সাইফ উল্লাহ ::
জামালগঞ্জ উপজেলায় উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে শিশুশ্রম। বিভিন্ন হোটেল, মুদি দোকান, ওয়ার্কশপ, রিকশা, ভ্যানসহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রম বৃদ্ধি পেয়েছে।
শনিবার বিকেলে কথা হয় শিশুশ্রমিক মো. আবুল হাসান (১২)-এর সঙ্গে। সে উপজেলা সদরে রিকশা চালাচ্ছিলো। হাসান জানায়, আমি ১ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেছি। আমরা দুই ভাই, ছয় বোন নিয়ে পরিবারে লোক সংখ্যা ১০ জন। আমার বাবা দিনমজুর; দিনে আনে দিনে খায়। মাঝে মধ্যে উপোষ থাকতে হয়। তাই পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে রিকশা চালাচ্ছি। প্রতিদিন ৩ শতাধিক টাকা উপার্জন করতে পারে বলে হাসান জানায়।
ফেনারবাঁক ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত সান্ডু মিয়ার ছেলে হোটেল শ্রমিক মো. আহাদ নুর (১১)। লক্ষ্মীপুর বাজারের একটি হোটেলে সে কাজ করে। সে বলে, বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার স্কুলে যাওয়া হয় না। ছোট ভাই-বোন নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেছি। মা অন্যের বাড়ি কাজ করে আমাদের ভাই-বোনদের খাবার যোগাড় করতেন। হঠাৎ করে একদিন দেখা হয় লক্ষ্মীপুর বাজারের হোটেল মালিক ইউসুফ আলীর সঙ্গে। তিনি আমাকে হোটেলে কাজ করার জন্য বলেন। প্রথম তিন মাস পেটে-ভাতে কাজ করি। বর্তমানে সে ১ হাজার ৫শত টাকা বেতন পায় বলে হাসায়। সে আরও জানায়, আমার ছোটভাই ওয়াব নুর (৯) রেস্টুরেন্টে কাজ করে ১ হাজার টাকা বেতনে। আমার মা-সহ পরিবারের লোকসংখ্যা ৫ জন। টাকার অভাবে ছোটভাই-বোনদের পড়া লেখা করাতে পারিনি।
গজারিয়া বাজারের শিশুশ্রমিক লিটু মিয়া (১৪) বলে, আমরা গরিব মানুষ কি ভাবে পড়া লেখা করি। ভাত খাব নাকি পড়া লেখা করব। পড়া লেখা করলে ভাত খাব কি করে। কাজ ছাড়া টাকা পাব কোথায়? আমি ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি আমার বাবার শরীরিক অসুস্থতার কারণে আমি পড়া লেখা বাদ দিয়ে ফেরি দোকান দিয়ে কোনভাবে জীবন যাপন করছি। আমাদের পরিবারের লোক সংখ্যা ৬জন। সামান্য কিছু পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করি তাও আবার গ্রামীণ ব্যাংকে কিস্তি দিতে হয় প্রতি সপ্তাহে।
স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করছিল রুহেল মিয়া (১০)। সে বলে, সারাদিন লোহা-লক্কর নিয়ে থাকতে হয়। গায়ে-গতরে অনেক খাটতে হয়। কিন্তু শ্রম অনুযায়ী মজুরি পাওয়া যায় না। সে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করে বলে জানায়।