সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
নতুন করে ভাবিয়ে তোলা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বজ্রপাতের পূর্বাভাস ছয় ঘণ্টা আগে আবহাওয়ার তথ্যে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এছাড়া ‘১০৯৪১’ নম্বরে কল করে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বজ্রপাতের তথ্য পাওয়া যাবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানান, গত ১২ ও ১৩ মে বজ্রপাতে দেশের ২৬ জেলায় ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। কালবৈশাখী ঝড়ে মারা গেছেন আরও ৫ জন।
সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতে ব্যাপক প্রাণহানির মধ্যে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে বজ্রপাত থেকে রক্ষায় বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় জনসাধারণের জন্য পরামর্শ দিয়েছে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে মোবাইল টাওয়ার এবং ধাতব দন্ড থেকে দূরে থাকার পরামর্শও আসে। মোবাইল টাওয়ারের কারণে বেশি বেশি বজ্রপাত ঘটছে- বিশেষজ্ঞদের এমন মতামতের ওপর ভিত্তি করে সে বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
সারাবিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়েছে এবং বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে গেছি, সারা বাংলার মানুষ আতঙ্কিত হয়েছে, সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে।’
বজ্রপাতে নিহতদের পরিবারকে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বিতরণের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা করা হয়েছে। এছাড়া আহতদের সাড়ে ৭ হাজার টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত অর্থ সহায়তা দেওয়া হয় বলে জানান মন্ত্রী।
গত বছরের ২৭ আগস্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে বলে জানান সচিব শাহ কামাল। সেই বার ১৭ জন প্রাণ হারান বলে জানান সচিব শাহ কামাল।
গত ১৫ ও ১৬ মে মন্ত্রণালয়ে দুই দফা সভায় বজ্রপাতের সময় এবং পরবর্তী করণীয় স¤পর্কে বিশেষজ্ঞ মত পাওয়া যায় বলে জানান মন্ত্রী।
বজ্রপাতে করণীয়:
বৃষ্টিপাতের সময় বজ্রপাত হবে কিনা- তা ৬ ঘণ্টা আগে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানা যায় উল্লেখ করে সচিব নিয়মিত আবহাওয়া তথ্য শোনার পরামর্শ দেন সচিব শাহ কামাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, স্থপতি ও বিশেষজ্ঞদের বজ্রপাত নিয়ে বেশকিছু পরামর্শও এসেছে।
১. আকাশে ঘন কালো মেঘ দেখা দিলে বজ্রপাতের আশঙ্কা তৈরি হয়। ৩০-৪৫ মিনিট বজ্রপাত স্থায়ী হয়, এ সময়ে ঘরে অবস্থান করাই শ্রেয়। ২. ঘনকালো মেঘ দেখা দিলে খুব প্রয়োজন হলে রাবারের জুতা পরে বাইরে যাওয়া যেতে পারে। ৩. বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ বা উঁচু স্থানে থাকবেন না। ৪. এ সময়ে ধানক্ষেত বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি হাঁটু গেড়ে, কানে আক্সগুল দিয়ে, মাথা নিচু করে বসে পড়–ন। ৫. যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। টিনের চালা যথা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। ৬. উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক তার বা ধাতব খুঁটি, মোবাইল টাওয়ার থেকে দূরে থাকুন। ৭. বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতর অবস্থান করলে গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ ঘটাবেন না। সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। ৮. বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি বা বারান্দায় থাকবেন না। ৯. বাড়ির জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভেতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন। ১০. মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ক¤িপউটার, ল্যান্ডফোন, টিভি, ফ্রিজসহ সব বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এবং এগুলো বন্ধ রাখুন। ১১. এ সময়ে ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনে প্লাস্টিকের অথবা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। ১২. খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত থাকুন। ১৩. বজ্রপাতের সময় ছাউনি বিহীন নৌকায় মাছ ধরতে যাবেন না, তবে এ সময় নদীতে থাকলে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন। ১৪. বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ি রেলিং, পাইপ ইত্যাদি ¯পর্শ করবেন না। ১৫. প্রতিটি ভবনে বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন।