1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫২ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ভূমি অফিসে নামজারি রেজিস্ট্রারের ‘পাতাখেকো’দের দৌরাত্ম্য

  • আপডেট সময় বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২০

বিশেষ প্রতিনিধি ::
ছাতক উপজেলার সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আওতাধীন ৪৫টি মৌজার জমি খারিজ সংক্রান্ত রেজিস্ট্রারের (ভলিউম) পাতা গায়েব করে মূল্যবান জমি-জমার মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য গায়েবের গুরুতর অপরাধ করে যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। রেজিস্ট্রারের পাতা গায়েব হওয়ায় সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সেবাপ্রার্থী জনগণ। ফলে নাম খারিজে দীর্ঘসূত্রিতার বেড়াজালে ঘুরপাক খাচ্ছেন তারা।
ক্ষেত্র বিশেষে ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসে রক্ষিত রেজিস্ট্রারে মধ্যে মিল না থাকায় ভুয়া নাম খারিজ করে অন্যের মূল্যবান ভূমি দখল করছে প্রভাবশালীরা। সঠিক কাগজপত্র প্রদর্শন করেও হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনেকে।
জনস্বার্থে দুটি অফিসের রেজিস্ট্রারের মধ্যে সমন্বয়পূর্বক জমি সংক্রান্ত স্পর্শকাতর তথ্য সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করে ভলিউমের ‘পাতাখেকো’দের দৌরাত্ম্য বন্ধের দাবি সেবাপ্রার্থীদের।
সুনামগঞ্জ জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির বলেন, নামজারি জমির মালিকানার স্বপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড। এই রেকর্ড জমিতের মালিকের দখল প্রমাণ করে। এটি ছাড়া জমির খাজনা পরিশোধ করা যায় না। পাশাপাশি জমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রেও নামজারির কাগজ প্রদর্শন করতে হয়। ফলে ভূমি অফিসে যদি এটি সঠিকভাবে সংরক্ষিত না থাকে তবে বিবাদিত জমির দুটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসন জটিল হয়ে ওঠে।
ছাতক ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আওতাধীন তাতিকোনা মৌজার এসএ ৩ খতিয়ানের ২৯৮ নম্বর দাগের ৬৯ শতক এবং ১৭১ নম্বর খতিয়ানের ১৩ নম্বর দাগে ২৫ শতক ভূমি তাতিকোনা গ্রামের মৃত রথিন্দ্র বল্লভ চৌধুরীর ছেলে বিনায়েক চৌধুরীর নামে ১১৪/১৯৯৫-৯৬ নম্বর নামজারি মোকদ্দমার আদেশে ৩৪৪ নম্বর খতিয়ান খোলা হয়। ওই খতিয়ান থেকে বিনায়ক চৌধুরী কর্তৃক নিযুক্ত আম মোক্তারের কাছ থেকে গত ১ সেপ্টেম্বর (দলিল নম্বর ১৭৩৫ ও ১৭৩৭) একই গ্রামের আজেফর আলী, তোয়াহিদ আলী ও আদরি বেগম পৃথক দুটি দলিলের মাধ্যমে ৬ শতক ভূমি ক্রয় করেন। ১৮ নভেম্বর পৃথক দুটি নাম খারিজ মামলার শুনানির সময় ‘জাল কাগজপত্র’ উপস্থাপনের অভিযোগে আটক হন ক্রেতার প্রতিনিধি নাজমুল ইসলাম ও ভূমি দাতার আম মোক্তার কবির মিয়া।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, যে খতিয়ানকে জাল আখ্যায়িত করে সাত সেবাপ্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে, সেই নাম খারিজ মামলার আবেদন যাচাই-বাছাই পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গত ১৮ অক্টোবর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে লিখিত নির্দেশ দেন ছাতক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাপস শীল। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কর্তৃক পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “আবেদনকারীগণ আবেদনকৃত জমিতে সরেজমিনে দখলে আছেন। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় তাদের জমির প্রাপ্যতা সঠিক আছে। দেওয়ানি মামলা রেজিস্ট্রার পর্যালোচনায় আলোচ্য জমির বিষয়ে কোনও দেওয়ানি মামলা বা আদালতের নিষেধাজ্ঞা দেখা যায় না। অত্র জমি অর্পিত, পরিত্যক্ত, খাস বা সরকারি কোনও স্বার্থযুক্ত নয়। জমির উল্লেখিত শ্রেণি সঠিক আছে। আবেদনকারীদের নামে নামজারি ও জমাভাগের সুপারিশ করেছেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা।”
পরবর্তীতে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) বিনায়েক চৌধুরীর নামে ১১৪/১৯৯৫-৯৬ নম্বর নামজারি মোকদ্দমার আদেশ বলে খোলা ৩৪৪ খতিয়ান তার অফিসের রেজিস্ট্রারে অন্য নামে রয়েছে দাবি করে ভূমি দাতা, ক্রেতা এবং ক্রেতা ও বিক্রেতার প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মামলায় গ্রেফতার সাংবাদিক নাজমুল ইসলামের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জালিয়াতির মাধ্যমে করা ৪৮টি নামজারি বাতিল করে দেন তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ হাফিজুর রহমান। এছাড়া ভূমি অফিসের অনিয়মের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিবেদন করে স্বার্থান্বেষী মহলের রোষানলে ছিলেন তিনি।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, বিনায়েক চৌধুরীর নামে আগত ৩৪৪ খতিয়ানে ছাতক ইউনিয়ন ভূমি অফিসের রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ আছে। সেই রেজিস্ট্রার বলে গত ৩০ জুলাই ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ১৭ হাজার টাকা খাজনা পরিশোধ করেন জমির মালিক। খাজনা আদায়ের রশিদে ছাতক ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার সিলমোহরযুক্ত স্বাক্ষর রয়েছে।
এদিকে, অপর একটি নাম খারিজ মামলা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উল্লেখিত ৩ নম্বর খতিয়ানের ১২১ নম্বর দাগের ৩ শতক ভূমি গত ২০ জুলাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাপস শীলের স্বাক্ষরে ৮৭৬ নম্বর খতিয়ানে নাম খারিজ করান ছাতক পৌর শহরে মণ্ডলিভোগ এলাকার বাসিন্দা শামীম মিয়া।
সূত্র জানায়, অফিসের নাম খারিজ রেজিস্ট্রার দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। একটি অসাধু চক্র অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য রেজিস্ট্রার থেকে পাতা ছিঁড়ে ফেলে মূল্যবান ভূমি মালিকানার স্বপক্ষের নথি গায়েব করে আসছে। এতে দীর্ঘমেয়াদী ভোগান্তিতে পড়ছেন জমির মালিকরা।
ছাতক সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রমেন্দ্র নারায়ণ দাস বলেন, আমি দুই মাস আগে এই অফিসে যোগ দিয়েছি। এসে দেখেছি নামজারি রেজিস্ট্রারের অনেক পাতা ছেঁড়া। একটি চক্র পাতা গায়েবের সাথে যুগের পর যুগ ধরে জড়িত। আমরা নিয়মিত বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে আসছি।
ছাতক উপজেলা সহকারী কমিশানার (ভূমি) তাপস শীল বলেন, রেজিস্ট্রারের পাতা অনেক দিন আগ থেকে ছিঁড়াফাড়া। এটা একদিনে হয়নি। আমরা এর বিপরীতি নিয়মিত অ্যাকশনে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি নাম খারিজ মামলার শুনানির সময় জাল কাগজপত্র উপস্থাপন করায় সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি আইনানুগ প্রক্রিয়ায় চলবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com