সামছুল ইসলাম সরদার ::
দফায় দফায় কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল সুনামগঞ্জের কৃষকদের মুখে হাসি কেড়ে নিয়েছে। সোনার ফসল হারিয়ে হাওরপাড়ে চলছে শোকের মাতম। একের পর এক হাওরডুবিতে ফসল হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন হাওরপাড়ের বাসিন্দারা। দিশেহারা কৃষকের স্বপ্ন এলোমেলো হয়ে গেছে। বাকি যে ধানগুলো রয়েছে তা গোলায় তুলতে পারবেন কিনা এনিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় কৃষি বিভাগের পরামর্শ, দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া আর শ্রমিক সংকট প্রকট থাকায় ফসল ঘরে তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা।
এদিকে দিরাই কালনী নদীর পশ্চিম পাড়ের কেজাউড়ার বাঁধ ও সন্তোষপুর সংলগ্ন মাছুয়া খাড়ার বাঁধ ভেঙে বরাম ও উদগল হাওরের পাকা, আধা পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। বৈশাখীর প্রথম দিকেই বাঁধ ভেঙ্গে কৃষকের চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে তাদের কষ্টের ফসল।
বরাম হাওরপাড়ের কৃষকদের সাথে আলাপ করলে তাঁরা জানান, গত চার দিন আগে কেজাউড়ার বাঁধ ভেঙে বরাম হাওরে পানি ঢুকে এতে হাওরের ৪ ভাগের ৩ ভাগ ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। ধান কাটার শ্রমিকের অভাবে আমাদের চোখের সামনেই পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেল।
তাঁরা ক্ষোভের সাথে বলেন, সরকার প্রতিবছর হাওর রক্ষা বাঁধের জন্য লাখ লাখ টাকা দিলেও সরকারি কর্মকর্তা ও পিআইসি’র লোকেরা মিলে অধিকাংশ টাকাই পকেটে ঢুকান। কোন বছরই সরকারের বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়নি এবারও তাই হয়েছে। যদি দুই মাস আগে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বাঁধে মাটি কাটা হতো তাহলে পানির ধাক্কায় বাঁধ ভেঙে যেত না।
গতকাল বৃহ¯পতিবার সকাল ৬টার দিকে মাছুয়াখাড়ার বাঁধ ভেঙে উদগল হাওরের পানি ঢুকে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই আধা পাকা ধান কাটছেন। ধান কাটার শ্রমিক না থাকায় অনেকেই হতাশ।
উদগল হাওরপাড়ের কৃষকরা জানান, সময় মতো বাঁধের কাজ না করে পানি আসার কয়েকদিন আগে মাটি কাটায় সামান্য বৃষ্টিতে বাঁধের মাটি ধ্বসে পড়ে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম কেজাউড়া বাঁধ ভেঙে বরাম হাওরে ও মাছুয়া খাড়ার বাঁধ ভেঙে উদগল হাওরের পানি ঢুকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বরাম হাওরে প্রায় ৬০ ভাগ ও উদগল হাওরে ৪০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। বরাম হাওরে ৩২০০ হেক্টর ও উদগল হাওরে ৫০০ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ করা হয়েছিল।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, বরাম হাওরে ৪০ ও উদগল হাওরে ২৫ ভাগের বেশি ধান কাটা হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী খলিলুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
মাঠ কর্মকর্তা মাহমুদুল করিমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।