বিশেষ প্রতিনিধি ::
করোনা মহামারী দেখা দেওয়ার পর কর্মহীন অসহায় মানুষের পাশে সমাজের নানা শ্রেণির মানুষ যখন নিজ নিজ সাধ্য মাফিক দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন, সেই মহাদুর্যোগের সময়টাতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ‘জনগণের খেদমত করার’ ব্যাকুল আগ্রহ নিয়ে নির্বাচনের আগে নাজিল হওয়া ‘সম্ভাব্য প্রার্থীরা’ অনেকটাই গায়েব।
বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জেলার পাঁচটি আসনের আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি’র টিকেট নিয়ে এমপি নির্বাচিত হওয়ার জন্য এমন ‘সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীর’ সংখ্যা ছিল প্রায় ডজন খানেক। তাদের বেশিরভাগই ছিলেন ‘মালদার প্রবাসী’।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও ‘জনগণের খেতমত করার নেশা’ বাদ নিতে না পারায় নাকি সংসদে গিয়ে সাধারণ মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চেয়েছিলেন তারা। বিগত তিনটি নির্বাচনে ব্যাপক চেষ্টা-তদবিরের পরও কারোরই ভাগ্যে জুটেনি নৌকা কিংবা ধানের শীষ খচিত নির্বাচনী টিকেট।
করোনা মহামারীকালে কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছিল, দুর্যোগকালে তাদের কারোরই তৎপরতা তেমনটা দেখা যায়নি, যেমনটা দেখা যায় নির্বাচনের প্রাক্কালে। করোনা দুর্যোগকালে মানুষের পাশে না দাঁড়ানোর ফলে ‘বসন্তের কোকিল’ খেতাব পাওয়া সেইসব নেতা এবং তাদের প্রশ্রয়দাতারা সমালোচিত হয়েছেন নিজ নিজ এলাকায়।
জানা যায়, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে জেলার পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি টিকেট নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে আবির্ভূত হন প্রায় এক ডজন ‘মালদার আদমি’, যাদের বেশিরভাগ প্রবাসী, আর দু একজন থাকেন রাজধানী ঢাকায়। মোটা অংকের টাকা ব্যয় করে বর্ণাঢ্য প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে তাদের অনেকই চলে আসেন নির্বাচনী আলোচনায়। গরীব-অসহায়দের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, সমাজিক কর্মকাণ্ডে তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ফলে মূলধারার প্রার্থীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দেখা দেন তারা। পরবর্তীতে টিকেট হাসিলে ব্যর্থ হয়ে ‘গো ব্যাক হোম’ হওয়ার পর থেকে স্থানীয় রাজনীতি ও সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড থেকে অকেটাই গায়েব তারা। বিগত নির্বাচনে অদৃশ্য কারণে ‘সম্ভাব্য প্রার্থী’ হননি তাদের কেউ।
সূত্রমতে, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর) আসনে বিএনপির হয়ে দুইজন যুক্তরাজ্য প্রবাসী, আওয়ামী লীগের হয়ে একজন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ও একজন ঢাকার বাসিন্দা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে তৎপর ছিলেন। সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই, শাল্লা) আসনে এই সংখ্যা ছিল আওয়ামী লীগে দুই ও বিএনপিতে একজন। একইভাবে সুনামগঞ্জ-৩ (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জগন্নাথপুর) আসনে আওয়ামী লীগের একজন ও বিএনপির দুইজন সম্ভাব্য প্রার্থী সরগরম করে রেখেছিলেন ভোটের মাঠ। সুনামগঞ্জ-৪ (সদর, বিশ্বম্ভরপুর) আসনে আওয়ামী লীগে ‘মালদার’ সম্ভাব্য প্রার্থী না থাকলেও বিএনপিতে ছিলেন একজন। সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক, দোয়ারাবাজার) আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে একজন করে ছিল ‘মালদার’ সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা।
সূত্রমতে, করোনা মহামারীকালে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা যখন কর্মহীন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন, তখন মানুষের খেদমত করার খায়েসে এমপি হওয়ার প্রতিযোগিতায় এক সময়ের তৎপর ‘সম্ভাব্য প্রার্থীদের’ দেখা পাচ্ছেন না নিজ নিজ এলাকার মানুষ। পর্যাপ্ত টাকা-পয়সা থাকার পরও দুর্যোগকালে মানুষের না দাঁড়ানোয় ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছেন তারা।