1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সুখস্মৃতির ক্যানভাসে ‘সুনামকণ্ঠ’ : পুলিন রায়

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১ জানুয়ারী, ২০২১

‘সুনামকণ্ঠ’ আমার স্মৃতির এক সরোবরের নাম। ‘সুনামকণ্ঠ’র সাথে যে গাঁটছড়া বাঁধা হয়েছে তা বহাল থাকবে অনন্তকাল। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক শ্রদ্ধেয় বিজন সেন রায়, প্রিয় বিজনদা’র মুগ্ধ করা ব্যবহার ভুলে থাকা যায় না। তাঁর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব এবং পত্রিকা পরিচালনার দক্ষতায় আজ প্রায় দশ বছর হলো সুনামগঞ্জ ছেড়েছি তবুও সুনামকণ্ঠ-এর মধুর সুখস্মৃতিময় দিনগুলোর কথা ভুলতে পারি না। ভালোবাসার মহিমান্বিত এক অমোঘ বন্ধন বারে বারে নিয়ে যায় স্মৃতির মায়াবী বন্দরে, ‘সুনামকণ্ঠ’-এ কাটানো দিনগুলোতে। আমরা যখন ‘সুনামকণ্ঠ’-এর সাথে ভালোবাসার মেলবন্ধনে যুক্ত সেটি তখন সাপ্তাহিক। আর ‘সুনামকণ্ঠ’এর এই সাপ্তাহিকের যাত্রা শুরু হয় ২০০১ সালের ১৩ জুলাই। সাপ্তাহিক সুনামকণ্ঠ-এর সাথে আমার যুক্ততা ২০০৪ সালের মাঝামাঝি। বহাল ছিলো ২০১০-এর নভেম্বর অবধি। আমার বাসা তখন সুনামগঞ্জে। সপরিবারে এই সময়ে সুনামগঞ্জে থাকতাম। সুনামকণ্ঠ কার্যালয় তখন পৌরবিপণি মার্কেটের দু’তলার পশ্চিমদিকে। হায়রে সোনালী দিন! কতো স্মৃতি, কতো আনন্দমুখর দিন যাপন। এই লেখা লিখতে গিয়ে মনের দর্পণে ভেসে উঠছে ফেলে আসা স্বর্ণাভ সেই দিনগুলোর কীর্তিগাথা।
আমাদের ছাত্রজীবনে বিজনদা একসময় সিলেট থাকতেন, চাকরিসূত্রে। আমি তখন সিলেট উদীচী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইত্যাদির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সরাসরি সম্পৃক্ত। কাজ করি দৈনিক সিলেটের ডাক-এ। তখন থেকেই বিজনদার সাথে আলাপ-পরিচয়। আমার চাকরিসূত্রে সুনামগঞ্জবাসী ছিলাম প্রায় দশ বছর। বিজনদা তখন সুনামগঞ্জের সংস্কৃতির মূলধারার একজন স্বনামখ্যাত মানুষ। সুনামগঞ্জ উদীচী’র সভাপতি। শহরের গণ্যমান্যদের একজন। একনামে সবাই তাঁকে চিনে। তাঁর ‘সুনামকণ্ঠ’ তখন সুনামগঞ্জে সবার মুখে মুখে। এ অবস্থায় কোনো এক শুভক্ষণে বিজনদার সাথে আমার যোগসূত্র স্থাপন হয়। দিনক্ষণ মনে নেই। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ কলেজ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের আমার অগ্রজ-বন্ধু এস.এম ইলিয়াস তখন সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যাপক। যতদূর মনে পড়ে ইলিয়াস ভাই’র মাধ্যমে মনে হয় বিজনদার সাথে প্রথম সাক্ষাৎ। দীর্ঘ বিরতির পর ইলিয়াস ভাইয়ের সাথে আবারও সখ্যতা গড়ে উঠায় খুবই প্রাণিত হই। যা হোক বহুদিন পর দেখা হলেও বিজনদা আমাকে ঠিকই চিনে ফেলেন। প্রথম দেখাতেই আমাদের সিলেটের অনেক স্মৃতি নিয়ে বিজনদা আর আমি দুজনেই সরব হয়ে উঠি। তারপর সুরমায় অনেক জল গড়িয়ে যায়। ‘সুনামকণ্ঠ’ এবং বিজনদার সাথেও আমার রচনা হতে থাকে একের পর এক ভালোবাসার সেতুবন্ধন। গাঢ় হতে থাকে আত্মিক সম্পর্ক। একদিন দেখা না হলে আমরা দুজনই প্রবল টান অনুভব করতাম হৃদয়ে। ব্যক্তি থেকে সম্পর্ক তখন পারিবারিক পর্যায় ছাড়িয়ে অন্য এক মাত্রায় পৌঁছে যায়। এক পর্যায়ে হার্দিক সম্পর্ক হয় সুনামকণ্ঠ-এর তৎকালিন বার্তা সম্পাদক জনাব শাহার উদ্দিন প্রিয় শাহার ভাইয়ের সাথে। এই গুণী মানুষটি তখন ডেইলি অবজারভার পত্রিকার সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি। শাহার ভাইয়ের মতো মানবতাবাদী মনখোলা বন্ধুবৎসল মানুষ আমি খুবই কম দেখেছি। আমাদের কতো সময় যে কেটেছে হৃদয়ের উষ্ণতাপূর্ণ গল্পগুজবে এর ইয়ত্তা নেই। শাহার ভাইয়ের কলম ‘তুচ্ছ’ জিনিসকেও মহিমান্বিত করে তুলতো। তাঁর লেখার আমি এক দারুণ ভক্ত ছিলোম। সময় সুযোগ পেলেই অথবা আমি একদিন ‘সুনামকণ্ঠে’ না গেলে শাহার ভাই নতুনপাড়াস্থ আমার বাসায় চলে আসতেন। হায় ফেলে আসা দিন! আজ এসব লিখতে গিয়ে চোখ জলে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। প্রিয় শাহার ভাই আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
