আগামী ৫ মে থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান চাল সংগ্রহ করার ঘোষণা দিয়েছেন। সংগ্রহ অভিযান চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতি কেজি ধানের ২৩ টাকা ও প্রতি কেজি চালের ৩২ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেনে রাখা ভালো, এবার কেজি প্রতি ধান ও চালের উৎপাদনে খরচ হয়েছে যথাক্রমে ২০ টাকা ৭০ পয়সা ও ২৯ টাকা। অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় এবার অধিক পরিমাণে ধান সংগ্রহ করতে সদিচ্ছা প্রকাশ করেছেন সরকার। খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন- এবার সাত লাখ মেট্রিক টন ধান ও ছয় লাখ মেট্রিক টন চাল, সাকুল্যে ১৩ লাখ মেট্রিক টন ধান-চাল সংগ্রহ করা হবে, সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে। হিসেব মতো ধানের ও চালের বাজার দর হবে মণপ্রতি যথাক্রমে ৯২০ টাকা ও ১২৮০ টাকা। কিন্তু প্রশ্ন হলো প্রতি বছরের মতো এবারও ধান-চাল ক্রয়ের প্রক্রিয়ায় শুভঙ্করের ফাঁকির শিকার হবে না তো কৃষক?
সরকার নির্ধারিত বিধি-বিধান বা প্রচলিত নিয়ম-কানুন অনুসারে এ দেশে কোনও কাজই হয় না। সেটা যে কোনও ধরণের কাজ, যেমন রাজনীতিক, আর্থনীতিক, সাংস্কৃতিক কিংবা প্রশাসনিক, বৈচারিক সে যা কিছু হোক। অনিয়ম-দুর্নীতির আক্রমণ-সংক্রমণের কোনও বাছবিচার নেই, সর্বত্র তার অপ্রতিহত প্রবেশাধিকার ও দখলদারিত্ব। সর্বত্র সর্বাবস্থায় জবাবদিহিতার অকার্যকারতা ও প্রতিকারহীনতার সম্মিলিত বন্যায় হাওরডুবির মতো ডুবে আছে দেশ-রাষ্ট্র-সমাজ। এবার আশা করি, সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল ক্রয়ের কার্যক্রম অনিয়মের কিংবা দুর্নীতির থাবা বিস্তৃত হবে না। অর্থাৎ ক্রেতা সরকার ও বিক্রেতা কৃষকের মধ্যখানে মধ্যসত্ত্বভোগী ফড়িয়ার আবির্ভাব প্রতিহত করা হবে। অন্যথায় কৃষকের প্রাপ্তব্য লাভের গুড় বরাবরের মতো পিপড়ায় খেয়ে যাবে, কৃষক আবার কেবল প্রতারিত হবে, প্রতিকারকরণে কেউ এগিয়ে আসবে না।
এবার সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় সবকটি হাওরই শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কবলে পড়ে কমবেশি ফসলহানির সম্মুখীন হয়েছে, বেশিরভাগ হাওর অকাল বন্যায় তলিয়ে গেছে। এইরূপ ব্যাপক ফসলহানির প্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জের কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান-চাল ক্রয়ের সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা কীভাবে সফলতা লাভ করবে মোটেও বোধগম্য নয়। কৃষকের কাছে ধান-চালই নেই, তো কী ক্রয় করা হবে? বরং বিকল্প কোনও পদ্ধতিতে বিশেষ করে সুনামগঞ্জের কৃষকদেরকে বাঁচানোর কর্মসূচি গ্রহণ করা আশু কর্তব্য। সে ব্যাপারে সুশীল সমাজসহ, সরকার-প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের তৎপর হওয়া বাঞ্ছনীয়। আমরা আশা করবো সরকারি দলীয় ও বিরোধী দলীয় নেতৃবর্গ এবং জেলা প্রশাসন আসন্ন বিপর্যয় বোধে বিশেষভাবে কর্মতৎপর হবেন। সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় সুনামগঞ্জকে বাঁচানোর কাজে নামতে হবে।