পাভেল পার্থ ::
জামদানি শাড়ি অনন্য হয়েছে তার পাড়ের নকশার জন্য। কলকা পাইড়, ইঁন্দুর পাইড়, বেলজিয়াম পাইড়, শাল পাইড়, হাপাইলক্ষ্মী পাইড়, যাদু পাইড়, গাছ পাইড়, কুইলতা পাইড়, ডরিং পাইড়, দুবলা পাইড়, নকশীপাতা পাইড়, বেলপাতা পাইড়, কাউয়ারঠেংগি পাইড়, কচুপাতা পাইড়, ফুল পাইড়, মাদলী পাইড়, পানশী পাইড়, দুই করলা পাইড়, দুবলা জাল পাইড়, মদন পাইড়, করলা পাইড়, ইঞ্চি পাইড়, আম পাইড়, মালা পাইড়, ময়ূরখেস পাইড়, পান পাইড় এরকম অসংখ্য পাড়ের নকশা আছে জামদানি বুননে। শীতলক্ষ্যা নদীর কোলে জামদানি শাড়ির জন্ম। জনবসতিঘেঁষা নদীর ভোরের বাতাস, শিশির বিন্দু, স্থানীয় মাটির রসে ভেজা দেশী ধানের খই, ভাতের মাড় সব মিলিয়ে শীতলক্ষ্যা অববাহিকার নারীরা তৈরি করেন জামদানি শাড়ি বোনার জন্য এক বিশেষ মন্ড। বাংলাদেশে শাড়ি ও তাঁতের ভিন্নতা আছে। টাঙ্গাইল, পাবনা, কুষ্টিয়া, মণিপুরী, বেইন কিংবা হাজং আদিবাসীদের বোনা তাঁত। চলতি আলাপের শুরুটাই হয়েছে এক জামদানি শাড়ির বিবরণে। এমন এক শাড়ি ঘিরেই কতগুলো প্রাণ জড়িত এবং কত ধরনের মানুষ জড়িত তা একটিবার ভাববার জন্য। এই প্রাণসমূহ একে অপরের সাথে কী জটিল সম্পর্কে যুক্ত ও নির্ভরশীল তা কী আমরা জানবার চেষ্টা করি? ইঁদুর, গাছ, মন্দির, ময়ূর, বাঁশ, ধাতু, ধান, তুলা, সূতা, রঙ, শিশু, নারী, প্রবীণ, হাট, দোকান কত কী? প্রশ্ন হলো প্রকৃতি ও সংস্কৃতিতে বিরাজমান এই বৈচিত্র্যকে আমরা কতজন জানি, কতজন মানি? জামদানি শাড়ির মতো এক জীবনের সাথে আরো কত জীবনের সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতা তা কী আমরা স্মরণে রাখি? প্রকৃতি ও সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্য ও নির্ভরতাই এই মাতৃদুনিয়ায় আমাদের জীবন মহাবয়ানের আখ্যান বিকশিত করে চলেছে। প্রাণ ও সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্য কোনোভাবে আলগা হয়ে গেলে, কোনো বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা আঘাতপ্রাপ্ত হলে পুরো জীবনধারাই ওলটপালট হয়ে যায়। দীর্ণ ও মুমূর্ষু হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে গত বিশ বছর ধরে তাই হয়ে চলেছে। প্রশ্নহীন, অবিরাম। রাষ্ট্রের অবিচার, এজেন্সির খবরদারি, বহুজাতিক আগ্রাসন আর নানা গোষ্ঠীর নামে কতক লুটেরা দুর্বৃত্তের অন্যায় দেশজুড়ে এক লুণ্ঠন ও বিচারহীন সংস্কৃতি জারি করেছে। বিশ হাজার ধান জাতের বাংলাদেশে সকল দেশি ধানের জাত গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। মনস্যান্টো, সিনজেনটা, কারগিল, ডুপন্ট, বায়ার ক্রপ সায়েন্স, বিএসএফ এর মতো বহুজাতিক কৃষি বাণিজ্য কোম্পানির মুনাফাকে চাঙ্গা রাখতে বৈধ করা হয়েছে তথাকথিত সবুজ বিপ্লব। জমিন থেকে বিষ দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে কেঁচো, শামুক, ব্যাঙ কি মৌমাছি। মাটির শরীর আজ রক্তাক্ত। ধানের সাথে সাথে বিদায় হয়েছে মানুষের স্মৃতি আর কৃত্যরীতি। বৈচিত্র্য আর নিজস্ব কৃষিরীতি হারিয়ে এককালের কৃষক সমাজ আজ বহুজাতিক কোম্পানির বন্দি দাস। বৈচিত্র্যবিমুখ এই ধারা ক্রমেই সমাজ, বর্গ, পরিবার, ব্যক্তির মন ও শরীর দখল করেছে। তৈরি হয়েছে এক প্রশ্নহীন সহিংস সময়। সহিংসতার এই প্রেক্ষাপটকে কেবলমাত্র জঙ্গিবাদ, লুটেরা অর্থনীতি আর সন্ত্রাসবাদ দিয়ে দেখলে চলে না। এই বিশ্লেষণ নির্ঘণ্টের গভীরে যায় না, তলিয়ে দেখে না। কেন কিছু মানুষ ধান, পাখি, মাছ, গাছ কি মানুষের বৈচিত্র্য সহ্য করতে পারছে না? এই মনস্তত্ত্ব বনের বাঘকে খুন করে চামড়া বেঁচে, নদী দখল করে মাছেদের মেরে ফেলে। এই মনস্তত্ত্বই মানুষের সমাজে বিদ্যমান সাংস্কৃতিক, লিঙ্গীয়, ভাষিক ভিন্নতাকে সহ্য করতে পারে না। তাই নিরন্তর খুন হচ্ছে ভিন্নমত, উধাও হচ্ছে বৈচিত্র্য। সহিংস হয়ে ওঠা রক্তাক্ত সময়কে বুঝতে অবশ্যই বৈচিত্র্যবিমুখ এই মনস্তত্ত্বকে গভীরভাবে পাঠ করা জরুরি। আর তা না হলে সহিংস সময় আরো প্রবল ও বৈধ হতে থাকবে।
২.
