1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৬:১০ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সিলেট অঞ্চলে ৩০ ধরনের করোনা ভাইরাসের সন্ধান

  • আপডেট সময় বুধবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২১

বিশেষ প্রতিনিধি ::
সিলেট অঞ্চলের করোনাভাইরাসের জিন বিন্যাস (জিনোম সিকুয়েন্স) উন্মোচন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ। সিলেট বিভাগে পরিবর্তিত ৩০ ধরনের করোনা ভাইরাসের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা। পরিবর্তিত এই ভাইরাসগুলো মধ্যে ৬টি বিশ্বের কোথাও পাওয়া যায়নি। বাকি ২৪টি বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে একেবারে নতুন। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসগুলো রয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন শাবিপ্রবির গবেষকরা।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষক দলের সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জিইবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জি এম নূরনবী আজাদ জুয়েল বলেন, আমরা সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে তাদের জিনোম সিকুয়েন্স করি। সেখান থেকে আমরা করোনার জিনোমে নতুন একটা মিউটেশন (Genome: 27862 : Del : ATCAT) পাই যা পূর্বে বিশ্বের কোথাও পাওয়া যায়নি। এছাড়া সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে করোনার ১০টি নমুনার জিন বিশ্লেষণ করে প্রোটিন লেভেলে ৪৭টি পরিবর্তন পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৩০টি পরিবর্তিত করোনা ভাইরাস বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে একেবারে নতুন।
জি এম নূরনবী আজাদ জুয়েল বলেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসের মিউটেশনের গতি, প্রকৃতি, বিস্তার, উৎপত্তিস্থল ও বৈচিত্র জানতে সিলেট বিভাগের চার জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে জিন বিন্যাস (জিনোম সিকুয়েন্স) উন্মোচন করা হয়েছে। উন্মেচিত জিন বিন্যাস থেকে ১০টি (সুনামগঞ্জ-৫টি ও হবিগঞ্জ-৫টি) নমুনার জিন বিন্যাস গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটাবেইজে (জিআইএসএআডি) জমা দেওয়া হয়, যা গত ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের ধরন জানতে ও ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির অধিকতর গবেষণায় কাজে আসবে।
তিরি আরও বলেন, উন্মোচিত জিন বিন্যাস বিশ্লেষণ করে ভাইরাসের জিনোম কাঠামোতে মোট ৭৯টি মিউটেশন পাওয়া যায়। প্রোটিন লেভেলে ৪৭টি মিউটেশন পাওয়া যায়, এর মধ্যে ৬টি মিউটেশন এর আগে পৃথিবীর কোনো দেশে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, ২৪টি অন্যান্য দেশে পাওয়া গেলেও তা বাংলাদেশের জন্য নতুন, ১৭টি মিউটেশন বাংলাদেশে ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। এ নমুনার মধ্যে কোনো ইউকে মিউটেন্ট (P681H) পাওয়া যায়নি, তবে একই পজিশন ভিন্ন মিউটেশনে (P681R) পাওয়া যায়। জিনোম কাঠামোতে Spike M1233I মিউটেশনটি একেবারেই নতুন, যা আগে কোথাও পাওয়া যায়নি।
জিন বিন্যাস বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে সিলেট বিভাগে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সঙ্গে ইতালি, ইউকে, ইউএসএ, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, রাশিয়া, ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পূর্বে পাওয়া করোনাভাইরাসের সঙ্গে সাদৃশ্য পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান ড. শামছুল হক প্রধান বলেন, আমাদের গবেষণার অংশ হিসেবে আমরা এসব মিউটেশনগুলো বের করতে সমর্থ হয়েছি। ভবিষ্যতে এই মিউটেশনসহ অন্য পরিবর্তনগুলো গবেষণা করে বাংলাদেশে ভাইরাসটির গতিপ্রকৃতি ও বৈচিত্র্য স¤পর্কে বিশদ ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া সিলেট বিভাগের অন্য ২টি জেলার করোনাভাইরাসের পরিপূর্ণ জীবন রহস্য উদঘাটনের কাজ দ্রুততার সঙ্গে চলমান আছে, এর মাধ্যমে সমগ্র সিলেট বিভাগের ভাইরাসটির গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করা সম্ভব হবে।
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিক্ষকদের এ গবেষণায় আমরা গর্বিত। করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এ অঞ্চলের মানুষের পাশে ছিল এবং আমাদের কাজ অব্যাহত থাকবে। করোনা শনাক্তকরণ কার্যক্রমের যাতে ব্যাঘাত না হয়, সেজন্য আরও একটি মেশিন কেনা হয়েছে এবং জিনোম সিকুয়েন্সের জন্য নতুন মেশিন ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে আমরা করোনা ল্যাব চালু করি। আমরা করোনা ভাইরাসের প্রকৃতি ও বিস্তার নিয়ে গবেষণাও করছি, যা শাবিপ্রবির এক অনন্য অর্জন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম, লাইফ সায়েন্স অনুষদের ডিন ড. এস এম আবু সায়েম, জিইবি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. শামসুল হক প্রধান, সহকারী অধ্যাপক জি এম নূরনবী আজাদ জুয়েল, পিএইচডি রিসার্চ ফেলো নাজমুল হাসান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, নোবেল করোনাভাইরাস নির্ণয় করার জন্য করোনাকালীন সময়ের প্রথম দিকেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে লাইফ সায়েন্স অনুষদের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে কোভিড-১৯ রোগ নির্ণয় ল্যাব স্থাপন করা হয়। এই ল্যাবে এখন পর্যন্ত ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন।
কোভিড-১৯ রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি এই দলটি ভাইরাস নিয়ে শাবি গবেষণা কেন্দ্রের অর্থায়নে গবেষণা শুরু করেন। গবেষণার অংশ হিসেবে সিলেট অঞ্চলের করোনাভাইরাসের জীবন রহস্য উন্মোচন করতে সমর্থ হলেন তারা। যা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের ধরন জানতে ও ভাইসের ভ্যাকসিন তৈরিসহ অধিকতর গবেষণায় কাজে আসবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com