1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

একদিনে ৪৭ মামলার রায় : ৪৬টি ভাঙা সংসার জোড়া লাগল আদালতে

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০

বিশেষ প্রতিনিধি ::
স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করা ৪৭টি পৃথক মামলার আসামিকে সাজা না দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দাম্পত্য সুন্দরভাবে পরিচালনার শর্তে মুক্তি এক ব্যতিক্রমী রায় দিয়েছেন আদালত। বুধবার বেলা ১টায় সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই আদেশ দেন। নানা বিরোধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে করা ৪৭টি মামলার রায় দিয়েছেন। এর মধ্যে এক ব্যক্তির দুই স্ত্রী, তাঁরা দুজনই স্বামীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগে মামলা করেছিলেন। মামলাগুলো আপসে নি®পত্তি হওয়ায় আদালত সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন। এতে করে স্বামীর ঘরে ফিরেছেন স্ত্রী। সন্তানদের কেউ কেউ ছিল মায়ের সঙ্গে, আবার কেউ বাবার সঙ্গে। এখন তারা মা-বাবা দুজনের সঙ্গে থাকবেন। তবে এসব দ¤পতিকে মানতে হবে কয়েকটি শর্ত। এ ব্যাপারে আদালতে লিখিত অঙ্গীকার করেছেন তাঁরা।
এদিকে, আদালতের হস্তক্ষেপে অভিযুক্ত স্বামীরা নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফিরে আসছেন, এমন খবর পেয়ে ফুল নিয়ে এজলাসের দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন মামলার বাদি স্ত্রীরা। এ সময় অনেক স্ত্রীকে নিজের শিশু সন্তান কোলে নিয়ে স্বামীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্যাতনের শিকার হয়ে এই ৪৮ নারী তাদের স্বামীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছিলেন। মামলার ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধপূর্ণ অবস্থান তৈরি হয়। এতে তাদের সন্তানরা জীবন, নিরাপত্তা, খাদ্য, বাসস্থান, আদর-যত্ন, ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হন। শিশুদের বর্তমান ও ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে ডুবে যায়। স্ত্রী-স্বামীর ঘরছাড়া হয়ে সন্তান-সন্ততি নিয়ে এক অনিশ্চিত জীবনের পথে যাত্রা করেন। এমন অনিশ্চয়তার জীবনের অবসান ঘটিয়ে সংসারে-সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্যরে পরিবেশ সৃষ্টি করতে আসামিদের খালাস দেন আদালত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, শাস্তি নয়, শান্তি, সম্প্রীতির সুবাতাস আর ফুলের গন্ধ বিলিয়ে মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে ৪৬টি পরিবারকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করে স্ত্রীকে স্বামীর নিকট, আর স্বামীকে স্ত্রীর নিকট এবং সন্তানদেরকে তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল মা-বাবা উভয়ের সান্নিধ্য লাভের জন্য এই রায় দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, আদালত কর্তৃক ৪৭ মামলার আসামিদের খালাস প্রদানের রায়ের পর স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এ সময় আদালত আঙিনায় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায় অনেক স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের। ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ানো ৪৬টি সংসার আদালতের রায়ে জোড়া লাগার এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন মামলার বাদি-বিবাদি, আইনজীবীসহ সাধারণ মানুষ।
তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর এলাকার মোহাম্মদ মিয়া বলেন, ১৪ বছর আগে একই গ্রামের আমিনা খাতুনকে বিয়ে করি। আমাদের সংসারে চারটি সন্তান রয়েছে। দেড় বছর আগে পারিবারিক বিরোধের জেরে স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। মামলায় তিন মাস হাজতবাস করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, মামলার ফলে আমাদের সংসার ভাঙার উপক্রম দেখা দেয়। সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আদালতের এমন রায়ে আমার ভাঙা সংসার জোড়া লেগেছে। আমি আমার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাকি জীবন সুখে-শান্তিতে কাটাতে চাই।
সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাড. নান্টু রায় বলেন, এই রায় একটা নজির। আদালত নিজে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সহায়তায় এই মামলাগুলো আপসে নি®পত্তির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সংসারে বিভিন্নভাবে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে নারীরা এসব মামলা করেছিলেন। মামলার কারণে পারিবারিক দ্বন্দ্ব-বিভেদ আরও বাড়ে। আদালতের ব্যতিক্রমী এ রায় সমাজে একটা ইতিবাচক বার্তা দেবে।
সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন বলেন, সুনামগঞ্জের আদালতের ইতিহাসে এটি একটি ব্যতিক্রমী রায়। আদালতের হস্তক্ষেপে ভাঙনের দ্বারাপ্রান্তে দাঁড়ানো সংসারগুলোতে শান্তির সুবাতাস ফিরে আসবে। এতে পারিবারিক ও সামাজিক ভিত্তি মজবুত হবে। তিনি আরও বলেন, এমন রায়ে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com