স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জে ৩৫টি বিচারাধীন মামলায় অভিযুক্ত ৪৯ জন শিশুকে সংশোধনের জন্য কারাগারের পরিবর্তে বই উপহার দিয়ে বাবা-মায়ের কাছে পাঠানোর ব্যতিক্রমী আরও একটি রায় দিয়েছেন সুনামগঞ্জ শিশু আদালতের বিচারক। এ সময় ওইসব শিশুদের ১০টি নির্দেশনা পালনের শর্ত দেওয়া হয়েছে। বুধবার বেলা ১২টায় সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ও শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এ রায় দেন।
রায়ের পর বিচারকের ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রত্যেক শিশুকে একটি করে ‘শত মনীষীর জীবনী গ্রন্থ’ উপহার দেওয়া হয়েছে। এর আগে আরও ১৪ জন শিশুকে সংশোধনের জন্য প্রবেশনে মুক্তি দিয়ে পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন আদালত।
সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট নান্টু রায় এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মুক্তি পাওয়ার পর আদালতের দেওয়া শর্ত প্রতিপালন করবেন বলে জানায় শিশুরা।
আদালত সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দায়ের করা ৩৫টি মামলায় ৪৯ জন শিশুর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩২৩ ধারায় অভিযোগ এনে মামলায় জড়ানো হয়েছিল। ক্ষুদ্র একটি অভিযোগে এসব শিশুদের আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হত। ফলে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা মধ্যে পড়ে শিক্ষাজীবন ব্যহত হয়। স্বাভাবিক জীবনে বেড়ে উঠা হুমকির মধ্যে পড়ে। ওই ৪৯ শিশুকে দীর্ঘমেয়াদী ঝামেলা থেকে মুক্তি দিয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন আদালত। তাদেরকে সংশোধনের জন্য ১০টি শর্ত দিয়ে ওইসব শিশুদের কারাগারের পরিবর্তে পরিবারের হাতে তুলে দেন।
সংশোধনের শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- একশত মনীষীর জীবনী নামক গ্রন্থ পাঠ, বাবা-মাসহ গুরুজনদের আদেশ মেনে চলা, বাবা-মায়ের সেবা যত্ম করা এবং কাজে কর্মে তাদের সাহায্য করা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, ২০টি গাছ লাগানো এবং পরিচর্যা করা, মাদক থেকে দূরে থাকা, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা, ভবিষ্যতে কোনপ্রকার অপরাধের সাথে নিজেকে না জড়ানো, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
এদিকে, মুক্তি পাওয়ার পরবর্তী এক বছর সমাজসেবা কার্যালয়ের একজন প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে থাকবে তারা।
সুনামগঞ্জ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা মো. শফিউর রহমান বলেন, আদালত নিদের্শনা মোতাবেক ওইসব শিশুদের সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে তাদেরকে যথাযথ তত্ত্বাবধান ও সহযোগিতা প্রদান করা হবে। আদালত থেকে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে সেগুলো যাতে তারা প্রতিপালন করে সেই বিষয়গুলো মনিটরিং করা হবে।
সুনামগঞ্জ জজ আদালতের আইনজীবী আইনুল ইসলাম বাবলু বলেন, অনেক সময় কোনও কারণ ছাড়াই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিশুদের মামলায় জড়ানো হয়। আদালতের এমন রায়ের ফলে এই প্রবণতা কমে আসবে।