“সড়ক যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সবক্ষেত্রে সুনামগঞ্জ পিছিয়ে আছে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে।” এই মন্তব্যটি করা হয়েছে গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে। মন্তব্যটি যতটা সাদামাটা ততোটাই সত্যি। এই সত্যির মধ্যে বিন্দুবিস্বর্গ মিথ্যার সংমিশ্রণ নেই। প্রান্তিক অঞ্চল হিসেবে ব্রিটিশ আমল থেকেই সুনামগঞ্জ প্রশাসনিক কেন্দ্রের অকারণ অবহেলার শিকার হয়ে আসছে এবং বলাবাহুল্য এখনও হচ্ছে। এই অনাকাক্সিক্ষত অবহেলার ধকক সুনামগঞ্জ আর কত সইবে?
প্রতিবেদনের উপর্যুক্ত মন্তব্যটির পরে বাক্যটি হলোÑ “বিশেষ বরাদ্দ ছাড়া অন্য জেলার সাথে হাওরাঞ্চলের জেলাগুলোর উন্নয়ন কর্মকান্ডের সমন্বয় সম্ভব নয়। অর্থপ্রতিমন্ত্রী যেহেতু সুনামগঞ্জের, তিনি এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারেন।” অবস্থা বিবেচনায় প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের পক্ষে উদ্যোগ নেওয়াটা একেবারে ফেলনা কীছু নয়, যদি তিনি তা পারেন। নির্দ্বিধায় বলা যায় হাওরাঞ্চলের, বিশেষ করে সুনামগঞ্জের, সার্বিক উন্নয়নে সেটা অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে, যদি তা দুর্নীতিবাজরা করায়ত্ব করে না নেয়।
পত্রিকার ভাষ্যভঙ্গিতে মনে হয় যে, সুনামগঞ্জবাসী উন্নয়নের স্পর্শ লাভের অভিপ্রায়ে কেন্দ্রের “বিশেষ বরাদ্দ”-এর জন্য তীর্থের কাকের মতো প্রতীক্ষায় আছে। অথচ এই দেশের উন্নয়নের প্রতিটি স্তরে, প্রতিটি বিশেষ প্রকল্পে সুনামগঞ্জের অফুরন্ত সম্পদের অবদান কোনও সরকার বা কেন্দ্রের পক্ষে অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। হাওরাঞ্চলের যাবতীয় সম্পদ, বিশেষ করে সুনামগঞ্জের ধান-পাথর-মাছ-বৃক্ষ ইত্যাদি প্রতিটি প্রাকৃতিক জিনিসই এই দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রকল্পে অবিচ্ছেদ্য ও অবিকল্প উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে অনাদিকাল থেকে এবং এখনও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রকৃতপ্রস্তাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে সর্বাগ্রে হাওরাঞ্চলের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন নিশ্চিত করতে না পারলে, সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। সমগ্র দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি হাওরাঞ্চলকে উন্নয়নবঞ্চিত রেখে দেশোন্নয়নের চিন্তার চেয়ে অলীক, অন্তঃসারশূন্য ও অবাস্তব আর কীছুই হতে পারে না।
“বিশেষ বরাদ্দ” দিয়ে হাওরাঞ্চলের উন্নয়নের সরকারি সদিচ্ছা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু অভিজ্ঞমহলের ধারণা যে, হাওরাঞ্চলের উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য “বিশেষ বরাদ্দ” সৃজনের কষ্ট স্বীকার করার কোনও প্রয়োজন নেই, যদি হাওরের সম্পদ থেকে অর্জিত আয় হাওর উন্নয়নে ব্যয়িত হয় এবং ব্যয়ের সম্ভাব্য অংশটা অবশ্যই সরকার নির্ধারণ করবেন যুক্তিসঙ্গত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে।