বিশেষ প্রতিনিধি ::
ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের বরখাস্তের কোন ক্ষমতাই নেই। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক এবং স্থানীয় সরকার পরিচালকের পর্যবেক্ষণেই থাকবেন ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর যারা পছন্দের লোককে উদ্যোক্তা করার স্বপ্ন দেখছিলেন তাদের সেই স্বপ্নপূরণের কোন সম্ভাবনা নেই। বরং এটুআই প্রকল্পের নির্দেশের আলোকে চেয়ারম্যানরা উদ্যোক্তাদের বহাল রাখার বিষয়ে নিজেদের শপথের দিনই অঙ্গীকারনামা সম্পাদন করবেন।
উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নতুন নির্বাচিত কিছু চেয়ারম্যান দায়িত্বরত অনেক উদ্যোক্তাদের বাতিল করে পছন্দের উদ্যোক্তা খুঁজছেন। উদ্যোক্তাদের তারা সাবেক চেয়ারম্যানের লোক ভেবে নিজেদের লোককে দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানরা উদ্যোক্তাদের বাতিল করার জন্য নানা ফন্দি আঁটছেন। প্রশাসনিকভাবে নীতিমালা অনুসারে তাদের বাতিল না করতে পারলে ‘মিথ্যা অজুহাত’ দেখিয়ে হলেও কিছু কিছু চেয়ারম্যান উদ্যোক্তদের বাতিল করতে চান বলে জানা গেছে। এতে উদ্যোক্তাদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, ডিজিটাল সেন্টারের নীতিমালা অনুযায়ী কোন চেয়ারম্যানই তাদের নিয়োগ বাতিল করার ক্ষমতা রাখেন না। বরং শপথ নিয়ে দায়িত্ব নেওয়ার দিনই সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের বাধ্য হয়ে উদ্যোক্তাদের বহাল রাখতে চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। এই চুক্তি সম্পাদন করাবেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক এবং স্থানীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট পরিচালক। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও ডিডি এলজির তত্ত্বাবধানে থাকবেন উদ্যোক্তারা। তারা প্রতি তিনমাস অন্তর অন্তর উদ্যোক্তাদের কাজের মূল্যায়ন করবেন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ৮৮টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি বাদে সবগুলোর কার্যক্রমই সন্তোষজনক। সদরের সকল ইউনিয়নের উদ্যোক্তারা নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে প্রশাসনেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাদের কার্যক্রমে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা সন্তুষ্ট।
জানা গেছে, চলতি বছরের ২ মার্চ স্থানীয় সরকার, পল্লী ইউনিয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সচিবালয়ে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের সাথে ইউনিয়ন পরিষদের চুক্তি সম্পাদন বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় স্থানীয় সরকার সচিব আব্দুল মালেক সভাপতিত্ব করেন। সভায় বাংলাদেশের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের কার্যক্রমের সন্তোষ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্টরা জানান পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন ডিজিটাল সেন্টারের কার্যক্রম আশানুরূপ নয় বলে মন্তব্য করেন। সভায় নতুন চেয়ারম্যানদের শপথ অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক ও ডিডি এলজিকে ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে তাদের বহাল রাখার বিষয়ে চুক্তি সম্পাদন করা হবে। ইতোমধ্যে উদ্যোক্তাদের বহাল রাখার বিষয়ে নির্দেশনা সম্বলিত অঙ্গীকারনামার খসড়া এটুআই প্রকল্প থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, নির্বাচিত হবার পর বেশ কিছু চেয়ারম্যান উদ্যোক্তাদের বাতিল করে নতুন উদ্যোক্তা নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এমনটি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সম্পদকেও তারা নিজেদের সম্পদ হিসেবে ভাবতে শুরু করেছেন। সরকারের ডিজিটাল সেন্টারের নীতিমালা না জেনেই তারা উদ্যোক্তা বদলের চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দোয়ারাবাজার উপজেলার একটি ইউনিয়নের উদ্যোক্তা জানান, আমাদের পরিশ্রমে এবং জেলা প্রশাসন ও এটুআই প্রকল্পের সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ, সহায়তায় একটি ডিজিটাল সেন্টারে রূপান্তর সম্ভব হয়েছে। শুরুর দিকে আমরা কোন সুযোগ-সুবিধাই পাইনি। এখন সরকারের প্রচেষ্টায় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আমাদের শ্রম-ঘামকে মূল্যায়ন না করে কিছু চেয়ারম্যান এখন আমাদের বাতিল করে পছন্দের অদক্ষ লোকদের বসানোর চেষ্টা করছেন।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকারের পরিচালক দেবজিৎ সিংহ বলেন, নতুন নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের বদলে পছন্দের উদ্যোক্তা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এটা তাঁদের এখতিয়ারও নয়। ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে শপথগ্রহণের অনুষ্ঠানের দিন নির্বাচিত চেয়ারম্যানদেরকে উদ্যোক্তাদের বহাল রাখার বিষয়ে সরকার প্রদত্ত চুক্তিনামা সম্পাদন করতে হবে।