শহীদনূর আহমেদ ::
কৃষক বেলাল উদ্দিন। অল্প কৃষিজমি আর গরু পালনের আয় দিয়েই কোনোভাবে টানাটানি করে চলছে তাঁর সংসার। জমিতে সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পাশাপাশি বিদেশি জাতের গাভী ও ষাঁড় লালন-পালনে ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি। কয়েকদিনের মধ্যেই গাভীটির বাচ্চা দেয়ার কথা। স্বপ্ন দেখেন গাভীর দুধ বিক্রি করে কিছু দেনা শোধ করার। সামনের কোরবানির ঈদে ষাঁড়টা বিক্রি করলে লক্ষাধিক টাকার পুঁজি তৈরি হবে কৃষক বেলালের। যা দিয়ে ছেলে মেয়ের পড়াশোনা আর পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। কৃষক বেলালের সকল আশা এখন শেষ। ভোর রাতে ঘুম থেকে উঠে দেখেন গোয়ালে গরু নেই। গোয়ালঘরের তালা ভেঙে গুরু দুটি চোরেরা নিয়ে গেছে। মাস সময় ধরে খোঁজাখুঁজি করেও গরুর সন্ধান মিলেনি। এ ব্যাপারে পুলিশের সহযোগিতা কামনা করলেও কোনো লাভ হয়নি। এদিকে, গুরু চুরি হওয়ার পর থেকে কৃষক বেলালের ৩ বছরের সন্তান হোসাইন পাগলপ্রায়। খেলার সাথী গাভির খোঁজ করে প্রতিদিনই কান্না করে সে। কৃষক বেলালের স্ত্রী আর পরিবারের বাকিদেরও কষ্টের শেষ নেই। চোরের খপ্পরে নিঃস্ব হওয়া কৃষক বেলালের বাড়ি ছাতক উপজেলার ছৈলা আফজালাবাদ ৩নং ওয়ার্ডের রাধানগর গ্রামে। রাধানগর গ্রামে গরু চরি একটি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীদের।
জানাগেছে, করোনাকালে এই গ্রাম থেকে চুরি হয়েছে অন্তত ১১টি গুরু। গত তিন বছরে রাধানগর গ্রামসহ ছৈলা আফজালাবাদ ইউনিয়নে গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে ২০টিরও বেশি।
স্থানীয়রা জানান, সপ্তাহ পনেরো দিনে গরুর চুরির ঘটনা ঘটছে ইউনিয়নের কোনো না কোনো গ্রামে। স্থানীয় একটি গরু চোর সিন্ডিকেট এমনটা করছে বলে ধারণা তাদের। এই সিন্ডিকেটের কেউ গোয়াল থেকে গরু চুরি, কেউ গরু অন্যত্র নিয়ে যাওয়া, আবার কেউ বিভিন্ন বাজারের কসাই বা পাইকারের কাছে গরু বিক্রি করে থাকেন। এই সিন্ডিকেটের সাথে বিভিন্ন স্তরের লোকদের যোগাযোগ রয়েছে। এর ভাগবাটোয়ারা তাদের কাছে পৌঁছে বলে অভিযোগ অনেক ভুক্তভোগীর।
এদিকে, স্থানীয় কয়েকজন চোর জেলার বিভিন্ন স্থানে গুরু ও ভেড়া বিক্রির সময় জনতার হাতে আটক হয়েছেন। এসব চোরদের আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিভিন্ন সময় চুরি হওয়া গরুর তথ্য বের হয়ে আসবে বলে জানান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরে রাধানগর গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ২টি, আম্বর আলীর ৪টি, মতিউর রহমানের দুই গাভী, হুশিয়ার আলীর ১টি, গত বছর আব্দুল মমিনের ১টি, আবুল বশরের ১টি, ইউনিয়নের খিদরা গ্রামের এক বিধবা মহিলার দুইটি, নয়াগাঁওয়ের লিলু মিয়ার ৪ টি, শফিক মিয়ার ১টিসহ অনেক কৃষকের গরু চুরি হয়েছে। তাছাড়া ছাতক উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এমন অনেক গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। গরু চুরি বন্ধে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ও বাজারে পুলিশের টহল জোরদার করার পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে গরু চোরদের আইনের আওতায় আনার দাবি ভুক্তভোগীদের।
রাধানগর গ্রামের হেলাল উদ্দিন বলেন, গতমাসে আমার দুইটি গরু চুরি হয়েছে। এই গরুর উপরেই আমার সংসার। আমি পথে বসে গেছি। গরু চুরির ব্যাপারে ছাতক থানায় মামলা দায়ের করেছি। এখনও পর্যন্ত গরুর কোনো সন্ধান পাইনি।
একই গ্রামের আম্বর আলী বলেন, গরু চুরির সাথে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলতে পারে না। প্রতি মাসেই গরু চুরির ঘটনা ঘটছে। আইনি সহযোগিতা ছাড়া চোর বের করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ানো দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে ছাতক থানার ওসি নাজিম উদ্দিন বলেন, গরু চুরি ঠেকাতে আমাদের দুইটি টিম কাজ করছে। ইতোমধ্যে দুইটি মামলা নিয়ে আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে চোরদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
ছাতকে বেড়েছে গরু চুরি : নিঃস্ব হচ্ছে কৃষক, উদ্যোক্তা

Leave a Reply