জয়ন্ত সেন ::
শাল্লায় নানা অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগী নির্বাচনের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তারা অভিযোগ করে বলেছেন, তালিকায় অনেক সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার নাম থাকলেও বাদ পড়েছে প্রকৃত অসচ্ছল অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা।
উপজেলার দাউদপুর গ্রামের অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা লালমোহন দাস। তাঁর নামও নেই তালিকায়। লাল মোহন দাস বলেন, দুই মাস ধরে আমার ভাতা বন্ধ। রিকসা চালাতেও এখন কষ্ট হয়। এখন ছাতক যাব কাজের জন্য। আমাকে ঘর দিবে বলেছিল মুক্তিযোদ্ধা বলরাম দাস। পরে সমাজসেবা অফিসের পাহারাদার নৃপেন্দ্র মালাকার আমার কাছে পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করে। আমি দিতে পারিনি বলে ঘরের তালিকায় নাম নেই। তবে উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিরাপত্তা প্রহরী নৃপেন্দ্র মালাকার টাকা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, উজানগাঁও গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিরমোহন দাস অসচ্ছল, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা জিতেন্দ্র দাসের পরিবারও অসচ্ছল। অথচ তাদের নাম নেই তালিকায়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবধন দাস বলেন, রূপসা গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রাখেশ সরকারের পরিবারও দরিদ্র, প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা অমরচাঁদ দাসের পরিবারও দরিদ্র। তারা ঘর পাওয়ার আওতায় পড়ে। কিন্তু তাদের নাম নেই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবল চন্দ্র দাস বলেন, নিয়ামতপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মদন দাস দরিদ্র। অথচ তালিকায় নাম আছে সচ্ছল অনেকের। এ ধরনের স্বজনপ্রীতি মেনে নেওয়া যায় না।
নিয়ামতপুর গ্রামের বাসিন্দা সুমন চৌধুরী ও সমীরণ সরকার বলেন, ঘর মদন দাসেরই প্রাপ্য। এটা সারা গ্রামবাসী সমর্থন করবে বলেও তারা জানান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা জগদীশ চন্দ্র সরকার বলেন, অনেক সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকায় স্থান পেলেও, অনেক অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকায় নেই।
আনন্দপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আখমত আলী বলেন, আমি গরিব। অথচ তালিকায় আমার নাম নাই।
ঘুঙ্গিয়ারগাঁও গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সন্তান বিপলু সরকার বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি ঘর দিতে হলে আমাকে প্রথম নির্বাচন করতে হবে। অথচ আমার প্রয়াত বাবার নাম নাই। এটা দুঃখের বিষয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়কুুুুমার বৈষ্ণব বলেন, ভেড়াডহর গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা বিপীন বৈষ্ণব, মুক্তিযোদ্ধা মতিলাল বৈষ্ণব প্রকৃত অসচ্ছল। কিন্তু অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অনেক সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের নামে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ফলে অনেক দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সরকারি ঘর পাওয়া থেকে বঞ্চিত। আমরা এই তালিকার পরিবর্তন চাই।
সমাজসেবা দপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা বিশ্বপতি চক্রবর্তী বলেন আমরা যাচাই বাছাই করেই তালিকা প্রস্তুত করেছি। এবিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মুক্তাদির হোসেন বলেন, কারও অভিযোগ থাকলে জেলা প্রশাসক বরাবরে আপিল করতে পারেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এ নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। সংশোধনের সুযোগ আছে বলে তিনি জানান।