সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
সিলেটে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসের হিসাবে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন প্রায় ১০ গুণে দাঁড়িয়েছে। এ হার ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার চেয়ে অনেক বেশি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের হিসাব বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সেখানে ২ হাজার ৩৩৬টি বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়ে। ২০১৯ সালের পুরো বছরে সংখ্যাটি ছিল ২৯১। মাসিক গড় বিবেচনায় নিলে বিচ্ছেদের আবেদন সাড়ে ৯ গুণ ছাড়িয়ে যায়।
শুধু করোনাকালে সিলেটে কত বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছে, তারও একটি হিসাব পাওয়া যায় সিটি করপোরেশন থেকে। করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে জমা পড়া আবেদনের ২০০টির মতো জানুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময়ের। বাকি ২ হাজার ১০০টির বেশি আবেদন করোনাকালে হয় বলে ধরে নেওয়া যায়।
দেশে করোনায় আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এরপর ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি শুরু হয়, যা চলে মে মাসের শেষ পর্যন্ত। করোনাকালে বিচ্ছেদের আবেদন কেন বাড়ল, তার একটি ব্যাখ্যা দেন জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সিলেট বিভাগীয় প্রধান সৈয়দা শিরিনা আক্তার। তাঁর পর্যবেক্ষণ হলো, করোনা পরিস্থিতিতে অনেকে অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক চাপে পড়েছেন। আগে পুরুষেরা ঘরের বাইরে বেশি সময় কাটাতেন, করোনাকালে কাটিয়েছেন ঘরে। নারীর ক্ষেত্রেও কাজের চাপ বেড়েছে। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে সহনশীলতা কমে গেছে। ধৈর্যচ্যুতি ঘটছে। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ বেড়েছে। এর জের ধরে বিচ্ছেদের মতো পরিস্থিতির দিকেও অনেকে যাচ্ছেন।
সিলেট নগরের ভেতরে যেসব দ¤পতি বিচ্ছেদ চান, তাঁদের সিটি করপোরেশনের আইন শাখায় আবেদন করতে হয়। আবেদন জমার পর নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে বিষয়টি সুরাহার জন্য প্রতি মাসে একবার করে টানা তিন দফা নোটিশ দেওয়া হয়। এরপর উভয় পক্ষকে নিয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র শুনানিতে বসে সমাধানের চেষ্টা চালান। তাতেও কাজ না হলে বিচ্ছেদ কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ২৩টি বিচ্ছেদের আবেদন কার্যকর হয়েছে। করোনার সংক্রমণের কারণে গত মার্চের পর থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুনানি বন্ধ ছিল। অক্টোবর মাসে দুই দিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
সিটি করপোরেশনে বিচ্ছেদ চেয়ে জমা পড়া আবেদন ঘেঁটে দেখা গেছে, বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে পারিবারিক কলহ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, পরকীয়া, যৌতুক, মাদক সেবন করে নির্যাতন, প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগহীনতা এবং যৌন অক্ষমতা কারণ হিসেবে বেশি উল্লেখ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, আইনজীবীরা মূলত তাঁদের নির্দিষ্ট ফরমে গৎবাঁধা কারণ দেখিয়ে আবেদন করান।
করোনাকাল যে কারও কারও পরিবারে সংকট তৈরি করেছে, তা জানা যায় বিচ্ছেদে আগ্রহী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিচ্ছেদ চেয়ে আবেদনকারী এক নারী বলেন, করোনাকালের শুরুর দিকে সাধারণ ছুটির সময় তাঁর স্বামীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইন্টারনেটে আসক্তি চলে আসে। একদিন এ নিয়ে কথা কাটাকাটির পর স্বামী তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন। এই নারী আরও বলেন, ফেসবুক সূত্রে তাঁর স্বামী এক নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ স¤পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। তাই স¤পর্ক আর টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না।
বিচ্ছেদের আবেদন ঘেঁটে আরও দেখা যায়, চলতি বছর আবেদনকারীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা প্রায় ৬৫ শতাংশ। বিচ্ছেদে আগ্রহীদের তালিকায় নতুন দ¤পতি যেমন রয়েছেন, তেমনি বয়স্করাও। – প্রথম আলো
সিলেটে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন বেড়ে ১০ গুণ

Leave a Reply