পত্রিকায় প্রকাশিত এক সংবাদ থেকে জানা গেলো, দেশে ‘মতপ্রকাশের পথ সংকুচিত হচ্ছে’। ইতিহাস বলছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, সাধারণ মানুষের মতপ্রকাশকে নিয়ে রাষ্ট্র তার নাগরিকের উপরে নিপীড়নমূলক আচরণে উৎসাহ দেখিয়েছে, বিভিন্ন সময়ে, এখনও দেখাচ্ছে। কিন্তু তাতে করে কিন্তু রাষ্ট্রের কোনও উন্নয়ন ঘটে নি, বরং রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ব্যক্তিগত কীছু স্বার্থসুবিধা রক্ষিত বা লাভ হয়েছে মাত্র। যে যা-ই বলুন, শেষ বিবেচনায় মতপ্রকাশের পথ সংকোচনের প্রশাসনিক যে-কোনও প্রকরণপদক্ষেপ একটি রাজনীতিক প্রক্রিয়া ভিন্ন অন্য কীছু নয়। আর রাজনীতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সব সময় সংশ্লিষ্ট থাকে শ্রেণিস্বার্থ।
বর্তমান বিশ্ব এগিয়েছে অনেক দূর। আমাদের দেশও এগিয়েছে অনেক। বলা হচ্ছে অচিরেই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে গিয়ে দাঁড়াবে। এমতাবস্থায় যদি দেশের মানুষের মতপ্রকাশের পথ সংকোচনের নীতি মানুষের কণ্ঠরোধ করে রাখে, তবে এই উন্নয়নের ঢেউ সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় গিয়ে পৌঁছার আগেই কায়েমি স্বার্থবাদীরা আটকে দেবে কিংবা, কেউ কীছু বলতে পারবে না। অবস্থা দাঁড়াবে সাড়ে চার দশক আগে কবি যেমন উচ্চারণ করেছিলেন, ‘ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, বলা যাবে না কথা, রক্ত দিয়ে পেলাম শালার এমন স্বাধীনতা।’ আমরা ভুলে যাইনি, একদা এই দেশে জাতির পিতাকে হত্যা করার পর, তাঁর নামোচ্চারণ করাও অপরাধ হিসেবে গণ্য হতো, তারও আগে বাংলা ভাষাকেই হত্যার তৎপরতা শুরু হয়েছিল। যদিও এবারের মতপ্রকাশের পথ সংকোচনের প্রকরণটি একটু ভিন্ন, কিন্তু কার্যত আমজনতার উপরে একধরনের নিপীড়ন বজায় রাখাই এর একমাত্র উদ্দেশ্য। আমরা মনে করি, মতপ্রকাশর অর্থ যদি হয়, অযৌক্তিকভাবে ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উপায়ে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপ্রশাসনের বিরুদ্ধাচরণ করা, তা হলে সেটা স্পষ্ট অপরাধ এবং মতপ্রকাশের অর্থ সবসময়ই যে এমন অপরাধমূলক হবে এমন তো কথা নয়। সুতরাং আইনকে এমন হতে হবে যেন আমাদের মহান সংবিধানের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়। ডিজিটাল আইনের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক সাংঘর্ষিকতার অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। বিভিন্ন পক্ষ থেকে অভিযোগ আকারে উত্থাপিত এই আইনের জটিলতাটুকু দূর করার জোর দাবি উঠেছে। আইনকে অবশ্যই সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না এই দাবির ভেতরে দেশরাষ্ট্রের মঙ্গলকামনা ও সর্বোপরি সংবিধানকে সমুন্নত রাখার নীতি নিহিত আছে।