1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩২ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

১১৭ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি : আন্তর্জাতিক আদালতে নাইকো’র বিরুদ্ধে বাপেক্সের মামলা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ মে, ২০১৬

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ডে খননকাজে দুর্ঘটনা ঘটানোয় কানাডীয় কো¤পানি নাইকোর বিরুদ্ধে প্রায় ৯ হাজার ২৫০ কোটি টাকা (প্রায় ১১৭ কোটি মার্কিন ডলার) ক্ষতিপূরণ দাবি করে বিনিয়োগ বিরোধ নি®পত্তি-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নালিশি আদালতে (ইকসিড) মামলা করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কো¤পানি-বাপেক্স।
দোয়ারাবাজারে অবস্থিত দেশব্যাপী ছাতক গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত টেংরাটিলায় ২০০৫ সালে সংঘটিত বিস্ফোরণের প্রায় ১১ বছর পর ইকসিডে গেল বাপেক্স তথা সরকার। অবশ্য এর আগে, ২০১০ সালে নাইকো ইকসিডে মামলা করেছে। বাপেক্স এখন পাল্টা অভিযোগ নিয়ে ওই আন্তর্জাতিক আদালতে গেল। ক্ষতিপূরণ দাবির পাশাপাশি বাংলাদেশে গ্যাসক্ষেত্র ইজারা পেতে নাইকো যে দুর্নীতি করেছিল, তার তথ্য-প্রমাণ দাখিল করে ইকসিডে নাইকোর দায়ের করা আগের সব অভিযোগ বাতিলের আবেদন জানানো হয়েছে। বাপেক্সের দাখিল করা তথ্য-প্রমাণের মধ্যে বিপুল অর্থ লেনদেনের ব্যাংক চেকের ফটোকপি, সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রভৃতি রয়েছে। গত ২৫ মার্চ বাপেক্সের আবেদন দাখিলের পর ইকসিড এ স¤পর্কে নাইকোর বক্তব্য চেয়ে রুল জারি করেছে। আগামী জুলাই মাসের মধ্যে নাইকোকে বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে। আগস্টের শেষ সপ্তাহে ইকসিডের ধার্য করা দিনে বিষয়টি নিয়ে শুনানি হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ স¤পদ মন্ত্রণালয় এবং বাপেক্সের পক্ষে ইকসিডে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীদের সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্রগুলো বলেন, ক্ষতিপূরণের মধ্যে ১০৫ কোটি ডলার (এর সঙ্গে সুদ যুক্ত হবে) দাবি করা হয়েছে টেংরাটিলায় দুটি গ্যাসকূপে বিস্ফোরণের দায়ে সরকারের তথা দেশের ক্ষতি হিসেবে। আর ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলার (এর সঙ্গে সুদ যুক্ত হবে) দাবি করা হয়েছে বাপেক্সের নিজস্ব ক্ষতি হিসেবে। টেংরাটিলায় গ্যাসকূপে ২০০৫ সালে দুইবার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। প্রথমবার জানুয়ারির ৭ তারিখে, দ্বিতীয়বার জুনের ২৪। নাইকোর অদক্ষ খনন-প্রক্রিয়াই ছিল ওই দুর্ঘটনার কারণ। কিন্তু এর আগে বিষয়টি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া হয়নি। বরং নাইকোই প্রথম ইকসিডে মামলা করে। ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল একটি এবং ১৬ জুন আরেকটি মামলা করে নাইকো। এই মামলায় আইনজীবী ও কর্মকর্তাদের অদক্ষতায় নাইকো প্রায় জিতেই যাচ্ছিল। এ অবস্থায় সরকার আইনজীবী পরিবর্তন করে। বর্তমানে এই মামলা পরিচালনাকারীদের মধ্যে রয়েছেন ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের ব্যারিস্টার মঈন গনি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফলি হগ। এই ফলি হগ সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মামলায়ও বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন। নতুন এই আইনজীবীরা দায়িত্ব নেওয়ার পর দুটি কাজ করেন। এক, পেশাদার বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে টেংরাটিলায় ক্ষয়ক্ষতির একটি নিকাশ করান। এর ভিত্তিতেই ক্ষতিপূরণের অঙ্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। দুই, বাংলাদেশের রাজনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে কাজ নেওয়ার দায়ে কানাডার আদালতে যে মামলায় নাইকো দ-িত হয়েছিল, সেই মামলার কাগজপত্র সংগ্রহ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, নাইকোর দুর্নীতির সব দালিলিক প্রমাণাদি পাওয়া গেছে। তার ভিত্তিতেই ইকসিডে ক্ষতিপূরণের আবেদন করা হয়েছে।
কানাডায় নাইকোর বিরুদ্ধে মামলা, জরিমানা :
