স্টাফ রিপোর্টার ::
সুজিত কুমার দে, কামরুল হাসান, হাফিজুর রহমান সুমন, সুচি দাস, গৌরব দাস, সজিব কুমার দে, হামিম মেহেদী, শিরিনা আক্তার, হাফসা আক্তার ইভাসহ ১৫ জন মেধাবী শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর তারা যখন স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে উত্তীর্ণ হয়েও ভর্তি হতে পারছিলেন না তখন তাদের দুরাবস্থার কথা শুনে এগিয়ে আসেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। তিনি জেলা প্রশাসনের পক্ষ তাদের মতো অন্তত অর্ধ শতাধিক মেধাবীকে নগদ টাকা দিয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেন। পরবর্তীতে তাদেরকে বইসহ পরিবারকেও সরকারিভাবে সহায়তা প্রদান করেন।
সদ্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের বদলির খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে তার কার্যালয়ে সপরিবারে ছুটে আসে বিভিন্ন সময়ে সহায়তাপ্রাপ্ত মেধাবী শিক্ষার্থীরা। তারা অশ্রুসজল ও ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদকে সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা জানান। এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ প্রত্যেককে মুজিববর্ষের লাল সবুজ ছাতা উপহার, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং আসা-যাওয়ার নগদ সহায়তা দেন। দুই মেধাবী হতদরিদ্র শিক্ষার্থীকে দুটি সেলাই মেশিনও উপহারও দেন তিনি। তিনি তাদের গ্রুপের নামকরণ করেন ‘বন্ধন-২০২০’। তাদেরকে একই বন্ধনে থেকে আগামীর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার নির্দেশনা দেন।
শাবিপ্রবির মেধাবী ছাত্র হাফিজুর রহমান সুমন বলেন, আমার লেখাপড়া থেমে গিয়েছিল। ডিসি স্যার ডেকে এনে ভর্তির টাকা দিয়েছিলেন। পরে আমার মাকে একটি সেলাই মেশিন ও ঘরের জন্য টিন বরাদ্দ দিয়েছিলেন।
মেডিকেল ছাত্রী সুচি দাস বলেন, আমার ও আমার ভাইয়ের উচ্চশিক্ষার পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জেলা প্রশাসক স্যার ভর্তির টাকা দিয়ে উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করেছেন।
শাবিপ্রবি ছাত্রী হাফসা আক্তার ইভা জানালেন, ভর্তি নিয়ে টেনশনে ছিলেন। পরে জেলা প্রশাসক নগদ টাকা দিয়ে তাকে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেন। এভাবে প্রত্যেক শিক্ষার্থী তাদের সহায়তাপ্রাপ্তির কথা তুলে ধরেন।
দুই পা নেই মেধাবী শিক্ষার্থী সুজিত কুমার দে’র। সেও বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসকের সহযোগিতা পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছিল। এসময় সে জানায়, তার উচ্চশিক্ষার খরচসহ নানা সময়ে সহযোগিতা করেছেন জেলা প্রশাসক। তার মায়ের মৃত্যুর পরও তিনি তাকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছিলেন। এভাবে উপস্থিত ১৫ জন শিক্ষার্থী আবেগাপ্লুত হয়ে তাদের সহায়তাপ্রাপ্তির কথা তুলে ধরেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ মেধাবী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, জাতি গঠনে তোমাদেরকে একই ছাতার তলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, তোমরা কখনো জীবনযুদ্ধে হেরোনা। যতই কষ্ট হোক থেমে থেকোনা। জীবনযুদ্ধে জিততেই হবে। সরকার মেধাবীদের সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি জানান। এসময় তিনি উপস্থিত ১৫ জন মেধাবীর হাতে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী অটোগ্রাফসহ প্রদান করেন। জাতির জনকের আত্মত্যাগের স্মারক এই গ্রন্থটি আরও ৯৯জন শিক্ষার্থীকে পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। তাছাড়া তাদের প্রত্যেককে লাল সবুজ রঙের মুজিববর্ষের লগো সম্বলিত ছাতা উপহারও দেন তিনি।
এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইটি জসিম উদ্দিন, সাংবাদিক শামস শামীম, এ আর জুয়েল প্রমুখ।