গতকালের (২৩ নভেম্বর ২০২০) একটি জাতীয় সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘চাকরি হারালেন মাদকাসক্ত ১০ পুলিশ’। বাংলাদেশে সাধারণত সরকারি চাকরি সহজে কেউ হারায় না, বিদ্যমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সাধারণ লোকজনের ধারণা এমনই। এদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকে চাকরিতান্ত্রিকতা বিস্তারের স্বার্থে এভাবেই আইন তৈরি করা হয়েছে যে, অধিকাংশ সরকারি চাকুরে চাকুরি জীবনে যতো অনিয়মই করুন না কেন নিয়মমাফিক চাকুরির শেষ দিন পর্যন্ত চাকুরিতে বহাল থাকতে পারেন। উপর্যুক্ত শিরোনাম পাঠ করার পর, কারও কারও এইরূপ ধারণাটিতে চির ধরবে কি না জানি না, তবে সরকারি চাকরি থেকে কোনও না কোনও অপরাধের কারণে কেউ কেউ বরখাস্ত হতে পারেন, তার নির্ঘাত প্রমাণ পাওয়া গেলো, যদি বিভাগীয় তৎপরতা সত্যিকার অর্থে সক্রিয় হয়ে উঠে। বলা হয়েছে, ‘যাঁরা নিজেদের শোধরাননি তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। … মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য-সহিষ্ণু নীতি বাস্তবায়নে নিজেদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।’
পুলিশ সদর দপ্তরের এমন ধরনের তৎপরতা দেশবাসীকে অবশ্যই কীছুটা হলেও আশ্বস্ত করবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাছাড়া পুলিশ প্রশাসনের ভেতরে পরিচালিত এই শুদ্ধি অভিযান মানুষের মধ্যে একটি ইতিবাচক ও সত্যিকার অর্থে আশাব্যঞ্জক পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছে দেবে। কিন্তু সকলেই জানেন, বর্তমান সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষদের একাংশ বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও নৈতিকতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে নিমজ্জিত হয়ে আছেন। নীতিবিগর্হিত উপায়ে সম্পদ আহরণ-দখলসহ দুর্নীতির হাজারটা পর্যায় পেরিয়ে মানুষের ক্ষমতার চর্চা যখন সিংহাসন দখলের রাজনীতিক চর্চা পেরিয়ে যায় এবং সেখান থেকে সমাজের স্তরে স্তরে ধর্ষণ-দলধর্ষণ পেরিয়ে গিয়ে শিশুধর্ষণে প্রমত্ত হয়ে উঠে তখন বুঝতে বাকি থাকে না যে, এই সমাজ কতোটা অধঃপতিত হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ সামাজিক অধঃপতন এতাটাই চূড়ান্ত মাত্রা অর্জন করেছে যে, যার কোনও পরিমাপ হয় না। তাঁর দীর্ঘ তালিকা এখানে পেশ করা জরুরি নয়, কারণ সে-প্রসঙ্গে দেশের মানুষ কমবেশি সকলেই অবগত আছেন। এমতাবস্থায় দেশের বিদগ্ধজনেরা মনে করেন, পুলিশ সদর দপ্তর যে-ভাবে শুদ্ধি অভিযান বাস্তবায়ন করছেন তেমনি করে সমাজের প্রতিটি স্তরে শুদ্ধি অভিযান চালানো উচিত কেবল নয়, বর্তমান দুর্নীতিগ্রস্ত সামাজিক-রাজনীতিক-আর্থনীতিক অবস্থা থেকে উত্তরণ লাভের জন্যে এই শুদ্ধি কার্যক্রম বাস্তবিকপক্ষেই একটি অপরিহার্য জাতীয় কর্তব্যে পর্যবশিত হয়েছে।