স্টাফ রিপোর্টার ::
নদীর পাড় থেকে বেশ দূরেই ছিল সিরাজ মিয়ার একমাত্র দোকানভিটে। এখানে মুদি দোকানের ব্যবসার ওপর নির্ভর করেই তার সাংসারিক ব্যয় নির্বাহ চলতো কোনোরকমে। সামান্য আয়ের একমাত্র অবলম্বন এই মুদি দোকান-ভিটের দৃশ্যমান কোনো অস্তিত্বই এখন আর নেই! মাস ছয়েক আগে নদীগর্ভে বিলীন হয়েগেছে। সাথে নিজের হাতে লাগানো মূল্যবান বনজ ও ফলজ গাছগুলোও পানির স্রোতে ভেসে গেছে চোখের সামনে। বাজারের নিজস্ব দোকান ভিটে, গাছগাছালি নদীগর্ভে হারিয়ে এখন অন্যত্র ভাড়াটে দোকানে মুদিমালের ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন সিরাজ মিয়া।
শুধু আলীপুর গ্রামের সিরাজ মিয়ার দোকান ভিটেই নয়, একই গ্রামের জাহের মিয়া, নানু মিয়া, দুলাল মিয়া, ভানু বিবি, ফিরোজ আলীসহ আরও বেশ কয়েকজনের দোকানভিটে ও বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে নদী গর্ভে। পাহাড়ি খরস্রোতা খাসিয়ামারা নদীটি এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর বাজারের ব্যবসায়ী ও আশপাশের বাসিন্দাদের জন্য। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে অব্যাহত ভাঙনে বাজারের অর্ধেক ভিটেমাটি ও দোকানপাট এবং আশপাশের বসতবাড়ি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি যেটুকু আছে সেটুকু আর কিছুদিন দৃশ্যমান থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান ভুক্তভোগীরা। এদিকে, ভাঙন রোধে এখনো কোনো ধরনের উদ্যোগ না নেওয়ায় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে বৃহত্তর আলীপুর গ্রামের একমাত্র বাজারটি। এই বাজারে ব্যবসার উপর নির্ভর করে সংসার চলে শতাধিক পরিবারের। কয়েক বছর আগেও বাজারে যাদের নিজস্ব ভিটেমাটি আর দোকানপাট ছিলো তার কোনোটিরই এখন আর দৃশ্যমান কোনো অস্তিত্ব নেই। সব হারিয়ে গেছে খরস্রোতা খাসিয়ামারা নদীগর্ভে। শুধু আলীপুর বাজারই নয়, আশপাশের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও প্রতিষ্ঠান এখন নদীর তীব্র ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলীপুর বাজারের পার্শ্ববর্তী ভানুবিবির বসতবাড়ির সিংহভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়েগেছে। ভাঙন রোধে নদীর পাড়ে বাঁশ গাছ ও ইকড় গাছ লাগিয়ে রেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুর রহিমের মালিকানাধীন একটি বিল্ডিং যেটি বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন আলীপুর সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই কার্যালয়টিও এখন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। আর মাত্র কিছু অংশ ভাঙলে এটিও যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে নদীগর্ভে। টিলাগাঁও গ্রামের মন্নাফ ডাক্তারের দোকান ভিটে, ফিরোজ আলীর বসতবাড়িটিও ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক ও ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, বাজারটি রক্ষায় পানিস¤পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য, পাউবো কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। ভাঙন রোধে এখনই কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আগামীতে এই বাজারটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। এতে বাজারের ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আলীপুর সমাজকল্যাণ পরিষদের সভাপতি মাহমুদুর রহমান রাসেল জানান, বাজারে ব্যবসায়ীসহ আশপাশের বাসিন্দারা দোকানভিটে ও বসতবাড়ি নিয়ে হুমকির মুখে রয়েছে। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে খাসিয়ামারা নদী ভাঙন রোধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাই।
সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মামুনুর রশীদ জানান, খাসিয়ামারা নদী ভাঙনে আলীপুর বাজার ও আশাপাশের এলাকা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিষয়টি আগেও আমি প্রশাসনকে অবহিত করেছি। আবারো দাবি জানাই ভাঙনরোধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হোক।