সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বাপেক্স ও পেট্রোবাংলার বিরুদ্ধে কানাডীয় কো¤পানি নাইকোর দায়ের করা মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছে বিনিয়োগ বিরোধ নি®পত্তি-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নালিশি আদালত (ইকসিড)। মামলার কার্যক্রম স্থগিত রেখে ইকসিড এখন নাইকোর বিরুদ্ধে বাপেক্সের দায়ের করা দুর্নীতির অভিযোগ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নি®পত্তি করবে। মঙ্গলবার দেওয়া এক নির্দেশনামূলক আদেশে ইকসিড এ কথা বলেছে।
একই সঙ্গে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইকসিড নাইকোর গ্যাসের দাম পরিশোধের যে নির্দেশনা দিয়েছিল তা বহাল রেখেছে। নাইকো ওই নির্দেশনাকে রায় (অ্যাওয়ার্ড) হিসেবে ঘোষণার জন্য আবেদন জানিয়েছিল। কিন্তু ইকসিড তা করেনি।
গ্যাসের দাম পরিশোধের জন্য ইকসিডের দেওয়া ওই নির্দেশনা স¤পর্কে বাপেক্স-পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় নাইকোর গ্যাসের দাম পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বাপেক্স-পেট্রোবাংলার এই ব্যাখ্যাও বহাল রয়েছে।
জানতে চাইলে ইকসিডে বাপেক্স-পেট্রোবাংলা তথা সরকারের পক্ষের আইনজীবী মঈন গনি বলেন, নাইকোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ গত ২৫ মার্চ ইকসিডে দাখিল করা হয়েছে সে বিষয়ে আরও কিছু তথ্য চেয়েছেন ওই আদালত। আগামী ১৪ জুন এ সব তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। এ ছাড়া, নাইকোর সঙ্গে চুক্তি স¤পাদনের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে যারা যুক্ত ছিলেন তাঁদের নামের একটি তালিকাও চেয়েছেন ইকসিড।
আইনজীবী মঈন গনি বলেন, বাপেক্সের পক্ষ থেকে তাঁরা ইকসিডে দায়ের করা নাইকোর মামলা বাতিল করে দেওয়ার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত সরাসরি তা বাতিল না করে কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। পাশাপাশি নাইকোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নি®পত্তি করার ঘোষণা দিয়েছেন।
দোয়ারাবাজার উপজেলার টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে ২০০৫ সালে সংঘটিত দুই দফা গ্যাস কূপ বিস্ফোরণের প্রায় ১১ বছর পর গত ২৫ মার্চ বাপেক্স তথা সরকার ইকসিডে নাইকোর বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণসহ দুর্নীতির অভিযোগ উপস্থাপন করে। একই সঙ্গে নাইকোর কাছে প্রায় নয় হাজার ২৫০ কোটি টাকা (প্রায় ১১৭ কোটি মার্কিন ডলার) ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়।
অবশ্য এর আগে, ২০১০ সালেই নাইকো ইকসিডে মামলা করে।
টেংরাটিলায় গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে ২০০৫ সালে। প্রথম ৭ জানুয়ারি, দ্বিতীয়বার ২৪ জুন। নাইকোর অদক্ষ খনন প্রক্রিয়াই ছিল ওই দুর্ঘটনার কারণ। কিন্তু নাইকোই ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল একটি এবং ১৬ জুন আরেকটি মামলা দায়ের করে ইকসিডে। এর একটি মামলায় ফেনী ক্ষেত্র থেকে তাদের সরবরাহ করা গ্যাসের দাম (সুদ ছাড়া প্রায় ২৫ কোটি ডলার) পরিশোধের আদেশ চায় নাইকো। অপরটিতে গ্যাস কূপ বিস্ফোরণের দায় তাঁদের ওপর বর্তায় না মর্মে আদেশ প্রত্যাশা করে নাইকো। সেই মামলায় আইনজীবী ও কর্মকর্তাদের ঔদাসীন্যে নাইকো প্রায় জিতেই যাচ্ছিল। এই অবস্থায় সরকার আইনজীবী পরিবর্তন করে। বর্তমানে এই মামলা পরিচালনাকারীদের মধ্যে আছের ব্যারিস্টার মঈন গনি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফলি হগ। এই ফলি হগ সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মামলায়ও বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন। এই আইনজীবীরা এখন মামলার গতি-প্রকৃতি ঘুরিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা কানাডার সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নাইকোর দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে তা ইকসিডে উপস্থাপন করেন।
উল্লেখ্য, কানাডার রয়্যাল মাউন্টেড পুলিশ বাংলাদেশে নাইকোর করা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে তথ্য-প্রমাণ বের করেছিল। সেগুলোই বাপেক্সের বর্তমান আইনজীবীরা সংগ্রহ করে ইকসিডে উপস্থাপন করেন। এর ভিত্তিতেই ইকসিড নাইকোর দায়ের করা মামলা স্থগিত করে বাপেক্সের দায়ের করা দুর্নীতির অভিযোগ আগে নি®পত্তির সিদ্ধান্ত নিল।
১৯৯৭ সালে নাইকো উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তির (পিএসসি) মাধ্যমে গ্যাস ক্ষেত্র উন্নয়নের কাজ পাওয়ার জন্য দ্বিতীয় বিডিং রাউন্ডে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু তাদের আর্থিক ও কারিগরি যোগ্যতা সরকারের নির্ধারিত মান অনুযায়ী না হওয়ায় অযোগ্য ঘোষিত হয়। এরপর তাঁরা ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে প্রান্তিক গ্যাস ক্ষেত্র (যে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তোলার মতো গ্যাস অবশিষ্ট নেই বলে স্বীকৃত) ইজারা নেওয়ার তৎপরতা শুরু করে এবং ফেনী ও ছাতক (টেংরাটিলা) গ্যাস ক্ষেত্র দুটি পেয়ে যান। যদিও ওই গ্যাস ক্ষেত্র দুটি প্রকৃতই প্রান্তিক ছিল কি না সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ রয়েছে।
টেংরাটিলায় দুই দফা বিস্ফোরণের ফলে ছাতক গ্যাস ক্ষেত্র ও সন্নিহিত এলাকায় পরিবেশ ও জনজীবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সরকার তথা পেট্রোবাংলা প্রথমে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করে। কিন্তু তা সফল না হওয়ায় ২০০৮ সালে ঢাকার দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ৭৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করে। তবে এখন পর্যন্ত এই মামলার বিচারিক কার্যক্রমে অগ্রগতি খুব কম।