1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৭ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

হাওরের বাঁধরক্ষায় কৃষকের পাশে দুই তরুণ জনপ্রতিনিধি

  • আপডেট সময় বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৬

বিশেষ প্রতিনিধি ::
তারুণ্যের রক্তে নিরন্তর বাজে দ্রোহের আগুন। প্রেমে, সংগ্রামে, জাতীয় সংকটে, বিপদে, দুর্যোগে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায় দুর্বার তারুণ্য। তারুণ্যের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে মমতাসিক্ত হাত নিয়ে দাঁড়ায় মানুষের পাশে। সম্প্রতি পাহাড়ি ঢলে প্রাকৃতিক আগ্রাসনের মুখে ডুবছে হাওর, ডুবছে ফসল। এক ফসলি এ বোরোর সঙ্গে ডুবছে কৃষকের পরিকল্পিত স্বপ্ন। তবে সুনামগঞ্জের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি কৃষকের পাশে দাঁড়িয়ে হাওররক্ষা বাঁধে দিনরাত শ্রমিকের মতো কাজ করছেন। কৃষকদের সংগঠিত করে বাঁধরক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। তবে তাঁদের মতো অনেক তরুণকে দেখা গেছে ফটোসেশনে অংশ নিয়ে কৃষকের পক্ষে মেকি সংহতি জানাতে!
জানা যায়, গত সপ্তাহে জগন্নাথপুরের নলুয়ার হাওর পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট পানির চাপে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। তাছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রাক্কলন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে বাঁধ নির্মাণ না করায় বাঁধগুলো ছিল চরম ঝুঁকিতে। ফলে গত সপ্তাহেই জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ভাঙতে শুরু করে। মইয়ার হাওরের বাঁধও এসময় ফাটল দেখা দেয়। এই খবর পেয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তরুণ জনপ্রতিনিধি মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা ছুটে যান হাওরে। কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে দিনভর বাঁধে অবস্থান করে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। তাছাড়া তরুণ এই জনপ্রতিনিধির প্রস্তাবে গত সপ্তাহে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভা বন্ধ করে বাঁধে গিয়ে কৃষকদের নিয়ে কাজ করেন পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ। জানা গেছে অন্যরা কিছুক্ষণ থেকে চলে আসলেও মুক্তাদীর আহমদ ছিলেন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এ দুটি বাঁধে কাজ করেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেননি কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা। অবশেষে দুটি হাওরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরো অনেকের মতো তরুণ জনপ্রতিনিধি মুক্তাদীর আহমদ কৃষকের পক্ষে দাঁড়িয়ে দিনভর কাজ করেছেন বাঁধে। এখন তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সহযোগিতার জন্য নানা ফোরামে কথা বলছেন।
এদিকে তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও হাওর এলাকার তরুণ জনপ্রিয় নেতা কামরুজ্জামান কামরুল সোমবার দিনভর শনির হাওর রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তিনি নিজে বাঁধের নিচে নেমে বাঁশ-খুঁটি গেড়েছেন। জানা গেছে, সোমবার দুপুরে যখন ঝালোখালি বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে তখন তিনি সবার আগে ছুটে যান। এর আগে বাঁধ এলাকার মসজিদের সংশ্লিষ্টদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে বাঁধে আসার আহ্বান জানানোর জন্য মোবাইল ফোনে তাঁদের পরামর্শ প্রদান করেন।
উপস্থিত কৃষকরা জানান, ঝালোখালি বাঁধে যখন সো সো করে পানি ঢুকছিল তখন সঙ্গে নিয়ে যাওয়া বাঁশ-দড়ি নিয়ে নিজেই আগে নেমে পড়েন কামরুল। তিনি বুক সমান পানিতে নামার পর তাঁর দেখাদেখি কয়েকজন কৃষকও নামেন। প্রায় আধাঘণ্টা পানিতে থেকে তিনি বাঁশের আড়ি বাঁধেন। এর আগে পানির প্রবল ¯্রােত দেখে কামরুজ্জামান কামরুল বাঁধে উপস্থিত তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং দুই থানার ওসিকে বালুভর্তি দুটি নৌকা দিয়ে ভাঙা বাঁধের পানি আটকানোর পরামর্শ দেন। ব্যক্তিমালিকানাধীন কোন নৌকাকে ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজে আনা যাবেনা বলে তাতে সায় দেননি সরকারি অফিসারবৃন্দ। কিন্তু কামরুজ্জামান কামরুল তাঁদের পরামর্শ উপেক্ষা করে পাশের নদী দিয়ে চলে যাওয়া দুটি বালু বোঝাই নৌকা জোরপূর্বক এনে একটিকে বাঁধের ভাঙ্গা অংশে খাড়া করে অন্যটি থেকে বালু ফেলতে থাকেন। তার এই কাজ দেখে ভরকে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং থানার ওসি। শেষ পর্যন্ত এই প্রচেষ্টায় ঝালোখালি বাঁধ রক্ষা করে রাতে বাড়ি চলে আসেন। পরে খবর পান পাশের নান্টুখালি বাঁধ ভেঙে শনির হাওরে পানি ঢুকছে। কিন্তু রাতের কারণে দুর্গম ওই এলাকায় যাওয়া সম্ভব হয়নি বলে বাঁধ ভেঙে হাওর তলিয়ে যায়। গতকাল জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম শনির হাওরের বাঁধ পরিদর্শনে গেলে কামরুজ্জামান কামরুলের প্রশংসা করেন কৃষকগণ।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিক আকবর হোসেন বলেন, কামরুল ভাইর মতো সাহসী জনপ্রনিধি আমি জীবনে কম দেখেছি। গতকাল কেউ বাঁধে পানিতে নেমে বাঁশ গাড়ার আগে তিনি নেমে যান। পরে তাঁর দেখাদেখি অন্য কৃষকরা নামেন। আকবর হোসেন বলেন, জোরপূর্বক অপরিচিত মানুষের দুটি বালুবোঝাই কোটি টাকার নৌকা এনে কামরুল ভাই যে সাহসের পরিচয় দিয়েছেন তা আমার মনে দাগ কেটেছে। কারণ একটু এদিক-সেদিক হলেই ¯্রােতের বালুবোঝাই নৌকা ডুবে যেতে পারতো। এই ভয়েই প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ নৌকা আনার সাহস দেখাননি। কিন্তু তরুণ কামরুল সেই সাহস দেখিয়েছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ বলেন, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ঋণে জর্জরিত কৃষক অনেক স্বপ্ন নিয়ে বোরো ফসল ফলান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনিয়ম, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে প্রতি বছর তাদের স্বপ্নের ফসল তলিয়ে যায়। এতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতে তারা ঋণে জর্জরিত হয়ে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ভাসমান এক অনিশ্চিত জীবন-যাপন করছেন। এবার বাঁধে অবস্থান করেও শেষ পর্যন্ত ফসলরক্ষা করতে পারিনি। এজন্য কষ্ট হচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, আমি কৃষকের সন্তান, সব কৃষক আমার স্বজন। হাওরের ফসল হচ্ছে আমার বেঁচে থাকার উৎস। কিন্তু নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, উদাসীনতা, অপরিকল্পিত পরিকল্পনা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমার হাওর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হাওরের কৃষকের কারণে আমি আমার জীবন বাজি রাখতে পারি। সোমবার সারাদিন কাজ করেও শনির হাওর রক্ষা করতে না পারায় আমার কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে কৃষকদের জন্য কিছ্ইু করতে পারিনি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com