার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে মনোনয়নের জন্য নির্ঘুম সময় পার করেছেন হাজার হাজার প্রার্থী। শেষ পর্যন্ত যিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন নির্বাচন মাঠে তিনিই একা দলীয় প্রতীকে এবং অন্যরা বিদ্রোহী হিসেবে স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচন করেছেন।
গ্রামীণ অভিজ্ঞজনরা জানান, স্থানীয় সরকারের নির্বাচন গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগে আরো উৎসবমুখর ও উত্তেজনাকর ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন করে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও আচরণবিধি সংশোধন করায় প্রচারে অনেকটা কমে আসে। প্রার্থীরা জরিমানার ভয়ে প্রচার-প্রচারণায় সচেতন থাকলেও সমর্থকদের কারণে তাদের অনেক সময় জরিমানা গুনতে হয়েছে। মুরুব্বিরা আরো জানান, আবহমান কাল থেকে সুনামগঞ্জ শান্তি ও সম্প্রীতির জেলা। শান্তি-সম্প্রীতির ঐতিহ্য বজায় রেখেই প্রার্থী-সমর্থকরা নির্বাচন করায় বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটেনি। তারা অতীতের প্রোজ্জ্বল এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য নির্বাচিত ও পরাজিত প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ছাতক, দোয়ারাবাজার এবং জগন্নাথপুর উপজেলায় কয়েকজন চেয়ারম্যান-মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া-ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলেও বড় কোন সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। ওই সংঘর্ষগুলোও শক্তহাতে দমন করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, দলীয় প্রভাবমুক্ত এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শুরু থেকেই তৎপর ছিল। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পুলিশ বাহিনীকে সতর্ক থাকার বিশেষ নির্দেশনা দেন। এমনকি একটি জনসমাবেশে তিনি সাধারণ ভোটারের ভোটাধিকারে বাধা প্রদান এবং কেন্দ্র ও বেলট-বাক্স দখলের চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন আবুল হোসেন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সভায়। এতে সাধারণ ভোটার এবং জেলাবাসী আশ্বস্ত হয়েছিলেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, দিরাই উপজেলার নির্বাচনের আগের দিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ করেছিলেন। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সেল খোঁজ নিয়ে পুলিশ বাহিনীর কোন দোষ খুঁজে না পাওয়ায় মতিউর রহমানের কথায় কোন কর্ণপাত করেনি। দিরাইয়েও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, শেষ দফা নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয় সেদিকেও পুলিশ সুপার বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছেন। নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশদের দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তাছাড়া জেলা প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতায়ও জেলাবাসী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, শেষ দফা নির্বাচনেও পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসারসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বৃহস্পতিবারেই নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছে গেছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ বলেন, সুনামগঞ্জ শান্তি-সম্প্রীতির প্রোজ্জ্বল জনপদ। এখানকার সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও শান্তিপ্রিয়। ছোটখাটো কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা বাদ দিলে সুনামগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষ ও কঠোর অবস্থান এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভোটে প্রভাব বিস্তারের কোন চেষ্টা না করায় সাধারণ জনসাধারণের মধ্যে প্রশংসিত হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ইতোপূর্বে যেভাবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়েছে শেষ দফা নির্বাচনও একইভাবে সম্পন্ন করতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।