বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র নাদের বখত। বিজয়ের ক্ষণ গুনছেন তার সমর্থকরা। সুনামগঞ্জ শহরের হাসনরাজার পরিবার থেকে এবার কোন প্রার্থী না হওয়ায় তার বিজয়ের পথ প্রায় পরিষ্কার বলে মনে করেন নাগরিকরা। বিএনপি ও ইসলামিক আন্দোলন এই নির্বাচনে নিয়মরক্ষার প্রার্থী দিয়েছে বলেও নাগরিকদের মত। পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে নাদের বখতের ইমেজের সামনে অন্য দুই প্রার্থী একেবারেই ম্লান। তাই মেয়র নয়, কাউন্সিলর পদেই ভোটযুদ্ধ হবে বলে মনে করেন নাগরিকরা। এদিকে সরকারি-বেসরকারি পর্যবেক্ষকরাও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নিশ্চিত বিজয় হবে এমন আগাম মন্তব্যও করেছেন।
সুনামগঞ্জ পৌর নির্বাচনে ৩ জন মেয়র, ৪৯ জন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৩ জন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন নাদের বখত। অন্যদের মধ্যে বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মুর্শেদ আলম ও ইসলামিক আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রহমত উল্লাহ মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দু’জনই ভোটারদের কাছে একেবারে অপরিচিত। তাই তাদেরকে নিয়মরক্ষার প্রার্থী হিসেবে দেখছেন ভোটাররা। তবে প্রতীক বরাদ্দের পর দু’জনেরই জেলা শহরে মাইকিং প্রচারণা লক্ষ করা গেছে।
গত প্রায় ৫০ বছর ধরে সুনামগঞ্জ শহরে শান্তি, সম্প্রীতি বজায়ে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বখত পরিবার। অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার তারা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর হোসেন বখতের তিন ছেলে মনোয়ার বখত নেক, আয়ূব বখত জগলুল ও নাদের বখত পৌর পিতা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের পূর্বসূরি কাদির বখত মিয়াও ছিলেন লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান। স্থানীয় নির্বাচনে দলেরই বাইরেও তাদের নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক রয়েছে। এই পরিবার বরাবরই শহরের আরেক সম্ভ্রান্ত পরিবার হাসন রাজার পরিবারের সঙ্গে পৌর নির্বাচনে নিয়মিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছে। এই পরিবারের দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন ও দেওয়ান মমিনুল মউজদীন দীর্ঘদিন পৌরপিতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাছাড়া এ পরিবারের পূর্বসূরী দেওয়ান আনোয়ার রাজা চৌধুরী, দেওয়ান ওবায়দুর রেজা চৌধুরীও দীর্ঘদিন ধরে পৌর শহরে জনপ্রতিনিধি হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভদ্র, বিনয়ী হিসেবে পরিচিত এই পরিবারটির নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংকও রয়েছে। তাই প্রতিটি পৌর নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় এই দুই পরিবারের প্রার্থীদের মধ্যে। এই দুই পরিবার থেকে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় পালাক্রমে পৌর পিতা নির্বাচিত হচ্ছেন। এবার হাসন পরিবার থেকে কোন প্রার্থী না থাকায় বখত পরিবারের প্রার্থীর বিজয়ের পথ একেবারে পরিষ্কার বলে মনে করেন নাগরিকরা।
বিশিষ্ট লেখক ইকবাল কাগজী বলেন, গত অর্ধ শতাব্দী ধরে বখত ও হাসন পরিবারের ভোটযুদ্ধই দেখে আসছি আমরা। এবার নির্বাচনে শুধু বখত পরিবারই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। রাজনীতি সচেতন মানুষ উপলব্ধি করছেন মেয়র পদে বখত পরিবারের প্রার্থীর বিজয়ের পথ একেবারে পরিষ্কার। বরং কাউন্সিলর পদেই ভোটযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করব আমরা। তিনি বলেন, ১২টি কেন্দ্রের সবকটিতেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী সহজে লিড করতে পারেন। এটা বিচিত্র কিছু নয়।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে কোনধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই। কঠোর নিরাপত্তা রয়েছে প্রতিটি কেন্দ্রে। যারাই অপ্রীতিকর ঘটনার চেষ্টা করবে তাদেরকে কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে।