আশিস রহমান ::
দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের একমাত্র খেলার মাঠটি সুদীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। একই ইউনিয়নের হাজী কনু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ডুমরোয়া মৌজার ৫০২ দাগে ১ একর ৬০ শতাংশ জমি নিয়ে এই মাঠের অবস্থান। তারমধ্যে ৭০ শতাংশ জমি ওয়াকফ মন্ত্রণালয়ের এবং বাকি ৯০ শতাংশ জমি বিভিন্ন ব্যক্তির মালিকানাধীন। ১৯৭৭ সালে তৎকালীন ক্রীড়ানুরাগী ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম শফিকুল ইসলাম এই মাঠের গোড়াপত্তন করেন। কিন্তু মাঠের ভেতরের ব্যক্তির মালিকানাধীন ৯০ শতাংশ জমির কোনো সুরাহা না হওয়ায় মাঠ নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি রয়েছে জমির মালিকদের। একই মাঠে ওয়াকফ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থাকায় খেলার মাঠ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে একদিকে এলাকার ক্রীড়া-বিনোদন প্রেমীরা ক্রীড়া বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অপরদিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির অংশের মালিকেরাও মাঠের জমি ভোগদখল করতে পারছেন না। এতে করে পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের একমাত্র এই খেলার মাঠটি একটানা প্রায় ৪৪ বছর ধরে কোনো কাজে আসছে না। এদিকে জমির দখলদারিত্ব ফিরে পেতে অনেকে আইনিভাবেও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বেশ কয়েক বছর ধরে।
সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে পান্ডারগাঁও খেলার মাঠের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি সরকারিভাবে অধিগ্রহণ করে মাঠটি দ্রুত খেলাধুলার উপযোগী করা হোক এমনটাই দাবি এলাকাবাসীর।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র আব্দুর রহিম রাসেল জানান, এই মাঠ ছাড়া আমাদের ইউনিয়নে বিকল্প আর কোনো খেলার মাঠ নেই। মাঠটি বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকায় আমরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আওয়ামীলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জানান, মাঠের পার্শ্ববর্তী স্কুলের শিক্ষার্থী ও ইউনিয়নবাসীর বৃহৎ স্বার্থে মাঠের ব্যক্তি মালিকাধীন জমির জটিলতা নিরসন করে মাঠটি দ্রুত খেলাধুলার ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলার দাবি জানাই।
আফসর নগর গ্রামের বাসিন্দা শরিয়ত আলী তালুকদার জানান, মাঠে আমার মতো প্রায় ১৫-১৬ জনের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি রয়েছে। কিন্তু প্রায় ৪৪ বছর ধরে আমরা আমাদের জমির ভোগদখল করতে পারছিনা আবার কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণও পাচ্ছিনা। সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, হয় আমাদেরকে আমাদের জমি ভোগদখল করতে দেওয়া হোক নয়তোবা সরকারিভাবে জমি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। এই সামান্য জমিটুকুই আমার পরিবারের সম্বল।
পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ জানান, এই মাঠের বিষয়ে সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। জমি সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়ে প্রশাসনকে মৌখিকভাবে অবহিত করেছি। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি। এই মাঠের জমি অধিগ্রহণ করে মাঠটিকে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে রূপান্তর করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, মাননীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক মহোদয় এবং বর্তমান সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি কামনা করছি। এখানে পর্যাপ্ত জমি রয়েছে। বর্তমান সরকার যেহেতু দেশের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম করার পরিকল্পনা নিয়েছে সেহেতু এখানে একটি শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা যেতে পারে। যেটি ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে যুব ও ক্রীড়া পরিচালনা নীতিমালা অনুসারে তত্ত্বাবধান করা হবে।
এ ব্যাপারে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোনিয়া সুলতানা বলেন, পান্ডারগাঁও খেলার মাঠের জমি সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। এবিষয়ে কোনো সমস্যা থাকলে ভুক্তভোগীরা লিখিতভাবে আবেদন করতে পারেন। আর জমি অধিগ্রহণে উপজেলা প্রশাসনের কোনো এখতিয়ার নেই, এটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে করা হয়।