1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

কোরআন ও বিজ্ঞানে মে’রাজ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩ মে, ২০১৬

মাওলানা লুৎফুর রহমান ::
মহান আল্লাহ সুরাহ ইয়াসিনে বিশ্বগ্রন্থ আল কুরআনকে ‘বিজ্ঞানময় কুরআন’ বলে শপথ করেন। অর্থাৎ সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল হচ্ছে আল কুরআন। বর্তমান বিজ্ঞানীদের গবেষণায় তা শতভাগ প্রমাণিত হয়েছে। মে’রাজ পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বাধিক আশ্চর্যজনক ঘটনা। মে’রাজ শব্দের অর্থ সিঁড়ি, ঊর্ধ্বগমন, আরোহণ। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নবুওত লাভের দ্বাদশ বর্ষে ৫২ বছর বয়সে ২৬ রজব দিবাগত রাত পবিত্র কাবাঘর হতে মসজিদে আসকা ভ্রমণ এবং সেখান থেকে নবী রাসুলগণের সঙ্গে সাক্ষাত করে সপ্তম আকাশের সিদরাতুল মুনতাহা (সীমান্তের বরই বৃক্ষ) হয়ে মহান আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের মাধ্যমে সৃষ্টির অনন্ত রহস্য, জান্নাত-জাহান্নাম, স্বশরীরে, স্বচক্ষে অবলোকন করার ঘটনাকে ইসলামে পরিভাষায় মে’রাজ বলে।
বিশ্বগ্রন্থ আল কুরআনের সুরাহ বাণী ইসরাইলে মহান আল্লাহ এ সম্পর্কে ইরশাদ করেন ‘পরম পবিত্র তিনি স্বীয় বান্দাকে (রাসুলকে) রাতে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদ হারাম থেকে সমজিদে আকসা পর্যন্ত যার চতুর্দিকে আমি অসংখ্য কল্যাণ দান করেছি। যাতে আমি তাঁকে আমার মহাকুদরতে নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয় তিনি মহান শ্রোতা ও দ্রষ্টা।
তফসিরে ইবনে কাসিরে আছে হযরত সাদ্দাদ ইবনে তাউস (রা.) বর্ণনা করেন, মে’রাজের রাত্রি শেষে ভোরবেলায় পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্র্রেষ্ঠ উম্মত হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রা.), বিশ্বনবী (স.) এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন- “ইয়া রাসুলাল্লাহ রাত্রি বেলা আপনি কোথায় গিয়েছিলেন? আমি আপনাকে সম্ভাব্য সকল স্থানেই খুঁজেছি।” জবাবে বিশ্বনবী (সা.) মেরাজের সমস্ত ঘটনা জানালেন।
বিশ্বনবীর (সা.)-এর চাচাতো বোন হযরত উম্মেহানি (রা.) বলেন, “মে’রাজের রাতে বিশ্বনবী আমার গৃহে অবস্থান করেছিলেন। পরে আমি রাসুলকে না পেয়ে চিন্তিত ছিলাম যে, শত্রুরা কোন ষড়যন্ত্র করছে কিনা। ভোর বেলায় বিশ্বনবী নিজেই মে’রাজের ঘটনা বর্ণনা করেন।” এ সমস্ত বর্ণনা থেকে বিশ্বনবীর (সা.) স্বশরীরে সংঘটিত মে’রাজের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়।