মহামতি খনার একটি বচন আছে, ব্যাঙ ডাকে ঘন ঘন, শীঘ্র হবে বৃষ্টি যেন। এককালে ব্যাঙের ডাক জানান দিত বর্ষা আসছে। ব্যাঙের সাথে পরিবেশ প্রতিবেশের সম্পর্ক গভীর। আবহাওয়াগত পরিবর্তনশীলতায় দ্রুত যেসকল প্রজাতির আচরণে সাড়া ও প্রভাব তৈরি হয় ব্যাঙ তাদের অন্যতম। গ্রাম জনপদে একটা সময় বৃষ্টির প্রার্থনা করে ঘটা করে ব্যাঙের বিয়ে দেয়া হত। স্থানীয় প্রাণবৈচিত্র্য, লোকায়ত জীবন সব মিলিয়ে প্রতিবেশগত সেই ভারসাম্যের সুরক্ষা আর নেই। ধনী মানুষ ব্যাঙ মেরে রপ্তানি করে আরো ধনী হয়েছে। ব্যাঙের খাদ্য পোকাদের বিষ দিয়ে মেরেছে। ব্যাঙের বসত দখল করেছে। ব্যাঙ ও মেঘের সম্পর্ক বুঝতে পারা নি¤œবর্গের মানুষকেও জখম আর উচ্ছেদ করেছে। প্রাণ, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে আগলে নিয়ে বিকশিত হওয়া জ্ঞানপ্রবাহ, চিন্তা, বিশ্বাস ও চর্চাকে তছনছ করে দিয়েছে। বৈচিত্র্যমুখী জীবনের সম্পর্ক এবং একের সাথে অন্যের জটিল নির্ভরশীলতাকে লন্ডভন্ড করেছে। এতে প্রজাতি হিসেবে মানুষ নিজেই আজ কাহিল ও সংকটের মুখোমুখি। কারণ প্রকৃতিতে মানুষের মত নির্ভরশীল আর কোনো প্রজাতি নেই। মানুষ নিজে নিজে একা খাদ্য কি আশ্রয় বা সংস্কৃতি কোনো কিছুই তৈরি করতে পারে না। বেঁচে থাকার জন্য মানুষ জল, মাটি, বাতাস, গাছ, মাছ, পাখি, অরণ্য, সমতল সবকিছুরই উপর নির্ভরশীল। নিদারুণভাবে মানুষ বারবার অবিরাম তার এই নির্ভরশীলতার সম্পর্কগুলোকে আমলে নিচ্ছে না। অন্যায়ভাবে সবকিছু জখম করে অকৃতজ্ঞতাকে টিকিয়ে রাখছে। মানুষ নিজের মায়ের দুধের ঋণের কথা আন্দাজ করে। কিন্তু মাছের পোনাদের এতিম করে মা মাছকে জোর করে ধরে আনাকে ‘মৎস্য উন্নয়ন’ হিসেবে বৈধ করে। যে গাছ নিজের জনমভর মানুষকে দমের বাতাস জোগায়, মানুষ নির্মম কায়দায় সেই গাছকে উপড়ে ফেলে। এমনকি রাজনৈতিক সহিংসতার বাহাদুরি দেখাতেও গাছকে হত্যা করে। মানুষের এই অকৃতজ্ঞতা আর বিস্তৃতির সংস্কৃতি ক্রমেই প্রবল হয়ে ওঠছে। মানুষের কাছে তাই এখন কেঁচো কি গাছ, মানুষ কি পাখির বৈচিত্র্য নিয়ে গড়ে ওঠা সংসারের কোনো গুরুত্ব নেই। প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ভিন্নতার প্রতি ঋণস্বীকারের সংস্কৃতি থেকে মানুষ প্রতিদিন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। আর এই বিচ্ছিন্নতার বোধই সহিংস সময়কে বৈধ করে তুলছে।
৩.
