বিশেষ প্রতিনিধি ::
আইনি জটিলতা, ভারতের পরিবেশ আদালতে মামলা এবং করোনা দুর্যোগসহ নানা কারণে বন্ধ থাকা তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া শুল্কস্টেশন দিয়ে ফের কয়লা আমদানি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভারত থেকে বড়ছড়া শুল্কস্টেশন দিয়ে ৫টি ট্রাক প্রবেশ করে বাংলাদেশে। এদিকে আবারও কয়লা আমদানি শুরু হওয়ায় বাগলি, চারাগাঁও ও বড়ছড়ার তিনটি শুল্কস্টেশনে কর্মরত কয়েক হাজার শ্রমিকের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। তাঁরা আগের মতো টানা আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার দাবি জানিয়েছেন। তারা শ্রমবন্ধ করোনাকালে আমদানি শুরু হওয়ায় চোখে আশার আলো দেখছেন।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালে বড়ছড়া, চারাগাঁও, বাগলী শুল্কস্টেশন দিয়ে ভারত থেকে কয়লা আমদানি শুরু হয়। বড়ছড়া শুল্কস্টেশন দিয়ে প্রথমে কয়লা আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়, পরবর্তীতে বাগলি ও চারাগাঁও দিয়ে আমদানি চলে এবং তিনটি স্টেশন দিয়ে বিভিন্ন সময়ে চুনাপাথরও আমদানি শুরু হয়। অনুন্নত এলাকায় কয়লা আমদানি শুরু হওয়ায় বিরাট আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন ঘটে। কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় ৩০ হাজার শ্রমিকের। স্থানীয়দেরও জীবনমানের উন্নয়ন ঘটে। এভাবে কয়েক বছর টানা আমদানি হয় কয়লা ও চুনাপাথর। তবে ২০০০ সনের পর ভারতের মেঘালয়ের আদিবাসী সমাজ অপরিকল্পিতভাবে কয়লা খনন ও ভারতের ইউরোনিয়াম খনি খননের নামে পাহাড় খননের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের ফলে ভারতীয় আদালতে পরিবেশ বিপর্যয়ের মামলা হয়। মামলায় আদিবাসীদের পক্ষে রায় দেয় আদালত। ফলে বন্ধ হয়ে যায় কয়লা ও চুনাপাথর আমদানি। বিপাকে পড়েন তিনটি শুল্কস্টেশনের প্রায় ৮ শতাধিক আমদানিকারক ও প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক।
মেঘালয়ে অপরিকল্পিতভাবে কয়লা ও চুনাপাথর উত্তোলন ও রপ্তানির কারণে এই এলাকার পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে এই অভিযোগে সেখানকার পরিবেশবাদী সংগঠন এনজিপি (ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল) এই অভিযোগ করেছিল। ২০১৪ সালের ১৯ এপ্রিল ভারতীয় আদালতে পরিবেশ বিপর্যয়ের মামলার প্রেক্ষিতে মেঘালয় রাজ্যে কয়লা ও চুনাপাথর রপ্তানির প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এভাবে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে এরপর থেকেই নিয়মিত কয়লা ও চুনা পাথর আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে শর্ত দিয়ে কয়েক মাসের জন্য আমদানি খুললেও আর স্টেশনগুলো আগের মতো মুখর নেই। আদালত মেঘালয় সরকারকে পরিবেশ বিপর্যয় ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিল। ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় আদালত বিভিন্ন সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে কয়লা রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এভাবে গত এক দশক ধরে অনিয়মিত আমদানি হচ্ছে কয়লা ও চুনাপাথর। ফলে এই স্টেশনগুলোর আমদানিকারকরা ইন্দোনেশিয়া বা অন্যান্য দেশ থেকে কয়লা আমদানির দিকে ঝুঁকে পড়েন। এতে স্থবির হয়ে পড়ে স্টেশনগুলো। হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন।
এদিকে ভারতীয় কয়লায় সালফার জটিলতার কারণেও ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার কিছুদিন কয়লা আমদানি স্থগিত করে দিয়েছিল। ভারতীয় কয়লায় এক ভাগের বেশি সালফার থাকায় বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিবাদের কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০১০ সনের জুন মাসে আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। পরবর্তীতে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল। এভাবে বারবার নিষেধাজ্ঞার ফলে ক্ষতির মুখে পড়েন আমদানিকারকরা।
তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপ সমিতির সভাপতি আলকাছ উদ্দিন খন্দকার বলেন, নানা জটিলতার পাশাপাশি করোনার কারণেও আমাদের স্টেশনগুলো বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার আবার অল্প চুনাপাথর ও কয়লা আমদানি শুরু হয়েছে। রপ্তানিকারকরা যদি নিয়মিত আমাদের চাহিদা পূরণ করে পণ্য পাঠাতে পারেন তবে রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি স্টেশনগুলোতে আবারও মুখরতা আসবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শ্রমিকরাও উপকৃত হবেন।
বড়ছড়া কাস্টম অফিসার সুদীপ্ত শেখর দাস বলেন, গত এক দশক ধরে সুনামগঞ্জের তিনটি শুল্কস্টেশন দিয়ে অনিয়মিত আমদানি হচ্ছে। এতে রাজস্ব কমে গেছে। তাছাড়া বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা। ব্যবসায়ীরাও বিরাট ক্ষতির মুখে। এখন বৃহস্পতিবার থেকে আবারও অল্প পরিমাণে কয়লা আমদানি শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, আমদানিকৃত এই কয়লার এলসি পুরনো। তবে নতুন করে আমদানি কার্যক্রম শুরু হলে আবারও এই এলাকা আগের অবস্থায় পৌঁছবে।