সাত আট বছরের একটি ছেলে। কথাবর্তায়, হাঁটাচলায় আর আচরণে দারুন চৌকস। সে হয় তো সুনামগঞ্জ পৌরবিপণির কোনও একটি চায়ের দোকানে পরিচারকের কাজে ব্যস্ত থাকে সারাদিন। এভাবেই তার শিক্ষাবঞ্চিত শৈশব কেটে যাবে, সকল শহুরে শিক্ষিত মানুষের নাকের ডগায়, চোখের সামনে। এমন শিক্ষাবঞ্চিত শিশু-কিশোরের কোনও পরিসংখ্যান আমরা জানতে পারি না। অথচ সরকার সেই কবে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। সরকারি বাধ্যবাধকতা এই ছেলেটির বেলায় কেন কার্যকর নয়, এর উত্তর জানা নেই। তবে অনুমান করি ছেলেটির বাবা-মা কিংবা অভিভাবকের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, ছেলেটির গতর খাটার টাকা তাদের চাই। শিক্ষানীতির এমন ব্যর্থতা এই দেশে স্বাভাবিক। এবার এই শিক্ষানীতির আর এক ধাপ ইতিবাচক পরিবর্তনের ঘোষণা এলো। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাস্তরকে প্রাথমিক শিক্ষার অধীন করা হবে। যার মূল কথা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাকার্যক্রম চলবে দেশে। খুবই উত্তম ব্যবস্থা, এতে কোনও সন্দেহ নেই। এই প্রশংসনীয় উদ্যোগ দেশে একটি বিপ্লব সৃষ্টি করতে পারে অনায়াসে। কিন্তু যদি ষড়যন্ত্রর মুখে ঘোষিত শিক্ষানীতিটি মুখ থুবড়ে পড়ে।
আমরা ভুলে যাইনি, শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তোলে দেওয়ার পরিকল্পনাকে বানচাল করে দেওয়ার জন্য শিক্ষা বোর্ডের কাগজের গুদামে আগুন লাগানো হয়েছিল। আর জানি এখনও পর্যন্ত বর্তমান প্রাথমিক স্তরেই শিক্ষার্থীর ঝরেপড়া সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা যায়নি। তারপরও ঘোষিত নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন সরকারের পক্ষে যে একেবারে নিষ্কণ্ঠক ও নির্বিঘœ হবে না সেটা বলাই বাহুল্য।
আমরা আশা করবো শতপ্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে সরকার এবারের ঘোষিত শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত করে দেশোন্নয়নের গতিকে অব্যাহত রাখার সংগ্রামে জয়ী হবেন। আর সেই সাথে মনে রাখতে হবে আর্থিক অসচ্ছলতাক্রান্ত অভিভাবকদের আর্থিক সচ্ছলতা অচিরেই নিশ্চিত করতে না পারলে, চায়ের দোকানে কাজ করা ছেলেটির শিক্ষাবঞ্চিত হওয়ার মতো শিক্ষাবঞ্চনায় ভোগবে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী, প্রকারান্তরে ঘোষিত শিক্ষানীতি মুখ থুবড়ে পড়বে এবং প্রতিক্রিয়াশীলরা মনের আনন্দে মুখ টিপে হাসবে।