‘শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নে কমিটি গঠন’, কিংবা ‘না ফেরার দেশে গীতা রায় : বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি মেলেনি জীবদ্দশায়’, অথবা ‘কানাডায় সরকারি কর্মকর্তাদের বাড়ির তালিকা চেয়েছে দুদক’ এই তিনটি সংবাদ শিরোনাম বিগত দিনের তিন ধরনের পশ্চাৎপদতার বিরুদ্ধে আজকের বাংলাদেশের যুদ্ধ ঘোষণার সংবাদ পরিবেশন করছে এবং আদতে এই তিনটি ভিন্ন ভিন্ন পশ্চাৎপদতার উৎস একই। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধোত্তর যে-প্রগতিশীল শাসন-প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার দরকার ছিল তা পারা যায় নি এবং পেরে উঠার চেষ্টাকে অঙ্কুরেই থামিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং দেশকে পূর্বেকার পাকিস্তানি আদলে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে, এবং প্রকারান্তরে দেশ পিছিয়ে পড়েছে, অর্থাৎ পশ্চাৎপদতর শিকারে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সময় বড়বেশি নির্মম, এই পিছিয়ে পড়া থেকে এগিয়ে যাওয়ার পথে পথ মাপতেই হচ্ছে বাংলাদেশকে। যে-শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ভুলিয়ে দেওয়া, যে-বীরাঙ্গনাদের সম্মান না দেওয়ার সচেতন প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে দশকের পর দশক তার বিপরীতে দেশকে আজ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়ন, বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি প্রদানে উদ্যোগ নিতে হচ্ছে দেরি করে হলেও। প্রশাসনের যে-প্রতিক্রিয়াশীল অংশ এবংবিধ প্রগতিমুখিন কাজ আটকে রেখে, দেশসেবা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আত্মসেবায় নিমগ্ন হয়ে বিদেশে বাড়ি-গাড়ি-অর্থসম্পদের পাহাড় গড়েছেন, সেইসব দেশদ্রোহী প্রশাসনিক প্রতারকদের তালিকার সন্ধানে নেমেছে দুদক। এইসব কার্যক্রম কীছুটা হলেও দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করে তোলছে। মানুষ আশা করছে, যুদ্ধ করে স্বাধীন করা দেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিপত্তির বিনাশ ঘটবে, পত্রিকায় আর ছাপা হবে না, ‘দালার আব্দুল খালেকের লোকজন এখনো এলাকার রাজনীতিতে সর্বেসর্বা। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারো নেই’। সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। দেশ বদলে যাবে, দেশ বদলে যাক। জয় বাংলা।