রাজন চন্দ ::
চিকিৎসক সংকটের কারণে তাহিরপুর উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন ডাক্তার চিকিৎসা দিচ্ছেন। কিন্তু তাঁকেও নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় প্রতিদিন রোগীরা চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তাছাড়া উপজেলার ৪টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোনোটিতেই ডাক্তার নেই। এনিয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন তাহিরপুরবাসী।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে পদগুলো কখনো পূরণ হয়নি। একাধিকবার ৫ থেকে ৬ জন চিকিৎসক তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগ দিলেও দু’একজনের বেশি কর্মস্থলে যোগদান করেন নি। তারা সবাই নিয়োগ বাতিল করে অন্যত্র বদলি হয়ে যান। গত মার্চ মাসে তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ জন চিকিৎসক কর্মরত ছিলেন। তাদের মধ্যে ৩ জন মার্চ মাসের শেষ দিকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখ ডাক্তার ইকবাল হোসেন দেশের বাইরে শান্তি মিশনে চলে যান। ফলে গত মাসের ১৭ তারিখ থেকেই তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডাক্তার শূন্য হয়ে পড়ে। সেই সাথে বালিজুরী, উত্তর শ্রীপুর, কাউকান্দি, বাদাঘাটসহ ৪টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে কোনটিতে ডাক্তার নেই। ডাক্তার সংকটের কারণে উপজেলার ৩ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠী চিকিৎসা সেবা নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন।
জানা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অস্থায়ীভাবে সংযুক্ত ডাক্তার মির্জা রিয়াদ হাসান স্থায়ী নিয়োগ না পাওয়ায় বাড়িতে আসা-যাওয়া করে নিজ খেয়াল খুশিমত অফিস করছেন। ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সাখাওয়াৎ হোসেন তিনি মাসে একাবার এসে অফিসিয়াল কাগজ-পত্র সই করে চলে যান। মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট মহিউদ্দিন বিপ্লব, বেলায়েত হোসেন রুমী, মীর শাহানুর জুমন তাহিরপুর বাজারে প্রাইভেট বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। বেলা দু’টার পর থেকে তারা সবাই চলে আসেন নিজ নিজ চেম্বারে।
এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে জনবল সংকট। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের দু’টি পদ থাকলেও বর্তমানে দু’টি পদই শূন্য। নার্সের ১০টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ৩ জন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এক্স-রে) পদটি শূন্য থাকায় হাসপাতালে থাকা এক্স-রে মেশিন, ইসিজি মেশিনসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় কমপ্লেক্সে আসা শত শত রোগীদের চিকিৎসার ভরসা মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট ও ওয়ার্ড বয়রা। তাছাড়া উপজেলা সদর থেকে যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে রয়েছেন সে ক্ষেত্রে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক না থাকায় তারা গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তার ও কবিরাজের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন।
উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের মন্দিয়াতা গ্রামের আব্দুল বারিক জানান, উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার না থাকায় তিনি ও তার গ্রামের অধিকাংশ লোকজন দীর্ঘদিন ধরে সামান্য রোগ ভোগে স্থানীয় শ্রীপুর বাজারের ফার্মেসি থেকে মুখে বলে ঔষধ নিয়ে থাকেন। একই অবস্থার কথা জানালেন কামারকান্দি গ্রামের আলী আকবর। তিনিও জানান কাউকান্দি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার না থাকায় গ্রামের সাধারণ লোকজন রোগে আক্রান্ত হলে গ্রাম্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
জন্ডিসে আক্রান্ত মধ্য তাহিরপুর গ্রামের মাসুদ মিয়া জানান, তিনি চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলেন কিন্তু ডাক্তার না থাকায় তিনি বর্তমানে গ্রাম্য কবিরাজের মাধ্যমে জন্ডিসের চিকিৎসা করাচ্ছেন।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বলেন, চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে অনেক রোগী আসেন কিন্তু চিকিৎসক সংকটের কারণে অনেকেই চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান।
মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মির্জা রিয়াদ হাসান বলেন, আমি একাই তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছি। আমার দ্বারা যতটুকু সম্ভব আমি ততটুকু চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৯ পদের মধ্যে ৯টি শূন্য। আমিও আছি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে। অফিসিয়াল কাজকর্ম করতে গিয়ে আমি চিকিৎসা সেবা দেয়ার সময় সুযোগ পাইনি।