অতীত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল মানুষ স্থূল দেহ নিয়ে মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ভেদ করে মহাশূন্যে ভ্রমণ করা অসম্ভব। যেহেতু মানুষও অন্যান্য স্থলচর প্রাণীর ফুসফুস বায়ুমন্ডলের উপযোগী। আর বায়ুশূন্য জলাশয়ই জলজপ্রাণির শ্বাস-প্রশ্বাসের উপযোগী। মানুষের ফুসফুসকে বায়ু ও বায়ুশূন্য উভয় ক্ষেত্রের জন্য উপযোগী করার চিন্তা-ভাবনা করে সন্ধান লাভ করেন যে, মে’রাজের সূচনাতেই বিশ্বনবীর বক্ষবিধারণ (সিনাচাক) করে তাঁকে বায়ু ও বায়ুশূন্য উভয়ক্ষেত্রে ঊর্ধ্ব ভ্রমণের উপযোগী করা হয়। আধুনিক গতি বিজ্ঞান (উুহধসরপ) বলছে কোন বস্তুকে পৃথিবী থেকে নির্দিষ্ট বেগে ঊর্ধ্বলোকে ছুঁড়ে দিলে তা মধ্যাকর্ষণ শক্তি ভেদ করে মহাশূন্যে চলে যেতে সক্ষম হবে। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় যাকে (ঊংপধঢ়ব ঠবষড়পরঃু) বলে। ঠড়ুধমবৎ, ংযঁঃঃষব, উরংপড়াবৎু প্রভৃতি মহাশূন্য যান প্রমাণ করেছে দ্রুতগতিতে মহাশূন্যে ভ্রমণ সম্ভব। বিজ্ঞানীগণ আবিষ্কার করেন সিজিয়াম গ্যাসের মধ্যদিয়ে যদি আলোর পাল্সকে অত্যধিক উজ্জ্বলতার সঙ্গে প্রেরণ করা হয় তবে তার গতি হয় আলোর গতির চেয়েও ৩১০ গুণ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির প্রিন্সটনের এন,ই,সি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানী লিজুওয়াং, আলেকজান্ডার ফুজমিচ ও আর্থার ডুগারিউ এটা প্রমাণ করেছেন যে আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল বা ৩ লক্ষ কিলোমিটার হলে সিজিয়াম গ্যাস বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করলে তার গতি হবে প্রতি সেকেন্ডে সাড়ে ৫ কোটি মাইল বা ৯ কোটি কিলোমিটার। বিশ্বনবীর হাদিসে আছে প্রথম আসমান (আকাশ) জমিন থেকে ৫শত বছরের রাস্তার দূরত্বের সমান। এভাবে জমিন থেকে প্রথম আসমান এবং তার পুরুত্বের দূরত্ব হবে ১ হাজার বছরের রাস্তার দূরত্বের সমান। সুতরাং সাত আসমানের (আকাশের) উপর স্থাপিত সিদরাতুল মুনতাহার দূরত্ব হবে ৭ হাজার বছরের রাস্তার দূরত্বের সমান বা সাড়ে ৬ কোটি কিলোমিটার দূরত্বের সমান। স্বাভাবিকভাবে আরবের মানুষ সফরে প্রতিদিন ১৬ মাইল বা ২৫.৭৬ কিলোমিটার হাঁটতেন। সেই হিসেবে এক বছরের দূরত্ব হবে ৯,২৭৩.৬০ কিলোমিটার। সুতরাং ৭ হাজার বছরের রাস্তার দূরত্ব হবে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি কিলোমিটার। তাই সিদরাতুল মুনতাহা (সীমান্তের বরই বৃক্ষ) জমিন থেকে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। মেরাজের রাত্রে বিশ্বনবী মসজিদের আকসা থেকে সপ্তম আকাশে বোরাকের পিঠে চড়ে জিবরিলে আমিনসহ সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছতে সময় লাগে মাত্র ৩.৬১ মিনিট। কারণ বারকুন শব্দ মূল থেকে বোরাক-এর উৎপত্তি। যার গতি প্রতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার। সিদরাতুল মুনতাহা থেকে একাকি রফরফ নামক বাহনে চড়ে আরশে আজিমের নিকট পৌঁছে মহান আল্লাহর সাথে সালাম কালাম করেন। রফরফের প্রতি সেকেন্ডে ৯ কোটি কিলোমিটার। হযরত জিবরিলে আমিন (আ.) সিদরাতুল মুনতাহা থেকে এ পৃথিবীতে বিশেষ মুহূতে তিন বার আগমন করে তার কাজের সফল হন।