কৃষিজমিনের পতঙ্গকূল হত্যার জন্যই দুনিয়ায় বহুজাতিক কোম্পানির বিষ বাণিজ্যের সূচনা হয়েছে। আর তাকে বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে কৃষিএজেন্সি, বিদ্যায়তন ও জাতিরাষ্ট্রগুলো। অথচ এখনও বাংলাদেশে অনেক আদিবাসী সমাজে অনেক পোকা খাদ্য ও ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেক অঞ্চলে বাঙালি জীবনে পোকা ঐতিহ্যগত চিকিৎসায় কাজে লাগে। যে পোকাদের কাছ থেকে আদিবাসীরা ঋতু পরিবর্তনশীলতার আভাস পেতেন, যেসব পোকারা ছিল আদিবাসী জীবনের চলার সাথী, সেইসব পোকারা আজ রাসায়নিক কৃষির নামে কর্পোরেট বিষ কোম্পানির বিষের যন্ত্রণায় মারা যাচ্ছে। যে বন আমাদের জীবনের বন্ধু সেই বন আজ কলার বাগান আর একাশিয়া বাগানে পরিণত হয়েছে। আমাদের জল-জঙ্গল-জুম-জমিন থেকে প্রকৃতির সকল প্রাণবৈচিত্র্য আমাদের ভোগবাদী বিলাসিতার কারণেই বিদায় নিয়েছে। হয়েছে নিশ্চিহ্ন। প্রাণবৈচিত্র্যের এই সর্বনাশা বিলুপ্তিই আমাদের জলবায়ুজনিত জটিলতা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। জাতিসংঘের সাধারণ সভার দ্বিতীয় কমিটিতে প্রথম উত্থাপিত হয় ‘আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য দিবসের’ কথা। ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এটি পালিত হয় প্রতি বছরের ২৯ ডিসেম্বর। পরবর্তীতে আন্তজার্তিক প্রাণবৈচিত্র্য দিবস পুনরায় নির্ধারিত হয় ২২ মে। ২০১৬ সনে প্রাণবৈচিত্র্য দিবসের প্রতিপাদ্যে একে স্থায়িত্বশীল জীবনধারার মূল¯্রােত হিসেবে বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ২১ মে হলো বিশ্ব সংলাপ ও শান্তির জন্য সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য দিবস। প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ভিন্নতাকে আগলে না দাঁড়ালে ক্রমেই মানুষ হিসেবে আমরা আরো জটিল সংকটের মুখোমুখি হতে বাধ্য। সামনে হয়তো অপেক্ষা করছে আরো প্রবল সহিংস সময়, তবে মনে রাখা জরুরি আমরাই নিদারুণভাবে এটি প্রশ্রয় দিয়ে বৈধ করে চলেছি। এর সব দায় স্বীকার করেই আজ আমাদের দায়িত্বগুলো বুঝে নেয়া জরুরি। আর কাজটি নতুন প্রজন্মের, পূর্ব প্রজন্ম থেকে যারা অভিজ্ঞতা আর নির্দেশনাই কেবল ধার করতে পারে।
৪.
ব্যাখ্যা আর পরিসংখ্যানের নানা তর্ক থাকলেও অস্বীকার করবার উপায় নেই জলবায়ু সংকট আজ এক বৈশ্বিক দুশ্চিন্তার ময়দান। জলবায়ুজনিত বিপর্যয়ের ফলে প্রায় ১০ লাখ বৈচিত্র্যময় প্রজাতির বিলুপ্তির আশংকা করছেন পুস্তকি বিশেষজ্ঞরা। প্রাণবৈচিত্র্যের নিশ্চিহ্নকরণ প্রক্রিয়া সরাসরি আঘাত করবে পৃথিবীর বিপন্ন শরীরকেও। জলবায়ুজনিত কারণে পরিবর্তিত বিপন্ন এই আমাদের একমাত্র প্রিয় পৃথিবী আবারো প্রাণ ফিরে পেতে পারে কেবলি প্রাণবৈচিত্র্যের সকল সদস্যদের যৌথ মিলন আর পরস্পরনির্ভরশীল সংস্কৃতির প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মাধমেই। আর এটি সম্ভব বৈচিত্র্য ও ভিন্নতাকে পাঠ করা নি¤œবর্গের নিজস্ব কায়দা আর লোকায়ত উদ্যোগগুলোর ভেতর দিয়েই। এখনও দেশে বাঙালি হিন্দু, বৌদ্ধ এবং অনেক আদিবাসী সমাজ কেবলমাত্র পূজা-পার্বণের ভেতর দিয়ে সংরক্ষণ করেন এমন অনেক পবিত্র বনভূমি যেখানে বৈশিষ্ট্যময় প্রজাতি সমূহের দেখা মেলে। বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারের বোস্তামী কাছিম, খান জাহান আলীর মাজারের কুমির ধলা পাহাড়-কালাপাহাড়, হযরত শাহজালালের মাজারের গজার মাছ কী রাষ্ট্রের কোনো বিভাগ বা বাজেট বাঁচিয়ে রেখেছে? এইসব প্রজাতি সংরক্ষিত হয় জনগোষ্ঠীর লোকায়ত বিশ্বাস ও ভালবাসার ভেতর দিয়েই। আজ সহিংস ও বিপন্ন সময়ে আমাদেরকে রাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থান থেকে শুরু করে ব্যক্তির নিজস্ব আচরণ অবধি এইসব প্রসঙ্গ বিবেচনা করা জরুরি।
৫.
