1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ভাটি বাংলার কৃষক ও কৃষি

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৬

মনোরঞ্জন তালুকদার ::
ভাটি অঞ্চলের জন্য একটি প্রবাদ বাক্য ছিল গোয়াল ভরা গরু আর গোলা ভরা ধান। প্রতিটি গৃহস্থ কৃষকের ঘরে ঘরে অনেকগুলো গরু এবং প্রচুর পরিমাণ গোলায় ধান থাকত। গরু দিয়ে খেতের জমির চাষ, ধান মাড়াই, ক্ষেতের জমি সমান করার জন্য মই দেওয়া ও গরুর গোবর দিয়ে লাকড়ি বানিয়ে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হত। গরুর গোবর দিয়ে রান্নার জন্য যে লাকড়ি তৈরি করা হত তাকে বলা হতো ‘মুইট্টা’। এছাড়া সারা বছর গরুর দুধ খাওয়া যেত। অধিকাংশ ঘরেই গরুর খাঁঁিট দুধ পাওয়া যেত। বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলার একটি গ্রাম অনুসন্ধানে দেখা যায় প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ ঘরেই গরু নেই। গরু না থাকায় মহিলাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে মুইট্টার প্রচলন এখন উঠে গেছে বললেই চলে। প্রতিটি ঘর থেকে গরু লালন পালন পালন উঠে যাওয়ার কারণ বছরের পর বছর ধরে খরা, বৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে ফসল তলিয়ে যাওয়া বা বিনষ্টের কারণে গরুর খাবার জোগাড় করতে না পারায় কৃষকেরা গরু পোষা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়া গরু লালন পালন কমে যাওয়ায় খেতের জমি চাষ করার জন্য ইঞ্জিন চালিত ট্রাক্টর এবং ধান মাড়াইয়ের জন্য ইঞ্জিন চালিত ধান মাড়াই কলের দিকে বেশী আকৃষ্ট হচ্ছে কৃষকেরা।
দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের নদীগুলো নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। অধিকাংশ নদী ভরাট হয়ে গেছে। ছোটকালে দেখা যেত জামালগঞ্জের কানাইখালী নদীতে শত শত মানুষ সাঁতার কেটে গোসল করত। কৃষকেরা নদী সাঁতরিয়ে হালের বলদ নিয়ে জমি চাষ করতে যেতেন। ফেরি নৌকা দিয়ে এপাড় থেকে ওপাড় মানুষ চলাফেরা করতেন। সেদিন লক্ষ্মীপুর বাজারে যাওয়ার পথে দেখলাম সেই কানাইখালী নদী ভরাট হয়ে গেছে। ফেরী নৌকা আর নেই। পায়ে হেঁটে মানুষ এপাড় থেকে ওপাড় যাচ্ছেন। এভাবে ভাটি অঞ্চলের অনেক নদী ভরাট হয়ে গেছে। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় হাওরের পানি চলাচলে বাধা পাচ্ছে। এতে জমির পানি না সরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। চৈত্র-বৈশাখ মাসে সামান্য বৃষ্টি হলেই নদীর পানি ফুলে ফেঁপে উঠে বাঁধ ভেঙে হাওর তলিয়ে যাচ্ছে। কৃষকেরা এখন উভয় সংকটে পড়েছে। সরকার এদিকে কোনো দৃষ্টি দিচ্ছেন না। বিখ্যাত আয়লা বিল যেখানে শীত মৌসুমে হাজার হাজার পাখির কলরবে মুগ্ধ থাকত সেই আয়লা বিল আগের অবস্থায় আর নেই। আয়লা বিলের পাখি দেখার জন্য শত শত মানুষ সেখানে ভিড় করত সেই বিলটি গত ২ বছর আগে ইজারাদার শুকিয়ে মাছ ধরেন। এভাবে প্রতি বছর ফাল্গুন-চৈত্রমাসে বিল সেচে মাছ ধরে ইজারাদাররা। এতে মাছের প্রজনন যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি অনেক প্রজাতির মাছ হাওর অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
