গত সোমবার (১৭ আগস্ট ২০২০) রাত আড়াইটায় মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান ইন্তেকাল করেছেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনীতিক সহযোগী ছিলেন। কভিড-১৯-য়ে আক্রান্ত হয়ে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। করোনাসংক্রমণের পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশের বয়োবৃদ্ধ মানুষজন যাঁরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁদের ক্ষেত্রে এরকম মৃত্যুসংবাদ প্রায়ই শুনতে হচ্ছে। আক্রান্ত প্রবীণদের খুব কম সংখ্যক মানুষ করোনাকে পরাস্ত করে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হচ্ছেন, তাও সমাজে নিজের সবল অবস্থার কারণে বিভিন্ন চিকিৎসা সুবিধা প্রাপ্তিতে সুবিধা পাচ্ছেন তাঁদের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে। এই কারণে বর্তমান করোনাবিপর্যয়কালে দেশের ভেতরে প্রবীণমানুষের সংখ্যা ব্যাপকাকারে না হলেও কমে যাচ্ছে বলে অনেকের ধারণা এবং এইরূপ ধারণা বোধ করি একেবারে অমূলকও নয়। এই অবস্থা চলতে দেওয়া কোনও বিবেচনায়ই ঠিক নয়।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণায় অবশ্য বৃদ্ধদেরকে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু দেশের ভেতরে এমন সব বৃদ্ধরা আছেন, যাঁদেরকে নিজেদের বেঁচে থাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী যোগানোর জন্যে প্রতিনিয়ত বাইরে যেতেই হচ্ছে এবং করোনাসংক্রমণের আশঙ্কা তাঁদের থেকে যাচ্ছে শতভাগ। এমন ধরনের বৃদ্ধদের জীবনরক্ষা করা অবশ্যই একটি জাতীয় কর্তব্য এবং কোনও যুক্তিতেই উপেক্ষণীয় নয়। সরকারি সাবধানতা উচ্চারণের পরে কার্যত তাঁদেরকে রক্ষা করার আর কোনও বিশেষ ব্যবস্থা-কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় নি। যা করা একান্ত প্রয়োজন ছিল এবং বিদগ্ধ মহলের ধারণা এখনও আছে। বিভিন্ন দেশে করোনার আক্রমণ হতে বৃদ্ধদেরকে রক্ষা করার জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা গেছে। কিন্তু আমাদের দেশে এরূপ কোনও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি সাধারণভাবে যে-সব প্রতিরোধ তোলার দরকার ছিল; সেগুলোর ব্যবস্থা সরকার করেছেন ঠিকই কিন্তু এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ সেগুলোকে কার্যকর হতে দেয়নি। যার ফলে দেশে করোনাসংক্রমণের মাত্রা অচিরেই মহামারির আকার নেয় এবং একদিকে দেশে মানুষের জীবন সর্বোচ্চ মাত্রায় অনিরাপদ হয়ে উঠে, অন্যদিকে অর্থনীতিকে বলতে গেলে পঙ্গু করে দেয়। পরিসংখ্যান নিলে হয় তো দেখা যাবে যে, বর্তমানে করোনাসংক্রমণে আক্রান্তদের মধ্যে বয়োবৃদ্ধদের মৃত্যুর হার সমাজে তাঁদের সংখ্যার তুলনায় সর্বোচ্চ। অপেক্ষাকৃত কম বয়েসীরা তাঁদের স্বাভাবিক শারীরিক শক্তির জোরে কভিড-১৯-য়ের সংহারপ্রবণতাকে প্রতিহত করতে পারেন বেশি সংখ্যায় কিন্তু বয়সজনিত শারীরিক দৌর্বল্যের কারণে বৃদ্ধরা পারেন কম।
বিদগ্ধ মহলের ধারণা, বৃদ্ধদের রক্ষায় সরকারকে বিদ্যমান করোনাসংক্রমণের পরিস্থিতে এমন একটা কীছু করা দরকার যে-কর্মসূচির ভিত্তিতে দেশের প্রবীণ মানুষদের জীবনের নিরাপত্তা আরও কীছুটা বৃদ্ধি পায়, যাতে বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর সহকর্মী প্রবীণ রাজনীতিবিদ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের মতো প্রাজ্ঞ প্রবীণরা করোনায় মৃত্যুবরণ না করেন। পরিশেষে কথা একটাই, খুনি করোনার নির্মম আক্রমণ থেকে মানুষকে রক্ষা করুন, বৃদ্ধদেরকে রক্ষা করুন।