১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল। কিন্তু গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের শান্তিপূর্ণ নীতিকে সেদিন পশ্চিমা পাকিস্তানিরা পদদলিত করে, পূর্বপাকিস্তানের উপর চালিয়েছিল সশস্ত্র আক্রমণ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে সূচিত সে আক্রমণ প্রকারান্তরে পাকিস্তানের পূর্বাংশ পূর্বপাকিস্তানকে রাজনীতিবিজ্ঞানের সংজ্ঞানুসারে প্রকৃতপ্রস্তাবে একটি সার্বভৌম ভূ-খন্ডে পরিবর্তিত করে। পূর্বপাকিস্তান কার্যত আর পাকিস্তানের অংশ থাকে না, সেটি বিশ্বমানচিত্রে নতুন একটি জাতিরাষ্ট্ররূপে আবির্ভূত হয়। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের ধকল হজম করে বিজয় ছিনিয়ে নেয়। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের অংশ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এদেশীয় বিরোধীরা পরবর্তীতে ১৯৭৫-এ রাজনীতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে রাষ্ট্রক্ষমতায় ফের ফিরে আসে। গণতান্ত্রিক রাজনীতি শুরু করে এবং ভুলে যায় স্বৈরাচারী কায়দায় অন্যায় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তারা ক্ষমতা দখল করেছিল, যা অগণতান্ত্রিক ও চূড়ান্ত স্বৈরাচারী রাজনীতিক কর্মকান্ড। ভুলে যায় ১৯৭০ সালের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফল মেনে না নিয়ে তারা রাষ্ট্রের পূর্বাংশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল। আর ভুলে যায় সেই যুদ্ধ করে তারা মানবতাবিরোধী অপরাধে নিজেকে জড়িয়ে ছিল এবং নিজেরা হয়ে উঠেছিল যুদ্ধাপরাধী। বর্তমান সরকার সেই সব যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উত্থাপন করে বিচার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। একান্ত বাস্তব রাজনীতিক পরিস্থিতির কারণে এইসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এতোদিন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। জনগণের প্রত্যাশা ছিল, কোনো না কোনো জনকল্যাণধর্মী দেশপ্রেমিক সরকার এইসব মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে এবং বিচার করার মাধ্যমে দীর্ঘ দিন ধরে বিচার করতে না পারার কলঙ্ক জাতির ললাট থেকে মুছে দেবেন।
গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি শিরোনাম ছিলোÑ ‘ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু’। সংবাদ বিবরণীতে বলা হয়েছেÑ ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থা।’ গৃহীত এই কার্যক্রম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজকে আরো সম্প্রসারিত ও ত্বরান্বিত করবে বলে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। আমরা বিচার প্রত্যাশী সাধারণ মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে সরকারকে এই মহতি পদক্ষেপের জন্য অভিনন্দন জানাই।