মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার একটি চিকিৎসা। যে কোনও দেশ-রাষ্ট্রের প্রধান সম্পদ মানুষ। মানুষ অথবা জনসমষ্টি তখনই একটি সম্পদ হয়ে ওঠে যখন সে জনসমষ্টির সদস্যরা সুস্থ থাকে এবং কাজ করতে পারে। অর্থাৎ উৎপাদনে নিজের অবদান রাখতে পারে। চিকিৎসাবঞ্চিত অসুস্থ মানুষ দেশ-রাষ্ট্র-সমাজের জন্য আপদ স্বরূপ। সে জন্য নাগরিকের চিকিৎসা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র-সরকারের প্রাথমিক পর্যায়ের একটি দায়। সুস্থ নাগরিকের অভাবে রাষ্ট্রের সার্বিক কর্মকান্ড এমনভাবে বিঘিœত হতে বাধ্য যে, শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র অকার্যকর বিবেচিত হতে পারে। সিংহভাগ অসুস্থ মানুষ নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা একটি পাগলামো ছাড়া আর কীছুই নয়। আমাদের দেশে সরকার তৃণমূল পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছেন। ১৭ মে তারিখে দৈনিক সুনামকণ্ঠে লেখা হয়েছেÑ “তৃণমূল জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার সারাদেশে কয়েক হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর পর তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা বদলে গেছে। এখন ঘরে বসেই প্রতিদিন গ্রামীণ রোগীরা ওষুধসহ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। অনেক কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত ডেলিভারিও হচ্ছে।” এই সত্যকে অস্বীকার করার জো নেই। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের এই প্রক্রিয়াটি নির্বিঘœ ও নিষ্কণ্টক নয়। পত্রিকায় শিরোনাশ ছাপা হয়েছেÑ “সেবা কার্যক্রম বিঘিœত : ১২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক বিদ্যুৎবিহীন।” বিদ্যুৎবিহীন হওয়ার ফলে ক্লিনিকগুলোতে ভ্যাকসিনসহ ইপিআই সামগ্রী সংরক্ষণ করা এবং সিএইচপিসিদেরকে সরকার প্রদত্ত ল্যাপটপ চালানো সম্ভব হয় না। একদিকে স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যদিকে উপর মহলে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রদান বিঘিœত হয়।
গতবছরের অক্টোবরে সুনামগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার বরাবরে ক্লিনিকগুলো বিদ্যুৎসংযোগের আবেদন করা হলেও এখনও পর্যন্ত রহস্যজনক কারণে সংযোগসংক্রান্ত কাজে পল্লীবিদ্যুতের চেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। জেলার মোট কমিউনিটি ক্লিনিকের অর্ধেকেরও বেশি ক্লিনিকে বিদ্যুসংযোগের অভাবে রোগীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, যা কীছুতেই কাম্য হতে পারে না।
তাছাড়া গ্রামীণ জনপদের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর অধিকাংশ স্থাপনা বর্ষায় সড়কপথ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কারণ ক্লিনিকগুলো সড়কের পাশে হাওরের খোলা মাঠে তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু সড়কের সঙ্গে সংযোগসড়ক আবুড়া (বর্ষায় জলের তলে তলিয়ে যায় না এমন) করে তৈরি করা হয়নি। ফলে বর্ষায় ক্লিনিকগুলো সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়ে।
দেশ নি¤œমধ্যআয়ের দেশে ইতোমধ্যে রূপান্তরিত হয়েছে। এইরূপ উন্নয়নের পর তৃণমূল পর্যায়ে অর্থাৎ গ্রামীণ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা না গেলে দেশের এই উন্নয়ন অন্তঃসারশূন্য উন্নয়ন বলে বিবেচিত হওয়াই সঙ্গত। আশা করি অচিরেই ক্লিনিকগুলোতে বিদ্যুৎসংযোগ প্রদান ও সড়কবিচ্ছিন্ন ক্লিনিকগুলোতে সড়কসংযোগ করে জনস্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরিভিত্তিতে তৎপর হবেন। মনে রাখতে হবে জনস্বাস্থ্য একটি জাতির উন্নয়নকে নিশ্চিত করার অবিকল্প নিয়ামক।