1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩৭ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সরেজমিন জোয়ালভাঙ্গা-খরচার হাওর: চোখের সামনেই ডুবছে আধাপাকা ফসল

  • আপডেট সময় রবিবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৬

শামসুল কাদির মিছবাহ, খরচার হাওর থেকে ফিরে ::
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত, শিলা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জোয়ালভাঙ্গা, কানলার হাওর ও বৃহৎ খরচার হাওরে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শুক্রবার সরেজমিনে জোয়ালভাঙ্গা ও খরচার হাওরে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে হাজার হাজার একর বোরো ফসল পচে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়াও বৃহৎ খরচার হাওরের লাইয়া, খাইমা, গজারিয়া, মাছের বানসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
এদিকে বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের কানলার হাওরের বোরো ফসলও তলিয়ে যাওয়ার হুমকির মুখে রয়েছে।
কৃষকরা জানান, গত সপ্তাহের টানা বৃষ্টিপাত, শিলা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাওরগুলোর আধাপাকা ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে কষ্ট, শ্রম ও ঘামে ফলানো বোরো ফসল কাঁচা থাকতেই জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তলিয়ে যাওয়া ফসল চোখের সামনে নষ্ট হলেও তাদের কিছুই করার নেই।
তাঁরা জানান, বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে বোরো ধান কাটার উপযুক্ত সময়। এখনো ধান আধাপাকা রয়েছে। যদি আরো কয়েকদিন বৃষ্টি হয় বাদ বাকি ফসল গোলায় তোলা সম্ভব হবে না। বোরো ফসল রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানান হাওরপাড়ের কৃষকরা।
গৌরারং ইউনিয়নের ইছবপুর গ্রামের কৃষক অর্জুন পাল বলেন, আমার ৮কিয়ার(হেক্টর) বোরো ক্ষেত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে কিভাবে সারা বছর চলবো, কোনো উপায় দেখছি না।
একই গ্রামের কৃষক মো. আব্দুর রব বলেন, পুরো এলাকার ডুবার পানি জোয়ালভাঙ্গা হাওরে জমে বোরো ফসল ডুবে গেছে। এই পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থাও নেই। পল্টুন বসিয়ে হাওরের পানি সেচে বের করার ব্যবস্থা থাকলে ফসল রক্ষা করা যেতো।
একই ইউনিয়নের নিধিরচর গ্রামের কৃষক ফয়জুর রহমান বলেন, পাউবো জোয়ালভাঙ্গা বাঁধে মাটি ফেলে যে বাঁধ দিয়েছে তা নদীর পানি এক ধাক্কা দিলেই ভেঙ্গে যাবে। বাঁধ ভেঙ্গে হাওরে যে কোনো মুহূর্তে হাওরে পানি প্রবেশ করে পুরো ফসল তলিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশংকার কথা জানালেন ওই কৃষক।
একই হাওরের কৃষাণী রশিদা বেগম বলেন, ৩কিয়ার বোরো ক্ষেত করেছিলাম সবগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। এক কিয়ার জমিতে ক্ষেত করতে ৪/৫হাজার টাকা খরচ হয়। এখন সরকার থেকে সাহায্য না দিলে আমরাদের বাঁচার উপায় নেই।
গৌরারং ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ষাটোর্ধ্ব রহিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, খরচার হাওরে ৪কিয়ার বোরো ক্ষেত করেছিলাম, সব পানিতে তলিয়ে গেছে। আমার এক বৃদ্ধা মা ছাড়া আর কেউ নাই। আমি বৃদ্ধা মাকে নিয়ে খুব অসহায় অবস্থায় আছি।
এ ছাড়াও গ্রামের কৃষক শফিকুন নুরের ১০ কিয়ার, খায়রুলের ৭কিয়ার, সামছু মিয়ার ৫কিয়ার, আব্দুল করিমের ২৪কিয়ারসহ গ্রামের শত শত কৃষকের বোরো ফসল খরচার হাওরে জলাবদ্ধতায় ডুবে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সোনার ফসল হারিয়ে এখন তারা বিলাপ করছেন। কৃষি অধিদপ্তর, জনপ্রতিনিধি কেউই তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন না বলে তারা অভিযোগ করেন।
গৌরারং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান মুজিব বলেন, হাওরে পানি ঢুকে গেলে পরে আর কিছুই করার থাকে না। প্রতিবছর যদি বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই হাওরে পল্টুনের ব্যবস্থা করে রাখা হয় এবং পানি প্রবেশের সাথে সাথে তাৎক্ষণিক সেচের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে কৃষকের কষ্টে ফলানো বোরো ফসল রক্ষা পাবে।
এদিকে বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের কানলার হাওরের বোরো ফসলও তলিয়ে যাওয়ার হুমকির মুখে রয়েছে।
রঙ্গারচর ইউনিয়নের শিব্বির আহমেদ জানান, কানলার হাওরে কয়েক দিনের পাহাড়ি ঢলে হাওর টইটুম্বর। এই পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থাও নেই। তিনি পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থায়ী উদ্যোগ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান।
রঙ্গারচর ইউনিয়নের কৃষক ফখর উদ্দিন বলেন, কানলার হাওরে ১৪কিয়ার বোরো জমি আবাদ করেছিলাম। কিন্তু কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সবগুলো বোরো ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
একই গ্রামের আবু বকর বলেন, কানলার হাওরে ১০কিয়ার বোরো জমি চাষ করেছিলাম। পাহাড়ি ঢলে সব তলিয়ে গেছে।
রঙ্গারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরহাদ রাজা চৌধুরী বলেন, কানলার হাওরে পাহাড়ি ঢলে প্রায় ডুবু ডুবু অবস্থা। কৃষকের চোখে-মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। কৃষকের অনেক শ্রমে ও কষ্টে বোনা বোরো ফসল তাদের চোখের সামনে ঢলের পানিতে নিমিষেই তলিয়ে যায়। হাওরের এই পানি স্লুইস গেট দিয়ে বের করার ব্যবস্থা করা গেলে কৃষকের বোরো ফসল গোলায় তোলা সম্ভব হতো।
সুনামগঞ্জ ৪ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, আমি সুনামগঞ্জের অনেক হাওর ঘুরে দেখছি। বোরো ফসল রক্ষার আতঙ্কের মধ্যে সারাদিন কাটিয়েছি। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক সাথে এ বিষয়ে আলাপ করেছি। আজ সকালে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার উপরে। আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে সুনামগঞ্জে প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন হাওরপাড়ের মানুষ। বিশ্বম্ভরপুরে খরচার হাওরের তলদেশে পানি জমা হয়ে আছে। সেচ পাম্পের মাধ্যমে হাওরের পানি সেচের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জাহেদুল হক বলেন, বৃষ্টিপাত ও শিলা বৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত জেলার ৫টি উপজেলায় প্রায় দেড় হাজার একর বোরো জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি বিভাগ এখনও পুরো ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পায়নি। তবে রোদ উঠলে এই সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে এবং কৃষকরা তাদের সোনালী ফসল ঘরে তোলতে পারবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com