একবার নবী ইব্রাহীম (আ.) প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার জন্য ছুরি হাতে নিয়ে আল্লাহু আকবার বলে ফেলার পর মহান আল্লাহর নির্দেশ পাওয়া মাত্র ৬ শত নূরের পাখা ব্যবহার করে নবী ইসমাইল (আ.) এর গলায় ছুরি লাগার আগেই পৌঁছে তাঁকে রক্ষা করেন। দ্বিতীয়বার নবী হযরত ইউসুফ (আ.)কে তার ভাইগণ কুয়ার মধ্যে ফেলে দিলে পরে কুয়ার নিচে পৌঁছার আগে মহান আল্লাহর নির্দেশ পাওয়া মাত্র ৬শত নূরের পাখা ব্যবহার করে সম্ভবত সিজিয়াম গ্যাসের গতিতে এসে পৌঁছে তাকে পানিতে পড়ার আগে রক্ষা করেন। তৃতীয়বার বিশ্বনবীকে তায়েফের মাঠে কাফেরগণের পাথরের আঘাতে ৭০টি জখমপ্রাপ্ত হয়ে বেহুশ হয়ে যান। তাঁর পা মোবারক থেকে রক্ত বের হয়ে মাটিতে পড়ার সময় মহান আল্লাহর নির্দেশে রক্ত মাটিতে পড়া থেকে রক্ষা করার জন্য পৃথিবীতে এসে পৌঁছে রক্তের ফোটাকে হেফাজত করেন। এ তিনবারের প্রতিবারে জিবরিলে আমিন পৃথিবীতে আসতে সময় লেগেছে মাত্র ০.৭২ সেকেন্ড বা পৌণে এক সেকেন্ড। মেরাজের ঘটনা থিয়রিকে অবলম্বন করে ১৯৬১ সালের ১২ মার্চ ইউরি গ্যাগারিন সর্বপ্রথম রকেটে চড়ে আকাশে ভ্রমণ করেন।
১৯৬৯ সালের ২১ জুলাই আমেরিকার নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স রকেটে চড়ে চাঁদে অবতরণ করে পাথরের নুড়ি নিয়ে আসেন। বিশ্বগ্রন্থ আলকোরআনের দেড়হাজার বছর আগের মেরাজের ঘটনাকে বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীগণ গবেষণা করে পরম সত্যের প্রমাণ পেয়েছেন। অতএব বিশ্বগ্রন্থ আল কোরআনে বর্ণিত অতীত ভবিষ্যত সকল তথ্য এবং বিধি-বিধান চিরসত্য আল্লাহর বাণী। কোরআনে বর্ণিত ইসলাম ধর্ম সত্য। আল কোরআন অবতীর্ণ হবার অতীতের সকল সঠিক ধর্মগ্রন্থগুলি সকল তথ্য এবং বিধি-বিধান চিরতরে রহিত হয়ে যায়। আমাদের সংবিধানে যেমন সংশোধনী আনার পর পূর্বের নিয়ম-কানুন সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকলেও কার্যকর হয় না। সংশোধনীতে আনা বিষয়টি কার্যকর হয়। তেমনি মহান আল্লাহর সর্বশেষ নবীকে দেয়া সর্বশেষ সংশোধনী আল-কোরআন কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ, কার্যকর ও সচল থাকবে। বিশ্বনবীর পর আর কোন নবী রাসুলের প্রয়োজন নেই। আল-কোরআনের পর আর কোন ধর্মগ্রন্থের প্রয়োজন নেই। সুতরাং শান্তিপ্রিয় বিশ্ববাসী সকল ধর্মাবলম্বীকে আল কোরআন তিলাওয়াত করে তার মর্ম বুঝার আহ্বান জানাই। পবিত্র মেরাজের রজনী অত্যন্ত বরকতপূর্ণ বিধায় ওই রাত্রে নফল ইবাদত বন্দেগী করলে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব হবে।
[লেখক: অ্যাডভোকেট মাওলানা লুৎফুর রহমান ও প্রিন্সিপাল, লুৎফিয়া হাবীবিয়া আজীমাবাদ মাদরাসা, বাউসা, ছাতক, সুনামগঞ্জ।]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com