স্টাফ রিপোর্টার ::
কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা ও তৃণমূল নেতাদের হুঁশিয়ারি, বহিষ্কারের খড়গ কিছুই পরোয়া করছেন না আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। ৪ জুন অনুষ্ঠেয় ৬ষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের রাজনীতি সরগরম হলেও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অনড় অবস্থানে রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন না পেলেও ‘স্বতন্ত্র’ হিসেবে দলের বিপরীতে থেকেই নির্বাচনে জয়ী হতে জোর প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন তাঁরা। গত ১৯ মে ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এদিন বিদ্রোহীদের কেউই তাঁদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। ২০ মে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই বিদ্রোহী প্রার্থীরা আরো জোরেশোরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফতেপুর ইউনিয়নে বিদ্রোহীরাই নৌকার ভরাডুবির কারণ হতে পারেন বলে অনেকেই মনে করছেন।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, যে যাই বলুক, যত বাধাই আসুক, শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে থাকবেন। এদিকে, বিদ্রোহীদের এমন অনড় মনোভাবে অস্বস্তিতে পড়েছেন দলীয় নেতারা। একই সঙ্গে বিদ্রোহী ইস্যুতে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন আ.লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ফতেপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন আওয়ামী লীগের চার বিদ্রোহী প্রার্থী। বিদ্রোহী এসব প্রার্থীরা হলেন উপজেলা আ.লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান, উপজেলা আ.লীগ নেতা ও প্রবীণ সাংবাদিক নেছার আহমদ, জেলা যুবলীগ নেতা রনজিত চৌধুরী রাজন ও ছাত্রলীগ নেতা ফারুক আহমদ। যদিও উল্লেখিত ব্যক্তিগণ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন কিন্তু প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত। আ.লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান শাহ’র সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন তাঁরা। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাহাব উদ্দিন শাবুল ও জাতীয়পার্টি মনোনীত প্রার্থী জহিরুল ইসলামকেও প্রতিদ্বন্দ্বী রেখে ভোটযুদ্ধে জয়ের ব্যাপারে তাঁরা প্রত্যেকেই আশাবাদি।
এ অবস্থায় ঘরে-বাইরে ৬ প্রার্থীর সাথেই কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হচ্ছেন নৌকার প্রার্থী শামছুজ্জামান শাহ। অনেকের মতে, ঘরের ‘কোন্দল’ই নৌকার বিজয়ের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। এদিকে, নৌকার প্রার্থী শামছুজ্জামানের পাশাপাশি ফতেপুর ইউনিয়নের নৌকা সমর্থক ও ভোটাররা পড়েছেন বেকায়দায়। নৌকা না ব্যক্তি, এ চিন্তায় কাটছে তাদের সময়।
ফতেপুর ইউনিয়নে আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রনজিত চৌধুরী স্থানীয় এক এমপি’র বরাত দিয়ে বলেন, কার্ড বাণিজ্য হয়েছে; তাঁর সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আমারও একই বক্তব্য। আমি বিদ্রোহী প্রার্থী না হলে ধানেরশীষ প্রতীকের প্রার্থী জয়লাভ করবে। তাই জনগণের অনুরোধে নির্বাচন করছি। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মহিবুর রহমান বলেন, আমি জনগণের অনুরোধে নির্বাচন করছি, বিদ্রোহী হিসেবে নয়। জনগণই আমার জয় নিশ্চিত করবেন।
অপর বিদ্রোহী প্রার্থী নেছার আহমদ বলেন, আমার পিতা এই এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ছিলেন। আমি বাবার পথ ধরে জনসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই।
বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুক আহমদ বলেন, আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অন্তরে ধারণ করে এলাকাবাসীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই। এ ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ আমার সাথে আছেন। তারাই আমাকে প্রেরণা ও উৎসাহ দিচ্ছেন। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
আ.লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শামছুজ্জামান শাহ বলেন, ‘আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। নির্বাচনে আমার বিদ্রোহী প্রার্থী নৌকার ভোট নষ্ট করবে। তবুও আমি আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে পারবো বলে আশা করছি। আমি বিদ্রোহী প্রার্থী সম্পর্কে দলের দায়িত্বশীলদেরকে অবগত করেছি’।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, ‘ইউপি নির্বাচনে যারা দলের হয়েও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কাজ করছে এবং আ.লীগের অঙ্গ সংগঠনের যেসব নেতাকর্মী বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দল মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে অবস্থান করছেন তাদের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অবগত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা দল মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষেই কাজ করছি।’