নানা প্রতিকূলতার কারণে কৃষকেরা কৃষি পেশা ছেড়ে দেওয়া শুরু করেছে। ভিটে মাটি হারিয়ে শহরমুখী হচ্ছে। শহরে এসে কেউ ঠেলাগাড়ি, কেউবা রিকশা, মেয়েরা বাসা বাড়িতে গৃহ পরিচারিকার কাজ বেছে নিয়েছেন। বস্তিতে থেকে অনেক কৃষকের সন্তানেরা নানা ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। যে সমস্ত কৃষক আছেন তারা কোন মতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন। যে ভাবে বাঁচার কথা সেভাবে বেঁচে নেই। এ বছর বাঁধ ভেঙে ফসলহানির ঘটনায় কৃষকরা হাতাশায় ভুগছেন। হাওরের বাঁধ এবারো তাঁদের স্বপ্নসাধ কেড়ে নিয়েছে। প্রতি বছরই হাওরের বাঁধগুলোর কাজ সময়মতো শুরু হয় না। তাছাড়া বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের ফলে হাওর রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। কৃষকেরা সর্বস্ব হারিয়ে ফেলেন। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি। আমরা মনে করি এ ব্যাপারে প্রশাসনকে আরো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। বাঁধ নির্মাণে যারা অনিয়ম করেছে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দীর্ঘ দিন আগে থেকে বাঁধ নির্মাণ হলে বাঁধ মজবুত হবে এটাই স্বাভাবিক। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের খেয়াল রাখতে হবে।
তাছাড়া মাঘ-ফাল্গুন মাসে নদীতে পানি থাকে না। এ সময় নদী খনন করে হাওরের জলবদ্ধতা দূর করতে হবে। নদীর আগের নব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। তাহলে কৃষকেরা বেশি খুশি হবে। কৃষদেরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে সরকারকে বেশি করে কৃষিখাতে ভর্তুকি দিতে হবে। ভর্তুকির মধ্যে রয়েছে বিনাশর্তে কৃষি ঋণ প্রদান, বিনামূল্যে কৃষি কাজের সাজ-সরঞ্জাম প্রদান, নদীগুলো খনন, ছোট ছোট ডোবা-নালা, খাল-বিল ইজারা প্রদান বন্ধ, সময়মত হাওর বাঁধ নির্মাণ, অল্প সময়ে যাতে ফসল ঘরে তোলা যায় সেই ধরনের উন্নতমানের বৈজ্ঞানিক গবেষণা পদ্ধতি চালিয়ে নতুন নতুন জাতের ধান আবিষ্কার করা, কৃষি প্রযুক্তি সহজে ও অতিদ্রুত কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে এবং ডিজিটাল কৃষি তথ্যের প্রচলন ঘটিয়ে গ্রামীণ জীবন মানকে উন্নত করার জন্য কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন ও সচল রাখার কার্যকরী ব্যবস্থা সরকারকে গ্রহণ করতে হবে। কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষি বিষয়ে অনেক তথ্য কৃষকেরা জানতে পারবে। তথ্য প্রদানের পাশাপাশি কৃষি শিক্ষার ব্যাপারে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান গ্রামে গ্রামে প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানোর ব্যবস্থা করলে কৃষকেরা বেশি করে কৃষি কাজে উৎসাহিত হবে। সরকার এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে কৃষকসহ গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান যেমন উন্নত ও সহজ হবে তেমনি হয়রানি মুক্তভাবে কৃষকেরা সরকারি তথ্য ও সেবার সুযোগ পাবে।
কৃষি মন্ত্রাণলয়ের সূত্রে জানা গেছে সরকার কৃষদের উন্নয়নে ৬৪টি জেলায় ৫০টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। প্রকৃত ভাবে এগুলো চালু হলে কৃষকগণ অতিসহজে কৃষি উন্নয়নে বিভিন্ন তথ্য পেয়ে উপকৃত হতে পারবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ কৃষক ও গ্রামে বাস করে। কৃষক না বাঁচলে দেশ ও গ্রাম বাঁচবে না। কৃষক বাঁচলে দেশ ও গ্রাম বাঁচবে। এজন্য কৃষদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সরকারকে এসে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। ভাটি অঞ্চলের মধ্যে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ যে সমস্ত জেলায় বেশি করে হাওর আছে সেই এলাকায় কৃষকদের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। বেশির ভাগ কৃষকের প্রাণের দাবি একটি স্বতন্ত্র হাওর উন্নয়ন মন্ত্রণালয় গঠন। হাওর উন্নয়ন মন্ত্রণালয় গঠন হলে হাওরবাসীর উন্নয়ন নিশ্চিত হবে বলে কৃষকেরা আশাবাদী।
লেখক : মানবাধিকার কর্মী।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com