চয়ন কান্তি দাস ::
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির প্রবল তোড়ে ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ও সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের মধ্যবর্তী ধানকুনিয়া ফসলরক্ষা বাঁধটি ভেঙে গিয়ে ওই হাওরে বোরো জমির পাকা ও আধপাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল সোমবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে ওই বাঁধটি ভেঙে গিয়ে হাওরে পানি ঢুকে পড়ে। এ অবস্থায় কৃষকেরা জমির পাকা ও আধপাকা ধান কেটে নিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ও সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের মধ্যবর্তী ধানকুনিয়া হাওরে এবার বোরো মৌসুমে এক হাজার ৫০০হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫০হেক্টর বোরো জমির ধান কর্তন অবশিষ্ট রয়েছে। সোমবার বিকেলে ওই বাঁধটি ভেঙে গিয়ে হাওরে পানি ঢুকলেও স্থানীয় কৃষকেরা জমির পাকা ও আধপাকা ধান কেটে নিচ্ছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ধানকুনিয়া ফসলরক্ষা বাঁধটির ভাঙা বন্ধকরণ ও মেরামত কাজের জন্য দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই হাওরের একটি অংশের প্রকল্প চেয়ারম্যান ছিলেন সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আশাব উদ্দিন ও অন্য অংশটির প্রকল্প চেয়ারম্যান ছিলেন সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো.হাফিজ উদ্দিন।
স্থানীয় এলাকার কয়েকজন কৃষকেরা জানান, বাঁধটির কাজ সঠিকভাবে করা হয়নি। বাঁধের নিচের অংশ থেকে মাটি উত্তোলন করে বাঁধটির ওপর ফেলায় শুরু থেকেই বাঁধটি ঝুঁকির মুখে ছিল। যেনতেন ভাবে ফসলরক্ষা বাঁধটির কাজ করায় সামান্য পানির ধাক্কাতেই ওই বাঁধটি ভেঙে গিয়ে ধানকুনিয়া হাওরে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট পিআইসি কমিটির লোকজনদের সীমাহীন গাফিলতির কারণেই এই বাঁধটি ভেঙে গেছে।
সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল বারী চৌধুরী বাচ্চু বলেন, বাঁধের কাজ হেরফের হয়েছে। সঠিকভাবে এই বাঁধটির কাজ করলে ধানকুনিয়া হাওরের ফসলডুবির ঘটনা ঘটতোনা। এই হাওরের বেশির ভাগ বোরো জমির ধানই কর্তন করা বাকি রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ক্ষয়ক্ষতির যে পরিমাণ জানানো হয় তা মনগড়া ও বানানো। ওই অফিসের কর্মকর্তারা মাঠে না গিয়ে তাদের ইচ্ছে মতো তথ্য পরিবেশন করে থাকেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সুদৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শোয়েব আহমেদ বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির চাপ আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় এখন সব হাওরেই পানি ঢুকে পড়ছে। ধানকুনিয়া হাওরে পানি ঢুকলেও কৃষকেরা দুটি রিপার যন্ত্র দিয়ে ওই হাওরের ধান কাটছেন। তাই তাৎক্ষণিকভাবে ধানকুনিয়া হাওরে জমির ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব নয়।