সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
কেউ সংবিধান বা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে অশালীন বা অশোভন মন্তব্য করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় স¤পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
জাতীয় সংসদ ভবনে বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে মিডিয়া সেন্টারে প্রেস বিফ্রিং এ কথা বলেন তিনি।
বৈঠকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিধান রেখে ‘বৈদেশিক অনুদান স্বেচ্ছাসেবকমূলক কার্যক্রম রেগুলেশন বিল-২০১৬’ চূড়ান্ত করেছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় স¤পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
তিনি বলেন, সংবিধান বা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা যাবে না। কোনো এনজিও সেটা করতে পারবে না। কেউ সংবিধান বা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে অশালীন বা অশোভন মন্তব্য করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তাদের বিরুদ্ধে সরকার চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
বিলে কোনো এনজিও বা এনজিও কর্মকর্তা সংবিধান বা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে অশোভন মন্তব্য করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রাখা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা বলেন, সমালোচনা করা যাবে, তবে গালি-গালাজ করা যাবে না। পার্লামেন্ট সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাকে সম্মান দিতে হবে। মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বললে রাষ্ট্র যায় কোথায়?
এ বিল পাস হলে টিআইবিসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো সংবিধান বা বিচার বিভাগ নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ দিতে পারবে কি না তা জানতে চাইলে সুরঞ্জিত বলেন, টিআইবি আমার কাছে আসছিলো। আমি বলেছিলাম ক্ষমা চাইতে। কিন্তু তারা আর এলো না।
তিনি বলেন, সংসদ নিয়ে মন্তব্য করেন। কিন্তু পুতুল নাচের নাট্যশালা তো বলতে পারেন না। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তাই সংবিধান বা সাংবিধান প্রতিষ্ঠান নিয়ে যা ইচ্ছে তাই মন্তব্য করা যাবে না।
প্রেসব্রিফিংয়ে বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়াকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স¤পর্কে জানতে চাইলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, অরিজিনাল কনস্টিটিউশনের বিরুদ্ধে জাজমেন্ট চলে না। এটা মিমাংসিত ইস্যু। বিষয়টি স¤পূর্ণ রাজনৈতিক। এটা আদালতের কোনো বিষয় না।
তিনি আরো বলেন, হাইকোর্টের বেঞ্চে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে। আশা করি আদালত বিবেচনা করবেন। নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ নিয়ে আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী আরোও অনেক গুণীজন বলেছেন। এটা সমর্থন যোগ্য না। ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা দ্রুত নেয়া হবে বলে আশা করছি।
কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আবদুল মতিন খসরু, বেগম সাহারা খাতুন, মো. শামসুল হক টুকু, তালুকদার মো. ইউনুস, অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউল হক মৃধা ও সফুরা বেগম অংশ নেন।
বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আহ্বায়ক ‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ সাব-কমিটি’ বেগম রেবেকা মমিন ও সাব-কমিটির সদস্য হুইপ মোছা. মাহবুব আরা বেগম এবং বিভিন্ন এনজিও’র প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, এনজিও কার্যক্রম বর্তমানে পরিচালিত হয় ১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালের দুটি অধ্যাদেশ দিয়ে। সামরিক শাসনামলের অধ্যাদেশ দু’টি একত্র করে নতুন আইন করতে বিলটি উত্থাপন করা হয়। পরে তা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
বিলটি উত্থাপনের পর থেকেই এই বিলের একাধিক ধারা নিয়ে আপত্তি জানায় বেসরকারি সংস্থাগুলো। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি। সর্বশেষ বৈঠকে বিলটি পাসের সুপারিশ করে সংসদে প্রতিবেদন উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আগামী সংসদ অধিবেশনে প্রতিবেদন উত্থাপনের পর বিলটি পাস হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।