প্রাণবৈচিত্র্য বলতে আমরা বুঝে থাকি চারপাশের সকল দেখা-অদেখা এমনকি কল্পনার প্রাণজগতকেও। শুধু পতঙ্গ, পাখি, মাছ, সরীসৃপ, উভচর, মানুষ, বৃক্ষগুল্ম, অণুজীব মিলেই প্রাণের বৈচিত্র্য নয়। আমাদের প্রাণবৈচিত্র্য ধারণায় রূপকথার ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী আছে, পংখীরাজ ঘোড়া আছে। সমস্যা হলো রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নানাসময় ‘প্রাণবৈচিত্র্যের’ সংজ্ঞায়ন করছে একেবারেই একপেশে কায়দায় এবং উপনিবেশিক চিন্তাকাঠামোর ভেতরে থেকে। প্রাণবৈচিত্র্য ঘিরে দেশে প্রথমবারের মতো এক বৈচিত্র্যবিমুখ আইন চূড়ান্তকরণের চেষ্টা চলছে। ‘বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন ২০১২’ এর খসড়াতে প্রাণবৈচিত্র্য বলতে মূলত: উদ্ভিদ ও প্রাণিকূলকে বোঝানো হয়েছে। স্পষ্টভাবে এখানে প্রজাতি হিসেবে মানুষ অনুপস্থিত। আর এটি ঘটেছে মূলত কিছু একতরফা পশ্চিমি বিদ্যায়তনিক বাহাদুরির জোরেই। অথচ বাংলাদেশে যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রাণবৈচিত্র্যকে তত্ত্বায়ন ও প্রাণবৈচিত্র্যের সীমানা সূচিত করতে চাইছেন তারা নিজেরাই এক প্রবল ‘প্রাণবৈচিত্র্য’ ধারণা বহন করে চলেছেন তাদের শরীর ও সংস্কৃতির প্রবাহে। তত্ত্বায়ন ও কাঠামোর জায়গাতে বরাবরের মতো তারা নিজের সূত্র ও সম্ভাবনাকে বাদ দিয়ে অপরের ভুলকে বগলদাবা করে ‘চিন্তার দাসত্বকেই’ প্রমাণ করে চলেছেন। আজ যদি ‘প্রাণবৈচিত্র্য’ এতো ছোট্ট এক গন্ডী ও সীমানায় আটকে যায় তবে তা আমাদের মনস্তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বলতাকেই বিশ্বদরবারে প্রমাণ করবে। বৈচিত্র্যের সীমানা ঘিরে এই বিশৃংখল চিন্তাপদ্ধতি প্রকৃতি ও সংস্কৃতির জটিল সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতাকে অস্বীকার করবে। প্রজাতির উপর নির্ভরশীলতার বিজ্ঞান থেকে মানুষ ক্রমেই আরো বিস্মৃত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। বিচ্ছিন্নতার এই বোধই মানুষকে লুটেরা, সন্ত্রাসী, ধর্ষক, হন্তারক কি জঙ্গি করে তুলে। টিকে থাকে সহিংসতার গণিত। আমরা এই মিথ্যা গণিত চাই না। প্রাণ, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ভিন্নতার প্রতি আমাদের আজন্ম ঋণ স্বীকারের ভেতর দিয়েই নিজের তরতাজা অস্তিত্বকে এই দুনিয়ায় বিকশিত করে তুলতে চাই। প্রকৃতির সব সদস্যদের নিয়েই গড়ে ওঠুক আগামীর সংস্কৃতি।
[লেখক : প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষক। ধহরসরংঃনধহমষধ@মসধরষ.পড়স]