সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত হলো। এ জন্য অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে শিগগিরিই হস্তান্তর প্রক্রিয়া স¤পন্ন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সচিবালয়ে বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরর সভাকক্ষে জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত, যা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। শিক্ষার অন্যান্য স্তর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী আজ (বুধবার) আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষা প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় চলে গেল। অবিলম্বে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করব। তারা এটা গ্রহণ করে পরিচালনা করবে। এ জন্য আমরা এ বিষয়ে একটি সার-সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাব। তিনি কোনো অনুশাসন দিলে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।’
তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে যে সিদ্ধান্তগুলো প্রয়োজন হবে, সেগুলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় স্থির করবে। কাঠামোটা কেমন হবে, হাইস্কুলগুলো, অষ্টম শ্রেণি চালু হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কী হবে, শিক্ষক সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে, পাঠ্যক্রমের বিষয়গুলোর কী হবে- এ বিষয়গুলোর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো মিলে কাজ করবে।’
‘শিক্ষা জীবনের জন্য আজ একটা ঐতিহাসিক দিন’ মন্তব্য করে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘এত বড় একটা মৌলিক পরিবর্তন আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে কখনও হয়নি। এটা শিক্ষার ইতিহাসে বড় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত।’
এ সিদ্ধান্তের কারণে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা থাকবে কিনা, নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর বেতন কোন মন্ত্রণালয় দেবে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এগুলোর বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আজকের সিদ্ধান্ত এগুলো নয়; ধাপে ধাপে আমার এগোব।’
প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীতের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জিং কাজ উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এটা পারব। প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের ওপর সব চাপ পড়ে যাবে এটা কোনোভাবেই নয়। দুই মন্ত্রণালয় একই, আমরা শিক্ষা পরিবার। আমার শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চয়তা দিচ্ছি আমাদের যা কাজ, দায়িত্ব পড়বে আমরা আন্তরিকতা দিয়ে তা করব। তাদের (গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়) সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাব।’
তিনি বলেন, ‘এ পরিবর্তনের ফলে সার্বিক ক্ষেত্রে একটা পরিবর্তনের প্রয়োজন আসবে। সেগুলো আমাদের নতুন করে সাজাতে হবে।’
এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপ্তিকাল পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে আমরা নিয়ে গেলাম। সামান্য কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাদে সিদ্ধান্তের ব্যাপারটা আজ হয়ে গেল। উত্তরণ পর্বের কাজটি আজ হলো। আসল সিদ্ধান্তটাই আজ নিয়ে নিলাম। আজ একটা ঐতিহাসিক দিন।’
‘নতুন অর্থ বছরের শুরুতেই এটা দৃশ্যমান হয়ে যাবে, দেখা যাবে আমরা আমাদের কার্যক্রমে হাত দিয়েছি’ বলেন মোস্তাফিজুর রহমান।
নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনেক ধরনের সমস্যা আছে জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের সুযোগ আছে তা মাদ্রাসা হোক, স্কুল হোক তারা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় তারা পরামর্শ নেবেন, নির্দেশনা নেবেন। আজ আমরা এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিলাম আশা করি কয়েক দিনের মধ্যেই বাকিটা বাস্তবায়ন করতে পারব।’
সভায় শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনসহ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা উপস্থিত ছিলেন।