মোহাম্মদ আমিনুল হক ::
১৯৭১ সালে দেশকে স্বাধীন করতে গিয়ে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছেন রাজারগাঁও গ্রামের শহীদ আব্দুল জব্বার, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আলী হায়দার, মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত বুরহান উদ্দিন, আব্দুল খালেক। গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিদের অনেকেই বেঁচে নেই। রয়ে গেছে তাদের স্মৃতি চিহ্ন ভিটেবাড়ি। কিন্তু তাও সুরমা নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের রাজারগাঁও গ্রাম যেখানে ২ শতাধিক মানুষজনের বসবাস। গ্রামের অধিকাংশ মানুষজন খেটে খাওয়া দিনমজুর। তাই তারা দীর্ঘকাল যাবত সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম থেকে অবহেলিত উপেক্ষিত। গৃহনির্মাণ থেকে শুরু করে সন্তানাদিকে লেখাপড়া করানো সকল ক্ষেত্রেই তাদের হিমশিম খেতে হয়। তথাপি নদী ভাঙনের মতো এক ভয়াবহ অবস্থায় দিশেহারা গ্রামের অধিকাংশ পরিবার। কারো পুরো বাড়ি, কারো অর্ধেক বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে।
এ ব্যাপারে রাজারগাঁও গ্রামের সরফুল নেছা বলেন, আমার স্বামী প্রয়াত আলী হায়দার মহান মুক্তিযুদ্ধে নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু আজ অবহেলায়, অবজ্ঞায় আমাদের দিন কাটাতে হচ্ছে। তারপরও এখন নদী ভাঙ্গনের মুখে স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়িটি অর্ধেক নদীগর্ভে।
স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়ি নিয়ে ফরিয়াদ করলেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা বুরহান উদ্দিনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম। তিনি বলেন, স্বামী জীবিত নেই, আছে তার রেখ যাওয়া স্মৃতি বাড়িটি। কিন্তু, আজ কয়েক বছর যাবত নদী ভাঙনে হুমকির মুখে বাড়িটি। অর্ধেক বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। সন্তানাদি রেখে বড়ো অসহায় অবস্থায় আছি। কখন আবার নদীর গ্রাসে তলিয়ে যায় বাকি সম্বলটুকু।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল জব্বারের ভাই শওকত আলী বলেন, বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়নে কাজ করছে ঠিকই, কিন্তু আমাদের রাজারগাঁও গ্রাম অবহেলায় পড়ে আছে। নদী তীরবর্তী গ্রাম হওয়ায় নদী ভাঙ্গনের কবলে আছে গ্রামটি।
নদী ভাঙ্গনে হারিয়ে যাওয়া বাড়ি নিয়ে আক্ষেপ করে আনোয়ারা বেগম বলেন, আমার স্বামী একজন খেটে খাওয়া দিনমজুর। এমতাবস্থায় আমাদের ঘরটি নদীগর্ভে অর্ধেক চলে গেছে। বাকি জায়গায় ঝুপড়ি বেঁধে সন্তানদেরকে নিয়ে ভয়ে কাটছে দিনকাল।
সেজিয়া বেগম নদীগর্ভে তার ঘরটি হারিয়ে বাকরুদ্ধ। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকেন সুরমা নদীর দিকে। জাহানারা ও সুফিয়া বেগমও হারিছেন তাদের ভিটে বাড়ি। নদীগর্ভে বাড়িঘর বিলীন হওয়ায় অনেকে অন্যত্র চলে গেছেন।
প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা বোরহান উদ্দিনের সহোদর শেখ ফরিদ জানান, আমাদের গ্রামে বেশ কয়েক বছর যাবত নদী ভাঙ্গনে অসহায় হয়েছে অনেক পরিবার। আমাদের অর্ধেক বাড়িও চলে গেছে নদীগর্ভে।
গৌরারং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শাহাবুদ্দিন বলেন, দেশে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে, কিন্তু আমাদের রাজারগাঁও উপেক্ষিত।
গৌরারং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন যাবত রাজারগাঁও গ্রামটি নদী ভাঙ্গনের কবলে। ফলে অসহায় হয়ে পড়েছেন গ্রামবাসী। গ্রামবাসীর আশা-ভরসার স্থল এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দিকে। গ্রামবাসী দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছেও।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য ইমার্জেন্সি বরাদ্দ ও স্থায়ী বরাদ্দ দুটি হওয়ার কথা। বরাদ্দ আসলে আমরা কাজ শুরু করে দিব।