আশিস রহমান ::
‘ওই জায়গাটা জুড়ে আমার ৫ একর জমি ছিল, এদিকে ছিল বসতবাড়ি, ওপাশে ছিল ফসলি জমি। এই জমিতে উৎপাদিত ফসল দিয়েই চলতো আমাদের পুরো পরিবার। সেই বাড়িও নেই, ফসলি জমিও নেই। পুরোটাই বালুচর। আমার এখন কিছুই নেই। সব শেষ। বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে এখন পরের জমিতে ঘর করে থাকি। ছবি তুলে কি হবে? কেউ কোনো খোঁজ-খবর পর্যন্ত নেয়না! আল্লাহ ছাড়া আমাদের কেউ নেই।’
নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে নিজের হারানো জমির অবস্থান দেখাচ্ছিলেন আর এভাবেই এই প্রতিবেদককে বলছিলেন নদী ভাঙনে বাস্তুচ্যুত বয়োবৃদ্ধ মো. আবু সিদ্দিক।
শুধু মো. আবু সিদ্দিকই নন, সাংবাদিকদের উপস্থিতি জানতে পেরে ছুটে আসেন তার মতো বাস্তুচ্যুত আব্দুস ছাত্তার, জব্বার, আব্দুল হাই, ফালু মিয়া, শাহাবুদ্দিন, শাহজাহান, কামাল, লিলু, ফুল মিয়া, আবুল মিয়া, হানিফ আলী, ইসমাইল হোসেন, ময়মনা, ফজিলা, আতিকা, লিপি, হালিমাসহ আরও অন্তত ১০টি পরিবারের সদস্যরা। একে একে সবাই তাদের অতীত বসতভিটা ও ফসলি জমি হারানোর কথা জানান। জানান নিজেদের অসহায়ত্বের কথা। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের ওপর উদাসীনতার অভিযোগ এনে অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করেন।
দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন নরসিংপুর। এই ইউনিয়নের পূর্ব চাইরগাঁও গ্রামের বুক চিড়ে সীমান্তের ওপারে ভারত থেকে উৎপন্ন হওয়া খরস্রোতা সোনালী চেলা নদী বাংলাদেশের ভেতরে প্রবাহিত হয়েছে। বালি-পাথরের জন্য নদীটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব থাকলেও এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এখন আতঙ্কের নাম সোনালী চেলা। এ নদীর নাম শুনলেই তাদের চোখে ভেসে উঠে হারানো বসতবাড়ি, ফসলি জমির চিত্র। বছরের পর বছর সোনালী চেলা নদীর তীব্র ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে এখন উদ্বাস্তুদের জীবন বেছে নিয়েছেন অনেকেই। অথচ এককালে তাদের সবই ছিল। নদী ভাঙনে এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আজোবধি সরকারিভাবে কোনো ধরনের পুনর্বাসন কিংবা সহায়তার উদ্যোগ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোনালী চেলা নদী ভাঙন এখনো অব্যাহত রয়েছে। ভাঙন কবলিত অংশ থেকে নিজেদের বসতঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন অনেকেই। দিন দিন ভাঙনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। ভাঙনে ইতোমধ্যে বিজিবির টহল চৌকি, কাস্টমস অফিস, বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনসহ বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে গেছে।
বিজিবির টহল চৌকি ও কাস্টমস অফিস অন্যত্র স্থাপন করা হয়েছে। ঘর না থাকায় অনেক অসহায় পরিবারকে অস্থায়ী খুপরি বানিয়ে বসবাস করতে দেখা গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন জানান, নিজের জমি হারিয়ে পরের জমিতে ঘর বানিয়ে থাকছি। আমরাও তো এদেশের বাসিন্দা। এমপি, চেয়ারম্যান কিংবা প্রশাসনের লোকজন কেউ আমাদের খোঁজ খবর রাখেনি। আমরা কোন অবস্থায় আছি তা দেখার মতো কেউ নেই। কার কাছে যাব, কারা আমাদেরকে সহযোগিতা করবে এই ভরসা খোঁজে পাচ্ছিনা।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী সোহেল আহমেদ জানান, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এখানকার লোকজন খুবই কষ্টে আছে। তাদেরকে দ্রুত পুনর্বাসনের দাবি জানাই।
দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুর রহিম বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। ইউএনও এবং এমপি মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করুন।
এ ব্যাপারে জানতে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানার মোবাইলফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।