শহীদনূর আহমেদ ::
নদী ভাঙনের কবলে নিশ্চিহ্নের পথে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাদাঘাট দক্ষিণ ইউনিয়নের দুইটি গ্রাম। শাখা যাদুকাটা নদী ক্রমেই গ্রাস করছে ডালারপাড় ও বাগগাঁও গ্রাম দুটি। নদী ভাঙনের কবলে রয়েছে দুই গ্রামের অন্তত ৫শত পরিবার। ইতোমধ্যে আবাদি জমি, ফলের বাগান, বাঁশ ঝাড়, ঘর-বাড়িসহ অনেক স্থাপনা চলে গেছে যাদুকাটার গর্ভে। ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না হলে আগামী বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে গ্রামের বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর শাখা নদীটি থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন করার ফলে ২০০৪ সাল হতে গ্রাম দুটি নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। অব্যাহত নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি ও কৃষির উপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর আবাদি জমি। ফলে নদীর পাড়ের প্রায় ৫হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। এছাড়াও ক্রমাগত ভাঙনে হুমকিতে রয়েছে অনেকের আবাদি জমি ও বসতভিটা। ইতোমধ্যে গ্রাম দুটির তিনশত বিঘার বেশি আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে বলে ওই এলাকার ভুক্তভোগী লোকজন জানিয়েছেন। ভাঙনে আবাদি জমি, ফলের বাগান, বাঁশ ঝাড়, জমিজমা হারিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এছাড়া পাহাড়ি ঢলের তোড়ে আসা বালু ফসলি জমিতে পড়ছে। ফলে চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ছে জমি।
ডালারপাড় গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০০৪ সাল হতে নদী ভাঙন শুরু হয়। গত কয়েক বছরে ডালারপাড় ও বাগগাঁও গ্রাম দুটি নদীর অব্যাহত ভাঙনে আকারে অর্ধেক হয়ে গেছে। এই ভাঙনের কবল থেকে কিছুই বাদ যাচ্ছে না। বাগগাঁও গ্রামের সবচেয়ে বড় ও পুরাতন মসজিদটিও নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা এলাকাবাসী বেশ কয়েকবার ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন মহলের কাছে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কোন প্রকার সুফল আজও পাইনি।
বাদাঘাট দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. জামাল হোসেন বলেন, গত বর্ষাকালে আমি আমার নিজস্ব অর্থায়নে ভাঙন কবলিত নদীর পাড়ের বেশ কিছু জায়গায় বাঁশ, বস্তা দিয়ে নদী ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করেছি। এলাকাবাসীর পক্ষে কর্তৃপক্ষের কাছে আমার দাবি যত দ্রুত সম্ভব সিসি ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে দুটি গ্রামকে রক্ষা করা হোক।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিউর রহিম জাদিদ বলেন, এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন লেভেলের বাইরে। যদি ডিজাইন লেভেলের ভিতরে থাকে তাহলে ভাঙন প্রতিরোধে আমরা কাজ করবো।
এবিষয়ে সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার ভাঙন কবলিত যেসকল জায়গাগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ছিল সেসব এলাকার জন্য একটি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছি। এছাড়াও অন্যান্য ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় একটি নতুন প্রজেক্ট তৈরির জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পরিদর্শনে আসলে তখন আমরা ভাঙন নিয়ে একটি রিপোর্ট করবো।