কানাডার আদালতে নাইকোর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল সে দেশের সরকার। কারণ নাইকো কাজ পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিক ও কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে কানাডার ভাবমূর্তি ক্ষুণœ এবং এ-সংক্রান্ত কানাডার আইন লঙ্ঘন করেছে। ওই মামলা হওয়ার পর রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের একজন করপোরাল ক্যাভিন পল দুগান ২০০৯ সালে বিষয়টি তদন্তে বাংলাদেশে আসেন। তিনি এ দেশে নাইকোর কর্মকান্ড স¤পর্কে নিবিড় তদন্ত চালান। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হিসেবে যাঁরা সন্দেহের তালিকায় ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের সাক্ষাৎকার নেন। অর্থ লেনদেনের প্রমাণ হিসেবে ব্যাংকের চেক, ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রভৃতি সংগ্রহ করেন। দুগান ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর এফিডেভিট করে কানাডার আদালতে এসব তথ্য-প্রমাণ দাখিল করেন। এ অবস্থায় নাইকো আদালতে দোষ স্বীকার করে। কারণ, কানাডার আদালতে অভিযুক্ত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দোষ স্বীকার করলে লঘু শাস্তি হয়। নাইকোর বিরুদ্ধে তদন্তে সব তথ্য-প্রমাণ সংগৃহীত হওয়ার পর নাইকো এ কৌশল অবলম্বন করে। আদালত তাঁদের ১০ লাখ ডলার জরিমানা করে ছেড়ে দেন।
দুগানের তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ইকসিডে দুর্নীতির অভিযোগ :
নাইকোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব তথ্য-প্রমাণ করপোরাল দুগান সংগ্রহ করেছিলেন, সেগুলো কানাডার আদালত বিচারকার্যে বিবেচনা করেনি। আইনজীবীদের পরামর্শে সেই তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে ইকসিডে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। একই সঙ্গে নাইকোর দায়ের করা মামলা বাতিল করে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে বলা হয়েছে, যেহেতু নাইকোর কাজটি পাওয়ার জন্য দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিল, সেহেতু তাঁদের সঙ্গে স¤পাদিত কোনো চুক্তিই বৈধ নয়। নাইকোর দুর্নীতির যেসব তথ্য-প্রমাণ কানাডীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, তার মধ্যে দেশের একজন ব্যবসায়ী নাইকোর পক্ষে সরকারি পর্যায়ে ব্যাংক চেকের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করেছেন বলে প্রমাণ আছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে ওই ব্যবসায়ীকে ডেকে ওই চেকের কপি দেখিয়ে তাঁকে ইকসিডে নাইকোর বিরুদ্ধে করা মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তিনি তাতে রাজি হননি। তিনি অর্থ লেনদেনের বিষয়টি স্বীকার করলেও তা যে নাইকো চুক্তির বিষয়ে হয়েছে, তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ওই অর্থ তিনি দিয়েছিলেন একটি টিভি চ্যানেল পাওয়ার জন্য। মন্ত্রণালয় থেকে বের হয়ে তাঁকে রাজসাক্ষী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার কথা তিনি নাইকোকে জানিয়েছেন বলেও মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়। বিষয়টি স¤পর্কে জানতে চাইলে মঈন গনি বলেন, নাইকোর করা দুর্নীতির সব তথ্য-প্রমাণ দাখিল করে তাঁরা ইকসিডের কাছে কতিপয় নির্দেশনা চেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ২০০৩ সালের ১৬ অক্টোবর নাইকো বাপেক্সের সঙ্গে যে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি করে, তার পেছনে দুর্নীতি ছিল বলে চুক্তিটি বাতিল ঘোষণা করা। এই চুক্তির বিষয়ে ইকসিডে মামলা দায়েরে নাইকোকে অযোগ্য ঘোষণা করা। যৌথ উদ্যোগের চুক্তিটি বাতিলের অধিকার বাপেক্সের আছে বলে ঘোষণা দেওয়া। ইকসিডে নাইকোর এ-সংক্রান্ত সব অভিযোগ বাতিল করা। বাপেক্সকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য ঘোষণা করা। টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণে ক্ষতির জন্য বাপেক্স ও বাংলাদেশ সরকারকে ক্ষতিপূরণ দিতে নাইকোকে নির্দেশ দেওয়া। ১৯৯৭ সালে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তির (পিএসসি) মাধ্যমে গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের কাজ পাওয়ার জন্য দ্বিতীয় বিডিং রাউন্ডে অংশ নিয়েছিল নাইকো। কিন্তু তাদের আর্থিক ও কারিগরি যোগ্যতা সরকারের নির্ধারিত মান অনুযায়ী না হওয়ায় অযোগ্য ঘোষিত হয়। এরপর তাঁরা ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে প্রান্তিক গ্যাসক্ষেত্র (যে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তোলার মতো গ্যাস অবশিষ্ট নেই বলে স্বীকৃত) ইজারা নেওয়ার তৎপরতা শুরু করেন এবং ফেনী ও ছাতক (টেংরাটিলা) গ্যাসক্ষেত্র দুটি পেয়েও যান। যদিও ওই গ্যাসক্ষেত্র দুটি প্রকৃতই প্রান্তিক ছিল কি না, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ আছে। টেংরাটিলায় দুই দফা বিস্ফোরণের ফলে ছাতক গ্যাসক্ষেত্র ও সন্নিহিত এলাকায় পরিবেশ ও জনজীবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সরকার তথা পেট্রোবাংলা প্রথমে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করে। কিন্তু সফল না হওয়ায় ২০০৮ সালে ঢাকার দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ৭৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করে। তবে এখন পর্যন্ত এই মামলার বিচারিক কার্যক্রমে অগ্রগতি খুব কম।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com