১৯৭১-য়ে বাঙালির প্রতিরোধ যুদ্ধ, হানাদারদের বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই, ৩০ লক্ষ প্রাণ বিসর্জন, সাড়ে চার লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমের দাম চুকিয়ে শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস বাঙালিকে বিশ্ব ইতিহাসে গৌরবান্বিত করে বীরের জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তারপর এখন থেকে ১ বছর কম অর্ধশতাব্দী অতিক্রান্তের পরও জাতিগত কষ্ট ছাড়ে না এই জাতিকে। এই জাতির ভেতেরে বিশ্বাসঘাতকরা যেমন একাত্তরের সময়ে ছিল এখনও তারা রয়েই গেছে এবং ক্রমাগত বিরোধিতা তারা করছেই, বিভিন্ন রকমফেরে তার প্রকাশ ঘটছে যত্রতত্র। এই কষ্ট জাতির অন্তরে কাঁটার মতো বিদ্ধ হয়ে আছে। ইদানিং তারা (দেশের ভেতেরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা বিশ্বাসঘাতকরা) জাতীয় পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙায় হাত লাগিয়েছে এবং স্থানীয় পর্যায়ে দিরাই-শাল্লার পরিপ্রেক্ষিতে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধিতায় তৎপর হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙায় যারা হাত লাগিয়েছে তারা নব্যরাজাকার এবং দিরাই-শাল্লায় যারা একাত্তরের বীরাঙ্গনা নারীর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির বিরোধিতাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধিতা করছে তারাও চূড়ান্ত অর্থে নব্যরাজাকার। তারা (এই নব্যরাজাকাররা) মুক্তিযুদ্ধের পরপরই রহস্যজনক কারণে দিরাই শাল্লার শক্তিশালী ও ধনাঢ্য রাজাকার গোষ্ঠীর চামচা হয়ে গিয়ে স্বাধীন দেশের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় রাজাকার রাজত্ব কায়েমে সক্রিয় হয়ে উঠে এবং বিপরীতে মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা পরিবারগুলোর সার্বিক বিরুদ্ধাচরণকে নিজেদের কর্তব্য বিবেচনা করে এবং এখনও করছে। বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে এই সত্য প্রতিপন্ন হয়। এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে গত সোমবার দুপুরে, দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। দৈনিক সুনামকণ্ঠের প্রতিবেদন (০৭ ডিসেম্বর ২০২০) থেকে জানা যায় যে, নিজ এলাকা পেরুয়ার সদ্যপ্রয়াত একাত্তরে নির্যাতিত নারী গীতা রায়ের জামুকার তদন্তের বিষয়ে রোববার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গীতা রায়ের স্বজনদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কমরেড অমরচাঁন দাস। এমসয় অমরচাঁন দাসকে দেখে এক ‘দায়িত্বশীল’ ব্যক্তি হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠেন এবং অমরচাঁন দাসকে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালাগালি শুরু করেন। তার সঙ্গে আরও একজন গালাগালিতে শরিক হন। এই রকম একটি ঘটনা প্রমাণ করে যে, ডাল মে কুচ কলা হ্যায়। প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, কোনও কারণ ছাড়াই ওই দুই ব্যক্তি মিলে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। কিন্তু অভিজ্ঞ মহলের ধারণা এর পেছনে দিরাই শাল্লার রাজনীতিতে বিখ্যাত রাজাকার আব্দুল খালেকের পারিবারিক প্রভাব প্রতিপত্তি সমুন্নত রাখার কার্যক্রমের সঙ্গে একটি গভীর যোগাযোগ আছে। আপাতত বিষয়টিকে নিয়ে আর টানাহেঁচড়া না করে কেবল বলতে চাই যে, প্রশাসনের উচিত এই রকম মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও নব্য রাজাকারদের চিহ্নিত করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।