সাপ্তাহিক সুনামকণ্ঠেই ঘনিষ্ঠতা হয় কবি মুহম্মদ তোবারক আলীর সাথে। সুনামকণ্ঠের জনপ্রিয় কলাম ‘পথে যেতে যেতে’ এর লেখক তোবারক ভাই একজন মিশুক মনের সহজ সরল লোক। মানুষকে আপন করে নিতে তার জুড়ি নেই। সরকারের গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি করলেও অসাধারণ লিমেরিকসহ নানা বিষয়ের লেখালেখিতে তার দক্ষতা অপরিসীম। তিনি এখন অবসর জীবন যাপন করছেন। তোবারক ভাই আমি সুনামগঞ্জ ছেড়ে আসার কিছুদিন আগে সিলেট চলে আসেন। আমিও সিলেট চলে আসার পর তোবারক ভাইয়ের সাথে পুনরায় গাঁটছড়া বাঁধা হয়। শুরু হয় সিলেট সাহিত্য পরিষদসহ সিলেটের সাহিত্য আন্দোলনে এক সাথে চলা।
সুনামকণ্ঠ-এর সাথে নিবিড়তার এক পর্যায়ে বিজনদার আগ্রহে এবং আমার পরামর্শে গঠিত হয় ‘সুনামকণ্ঠ সাহিত্য পরিষদ’। এজন্য সভা ডাকা হলে সর্বসম্মতিক্রমে আমাকেই নির্বাচিত করা হলো সভাপতি। বলে রাখা ভালো ‘সুনামকণ্ঠ পাঠক ফোরাম’ এর আগে থেকেই ছিল। তারপর একসময় যাত্রা শুরু হয় ‘সুনামকণ্ঠ সাহিত্য পাতা’র। প্রস্তাব করে পড়ি বিপদে। ‘কণ্ঠসাহিত্য’ বিভাগেরও দায়িত্ব পড়ে আমার কাঁধে। দীর্ঘকাল সেটা পরিচালনা করলাম। এটা পরিচালনা করতে গিয়ে ভীষণ উপভোগ করতাম। এত্তো লেখা পেতাম যা আমাকে বিস্মিত করতো। এর মধ্যে অনেক প্রতিশ্রুতিশীল লেখাও থাকতো। ‘কণ্ঠসাহিত্য’ পাতায় প্রথম লেখা ছাপানো অনেকেই আজ স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিতÑ যেটা ভাবলেও খুবই পুলক জাগে মনে। ‘কণ্ঠসাহিত্য’ সম্পাদনা করার ক্ষেত্রে ছিলাম একেবারেই স্বাধীন। বিজনদা বা শাহার ভাই সবার একান্ত সহায়তা ও পরামর্শে ‘কণ্ঠসাহিত্য’ পাতাকে তুমুল জনপ্রিয় করে তুলতে সক্ষম হই। এগুলো আজ মধুরতর স্মৃতি।
সাপ্তাহিক সুনামকণ্ঠ বা সুনামকণ্ঠ সাহিত্য পরিষদের মাধ্যমে সুনামগঞ্জে আমরা অনেকগুলো প্রোগ্রাম করি। যেগুলোতে সুনামগঞ্জের সব কীর্তিমানসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন। সুনামগঞ্জে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং সাংবাদিক জগতের তখনকার (২০০৪-২০১০) আলোকিতদের সাথে আমার যে সখ্যতা গড়ে উঠে তার জন্য নিজেকে গৌরবান্বিত বোধ করি। এজন্য বিজনদার কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সুনামকণ্ঠের সাথে বিশ্বজিৎ সেন পাপনের নামটি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। সুনামকণ্ঠ-এর অগ্রযাত্রায় পাপনের অবদান অনস্বীকার্য। যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান পাপন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষে করে সুনামকণ্ঠকেই গলার মালা করে নেয়। তার শ্রমসাধ্য আত্মনিবেদন সুনামকণ্ঠ-এর জন্য এক শোভন অলংকার। এছাড়া সুনামকণ্ঠের কল্যাণেই সাংবাদিক রেজাউল করিমসহ আরও অনেকের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা অস্বীকার করার নয়।
আমি বদলি হয়ে সিলেট চলে আসি ২০১০ সালের নভেম্বরে। কিন্তু বিজনদার সাথে, সুনামকণ্ঠ-এর আমার হৃদ্যতার কোনো ভাটা পড়েনি। মধুর স্মৃতিগুলো অম্লান হয়ে থাকবেই অনন্তকাল। সুখের বিষয় ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রিয় সুনামকণ্ঠ দৈনিকে রূপ পরিগ্রহ করে। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজহিতৈষী জনাব মো. জিয়াউল হক দৈনিক সুনামকণ্ঠ’-এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে পত্রিকাটিকে এগিয়ে নিতে কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছেন। শ্রদ্ধেয় বিজন সেন রায়ের দক্ষ সম্পাদনায় সুনামগঞ্জের আপামর জনগণের প্রাণের এই পত্রিকাটি সুসময় এবং দুঃসময় পেরিয়ে এখন এক মহিরূহে পরিণত হয়েছে। আমি এর উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com