সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
সোহাগী জাহান তনুর সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের তথ্য গোপন করা হয়েছে অভিযোগ করেছে পরিবার। বৃহ¯পতিবার তনুর মা আনোয়ারা বেগম সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, তনুর মাথার পেছনে, নাকে ও কানে রক্তাক্ত আঘাতের চিহ্ন থাকলেও তা মরদেহের প্রথম সুরতহাল প্রণয়নকারী ও মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সাইফুল ইসলাম গোপন করেছেন।
তিনি বলেন, সুরতহালের সময় পরিবারের পক্ষ থেকে স্বামী-সন্তানসহ আমি উপস্থিত ছিলাম। এ সময় ওই পুলিশ কর্মকর্তা সাদা কাগজে আমাদের কাছ থেকে আগাম স্বাক্ষর নেন। পরে সুরতহালে আঘাতের চিহ্ন গোপন করে মিথ্যা তথ্য হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. শারমিন সুলতানা তনুর মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ে যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও জখম গোপন রেখেছেন বলেও অভিযোগ করেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম।
বুধবার তনুর বাবার উকিল নোটিশের জবাবে ডা. শারমিন সুলতানা তার পাঠানো চিঠিতে এসআই সাইফুলের সুরতহাল রিপোর্টের কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে তিনি তনুর শরীরে আঘাত ছিল না বলে উল্লেখ করেন।
সূত্র জানায়, গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের একটি জঙ্গল থেকে তনুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তনুর মা-বাবা ও ভাইদের উপস্থিতিতে কুমিল্লা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তনুর সুরতহাল তৈরি করেন এসআই সাইফুল ইসলাম। ওই সুরতহালে শুধু তনুর কানে একটি জখমের চিহ্নের কথা উল্লেখ করা হয়। গত ২১ মার্চ দুপুরের দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. শারমিন সুলতানা তনুর ময়নাতদন্ত করেন। গত ৪ এপ্রিল প্রকাশ করা প্রথম ময়নাতদন্তে তনুর মৃত্যুর কারণ বা ধর্ষণের আলামত উল্লেখ ছিল না। ফরেনসিক বিভাগের এ প্রতিবেদন বেশ সমালোচনার মুখে পড়ে।
এ বিষয়ে বৃহ¯পতিবার কুমিল্লা ময়নামতি এলাকায় তনুর মা আনোয়ারা বেগম সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তিনি জানান, আমার মেয়ের ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি, ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্যই হয়তো ন্যায় বিচার পাব না।
তিনি আরো বলেন, ‘এসআই সাইফুল সাদা কাগজে আগাম স্বাক্ষর নিয়ে সুরতহাল তৈরি করেছেন। ডা. শারমিন সুলতানাও মৃত্যুর কারণ বের করতে তনুর জখমগুলো এড়িয়ে গেছেন।’
তিনি ডাক্তারদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ডিএনএ রিপোর্টে তনুর কাপড়ে পুরুষের শুক্রাণু পাওয়া গেলেও ডাক্তার শারমিন সুলতানা ধর্ষণের আলামত বের করতে এসব পরীক্ষার উদ্যোগ নেননি কেন।’
তবে তনুর মায়ের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাইফুল ইসলাম ফোনে জানান, তনুর পরিবারের সদস্য, ডাক্তার ও নার্সদের উপস্থিতিতে যথাযথভাবে সুরতহাল তৈরি করা হয়, এ সময় তনুর কান ছাড়া অন্য কোথাও জখমের চিহ্ন ছিল না। কোনো জখমের চিহ্নই
গোপন রাখা হয়নি।’
এদিকে ডিএনএ প্রতিবেদন সিআইডি থেকে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বোর্ডকে দিতে আদালতের নির্দেশের পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও বৃহ¯পতিবার বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফরেনসিক বিভাগে ডিএনএ প্রতিবেদন পৌঁছেনি বলে জানিয়েছেন ফরেনসিক বিভাগ ও দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বোর্ডের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা।
গত রোববার সিআইডি থেকে ডিএনএ প্রতিবেদন ফরেনসিক বিভাগে সরবরাহ করতে আদেশ দেন কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মুস্তাইন বিল্লা।
এ বিষয়ে বিকেলে কুমিল্লা সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার প্রণব কুমার রায় জানান, আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক তনুর ডিএনএ প্রতিবেদন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বোর্ডকে দিতে প্রক্রিয়া চলছে।