শহীদনূর আহমেদ ::
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু’র প্রয়াণে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে সুনামগঞ্জ পৌরসভা চত্বরে এই শোকসভার আয়োজন করে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটি।
কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহিন চৌধুরী শুভ’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত শোকসভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়। শোকসভায় প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু’র আত্মার মাগফেরাত কামনায় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
শোকসভায় বক্তব্য রাখেন জেলা উদীচী’র সভাপতি শীলা রায়, হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা কমরেড রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু, বিকাশ রঞ্জন চৌধুরী ভানু, লেখক-কলামিস্ট অ্যাড. হোসেন তওফিক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট চাঁন মিয়া, অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান চৌধুরী, হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সহ-সভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদার, সুখেন্দু সেন, অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার দাস, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ হাওর বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি জালাল উদ্দিন, সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি স্বপন দাস, জামালগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি শাহানা আল আজাদ, অ্যাড. মতিয়া বেগম, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক একে কুদরত পাশা, জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদ আহমদ, সদর উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি দুলাল মিয়া, সুনামগঞ্জ সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি শেখ একেএম জাকারিয়া, সহ-সভাপতি কবি ও সাংবাদিক মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আসাদ মনি প্রমুখ।
শোকসভায় বক্তারা বলেন, সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতি ভাবনার ক্ষেত্রে চেতনার বাতিঘর ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু। তিনি ছিলেন একজন সমাজ-মনস্ক, প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী অনন্য সাধারণ মানুষ। খুব সাধারণ জীবনযাপন করতেন। কিন্তু এই সাধারণ জীবনযাপনের মধ্যে ছিল অসাধারণত্ব। তিনি সহজেই মানুষকে আপন করে নিতে পারতেন।
বক্তারা আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু। তিনি ছিলেন প্রতিবাদ আর সাহসের বাতিঘর। জাতির ক্রান্তিলগ্নে অস্ত্র হাতে রণাঙ্গনে যেভাবে জীবন বাজি রেখেছিলেন, তেমনি হাওরবাসীর দুঃসময়ে নেতৃত্ব দিয়ে বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলেন। অন্যায়-অবিচার, অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান ছিল আপোষহীন। বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরীর মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা কখনো পূরণ হবে না।
বক্তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু’র স্মৃতিচারণ করে আরও বলেন, তিনি ছিলেন একজন আপাদমস্তক সজ্জন, সদালাপী, নীতিবান মানুষ। বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী মানুষটি সততা ও নিষ্ঠার সাথে জীবন অতিবাহিত করেছেন। বর্ণাঢ্য জীবনে আইনপেশার সাথে সাথে সাংবাদিকতা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অনন্য অবদান রেখেছেন।
বক্তারা বলেন, ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ২০১৭ সালে যখন হাওরডুবির ঘটনা ঘটে। হাওরবাসী যখন দিশেহারা তখনই এগিয়ে আসেন বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু। হাওর দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে গড়ে তোলেন আন্দোলন। তাঁর হাতে গড়া সংগঠন হাওর বাঁচাও আন্দোলন আজ বাংলাদেশের ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। হাওরের মানুষের অধিকার আদায়ে আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন তিনি।
শোকসভার শুরুতে শোকবার্তা পাঠ করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, সুনামগঞ্জ জেলার সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য্য। পরে শোকবার্তাটি প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরীর পুত্র ড. সউদ ফারহান চৌধুরী’র হাতে তুলে দেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
শোকসভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী’র ছোটভাই বজলুর রশিদ চৌধুরী রুহেল, হাওর বাঁচাও আন্দোলন জেলা কমিটির সদস্য সচিব রাজু আহমদ, জামালগঞ্জ শাখার সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন পুরকায়স্থ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ, বাঁধ বিষয়ক সম্পাদক ডা. নজরুল ইসলাম, সদস্য মিজানুর রহমান, সদর উপজেলা কমিটির নেতা তছকির আলী, শওকত ইসলাম, সলুকাবাদ ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক জালাল প্রমুখ।